সর্বশেষ আপডেট : ৪ ঘন্টা আগে
বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

ভাঙা সাইকেলে ১৫ কি:মি: পাড়ি দিয়ে সংসার চালান ১৪ বছরের তোফাজ্জল

কমলগঞ্জ সংবাদদাতা ::

মাত্র ১৪ বছর বয়স, অথচ সংসারের একমাত্র ভরসা সে-ই। ভাঙাচোরা একটি বাইসাইকেলে প্রতিদিন ১৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে দুর্গম খাসিয়া পল্লীতে কাজ করতে যায় তোফাজ্জল হোসেন। দিনশেষে রোজগার হয় দুই-আড়াইশো টাকা। এই সামান্য আয়েই চলে তার পুরো পরিবার—যেখানে বৃদ্ধ দাদী, হৃদরোগী বাবা এবং মানসিক ভারসাম্যহীন বড় বোনের দেখাশোনার দায়িত্বও তার কাঁধে।

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দী গ্রামের আলী আহমেদ (৬৫) এর ছেলে তোফাজ্জল হোসেন। প্রতিদিন ভোরে উঠে নিজের পুরনো সাইকেল নিয়ে কাজে যায় খাসিয়া পুঞ্জিতে। সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে ক্লান্ত শরীরে সামলাতে হয় অসুস্থ স্বজনদের।

তোফাজ্জল বলেন, “প্রতিদিন সকালে সাইকেল চালিয়ে কাজের জন্য খাসিয়া পল্লীতে যাই। সন্ধ্যায় ফিরি। যা আয় হয়, তা দিয়ে দু’বেলা খাওয়াও জোটে না। আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কেউ নাই।”

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ছোট্ট ঘরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তোফাজ্জলের পরিবার। জীর্ণ কাঁথার ওপর শুয়ে আছেন ৮২ বছরের দাদী সমিতা বিবি। শারীরিক দুর্বলতা ও অপুষ্টিতে কাতর এই বৃদ্ধা বলেন, “ঈদের দিন ডালভাত খেয়েছি। ক্ষিদের জ্বালায় ঘুম আসে না। নাতি যা পারে করছে। আল্লাহর শুকরিয়া করি।”

বাবা আলী আহমেদ হার্টের রোগী হওয়ায় কোনো কাজ করতে পারেন না। মানসিক প্রতিবন্ধী বড় বোন আয়েশা খাতুন (২৫) সারাদিন ঘরের এক কোণে বসে থাকেন। পরিবারটি একপ্রকার অনাহারে-অর্ধাহারে জীবন কাটাচ্ছে।

প্রতিবেশীরা জানান, মাঝে মধ্যে কেউ কিছু সহযোগিতা করে। ফজল মিয়া ও আবু শহীদ বলেন, “তারা সত্যিই খুব অসহায়। যতটুকু পারি, সাহায্য করি।”

ইসলামপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ফারুক আহমেদ জানান, “তোফাজ্জলের পরিবারকে কয়েক বছর আগে সরকারি আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তাদের অবস্থা আরও করুণ। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে কিছু মানুষ খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সহায়তা করছেন। তবে বয়োবৃদ্ধ দাদী ও মানসিক প্রতিবন্ধী বোনের সুচিকিৎসা এবং তোফাজ্জলদের স্বনির্ভর হওয়ার জন্য সরকারিভাবে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”

এই পরিবারটির জীবন যেন টিকে আছে শুধুই সহানুভূতির দয়া ও একটি সাহসী কিশোরের অদম্য ইচ্ছাশক্তির উপর। সমাজ ও রাষ্ট্রের সমবেদনা ও সহযোগিতা তাদের জীবনে নতুন আশার আলো আনতে পারে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম
নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
মোবাইল: ০১৭১২ ৮৮৬ ৫০৩
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: