সর্বশেষ আপডেট : ১১ ঘন্টা আগে
বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

ট্রাম্পের এবারের রাজত্বে মেলানিয়ার দেখা মিলছে না কেন

ডেইলি সিলেট ডেস্ক ::

হোয়াইট হাউসের যে অংশটি দীর্ঘকাল ধরে ফার্স্ট লেডিদের আবাস হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে, সেটি বর্তমানে বেশিরভাগ সময় আঁধারেই ডুবে থাকছে। কারণ স্বামী ডোনাল্ড ট্রাম্প তিন মাস আগে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া হোয়াইট হাউসে ১৪ দিনও থাকেননি। এবার ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার লোকচক্ষুর অন্তরালেই থাকছেন মেলানিয়া।

মেলানিয়ার অন্তরালে থাকার কারণ জানতে নিউ ইয়র্ক টাইমস ইস্ট উইং এবং ওয়েস্ট উইংয়ের কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ করেও এবিষেয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও বক্তব্য পায়নি।

তবে ফার্স্ট লেডিদের নিয়ে গবেষণা করা যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও ইউনিভার্সিটির ইতিহাসবিদ ক্যাথরিন জেলিসন বলেন, ‘বেস ট্রুম্যানের পর আমরা এত কম প্রোফাইলের ফার্স্ট লেডি আর দেখিনি। মিসেস ট্রাম্পের মতো মিসেস ট্রুম্যানও সুযোগ পেলেই তার নিজের জায়গায় ফিরে যেতেন।’

তিনি বলেন, ‘বেস ট্রুম্যান সেখানেই স্বাধীন বোধ করতেন। তাই তিনি তার নিজের ব্যক্তিগত জগতই পছন্দ করতেন।

মেলানিয়া এর আগে এক মেয়াদে ফার্স্ট লেডি হলেও এবারের সঙ্গে সেবারের ফারাকটা সবার চোখে বড় বেশি ধরা পড়ছে। তিনি হোয়াইট হাইসের ইস্ট উইংয়ে নিজের কাজ করার জন্য কর্মী নিয়োগ করেছেন, তবে তিনি খুব কমই অফিসে যান। এমনকি মার-এ-লাগোতে যাদের নিয়মিত যাতায়াত, তারাও বলছেন যে তারা প্রায়ই মেলানিয়াকে আশেপাশে দেখেন না।

প্রতিটি দাম্পত্য জীবনে উত্থান-পতন থাকে, এমন অনেক কিছু নিয়েই ট্রাম্প দম্পতি তাদের নিজেদের জগতে রয়েছেন। গত বছর মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে এই দম্পতিকে পরকীয়ার বিচার, দুটি হত্যাচেষ্টা এবং একটি নির্বাচন নিয়ে জনসমক্ষে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছে।

পর্ন তারকার সঙ্গে সম্পর্ক গোপন রাখার জন্য ঘুষ দেওয়ার মামলার বিচার তাদের দাম্পত্যে কঠিন মুহূর্ত তৈরি করেছিল বলে জানান এই বিষয়ে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল দু’জন। মেলানিয়া তখন ম্যানহাটনের আদালত এবং পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে স্বামীর নির্বাচনী প্রচার থেকে নিজেকে ‍গুটিয়ে রেখেছিলেন।
ওই দুই ব্যক্তি আরও বলেন, গত গ্রীষ্মে ট্রাম্পকে যখন গুলি ছোড়া হয়েছিল এবং তারপর তার সভাস্থলের কাছ থেকে অস্ত্রধারী একজনকে ধরা হয়েছিল, তখন মেলানিয়া পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।

২০১৭ সালে ট্রাম্প যখন প্রথমবার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন মেলানিয়া শোভাযাত্রায় হাঁটার জন্য গাড়ি থেকে নামতেও শঙ্কিত ছিলেন।

এইবার হোয়াইট হাউসে ফিরে ট্রাম্প এমন কিছু দায়িত্ব পালন করছেন, যা সাধারণত ফার্স্ট লেডির ওপরই বর্তায়। হোয়াইট হাউসে কোথায় কেমন আলো থাকবে, তা মেলানিয়া ঠিক করছেন না; রোজ গার্ডেনের নকশা পুনর্বিন্যাস করছেন না; ইস্ট উইংয়ে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন না; প্রথাগত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজনও করছেন না। সব ট্রাম্পই করছেন এখন।

তাদের স্বামী ও স্ত্রী হিসাবে যাত্রার সোনালি এসকেলেটর জাতীয় রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করার পর এক দশক কেটে গেছে। এখন ট্রাম্প এমন এক সময়ে উপনীত, যখন তিনি আগের চেয়ে বেশি ক্ষমতাবার, আরও আত্মবিশ্বাসী; তিনি যখন প্রসারিত হচ্ছেন, তখন ক্রমেই সঙ্কুচিত হচ্ছেন মেলানিয়া।

এই দম্পতির একটি জায়গায় দৃষ্টিভঙ্গীর ভীষণ মিল রয়েছে। তারা দুজনই জানেন, কীভাবে টাকা কামাই করতে হয়। গত জানুয়ারিতে মেলানিয়া তার নিজস্ব ক্রিপ্টোকারেন্সি টোকেন চালু করেন। তার স্বামীর দ্বিতীয়বার ক্ষমতা গ্রহণের আগের দিন তিনি সোশাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন, ‘আপনি এখন $MELANIA কিনতে পারেন।’

এবং তারপর অ্যামাজনের সঙ্গে তার ৪ কোটি ডলারের একটি চুক্তির একটি খবরও প্রকাশ পায়। বলা হচ্ছে, ফার্স্ট লেডি হিসাবে তার জীবনের অন্তরালের কথা একটি প্রামাণ্য চিত্রে স্থান পাবে।

মেলানিয়া ট্রাম্প গতবার হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করার জন্য কয়েক মাস অপেক্ষা করেছিলেন। তবে তার কারণ ছিল তার ছেলে ব্যারন ট্রাম্প। ব্যারন তখন ১০ বছর বয়সী ছিল। তাকে আগের স্কুল থেকে নতুন শহরে স্কুলে স্থানান্তরে ব্যবস্থা করার জন্য এই সময় নিতে হয়েছিল মেলানিয়াকে।

তখন মেলানিয়াকে হোয়াইট হাউসে তার ভূমিকার জন্যও প্রস্তুত হতে হয়েছিল। তার বাবা-মা দুজনই তখন বেঁচেছিলেন। তার মা আমালিয়া কনাভস গত বছরের জানুয়ারিতে মারা যান। ফলে তাকে তার বাবা ভিক্টরকে সময় দিতে হয়।

ব্যারন ট্রাম্পের বয়স এখন ১৯ বছর। তিনি নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে তার প্রথম বর্ষ শেষ করছেন এবং ক্রমশ স্বনির্ভর হচ্ছেন। তবুও তাকে নিয়ে মেলানিয়ার মাতৃসুলভ আচরণ কমেনি বলেই তার আশপাশের মানুষরা বলে থাকেন।

গত জানুয়ারিতে ফক্স নিউজকে দেওয়া একটি বিরল সাক্ষাৎকারে মেলানিয়া বলেছিলেন, “সন্তান হিসাবে তারা ১৮/১৯ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত আমাদের থাকে। আমরা তাদের শেখাই। আমরা তাদের পথ দেখাই এবং তারপর আমরা তাদের উড়তে ডানা দিই।”

তাকে তখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তিনি এই মেয়াদে তার বেশিরভাগ সময় কোথায় কাটানোর পরিকল্পনা করেছেন। উত্তরে মেলানিয়া বলেছিলেন, ‘আমি হোয়াইট হাউসে থাকব।’

সেই সঙ্গে তিনি যোগ করেছিলেন, ‘যখন আমার নিউ ইয়র্কে থাকার প্রয়োজন হবে, তখন আমি নিউ ইয়র্কে থাকব। যখন আমার পাম বিচে থাকার প্রয়োজন হবে, তখন আমি পাম বিচে থাকব। তবে আমার প্রথম অগ্রাধিকার হল, আপনি জানেন, একজন মা হওয়া, একজন ফার্স্ট লেডি হওয়া, একজন স্ত্রী হওয়া।’

ট্রাম্প ক্ষমতা নেয়ার পর গত ১ এপ্রিল পররাষ্ট্র দপ্তরে সাহসী নারীদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিয়েছিলেন মেলানিয়া। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেটাই ছিল ওয়াশিংটনে তার প্রথম দর্শন দেয়া।

যেকোনো ক্ষেত্রে মেলানিয়া ট্রাম্পের উপস্থিতি যেমন একটি আকর্ষণীয় দৃশ্য তৈরি করতে পারে, তার অনুপস্থিতিও তেমনি পারে। ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার পর প্রথম ট্যুর গ্রুপটি যখন ইস্ট উইংয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, তখন তাদের অবাক করে ট্রাম্পই হাজির হয়েছিলেন। ‘ফার্স্ট লেডি এটিকে নিখুঁত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন,’ বলেছিলেন তিনি, তবে তার স্ত্রীকে সেখানে দেখা যায়নি।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মেলানিয়া রোজ গার্ডেন গাছ লাগিয়েছিলেন, সৌন্দর্য বাড়িয়েছিলেন। এবার ট্রাম্প যখন স্থানটি পাকা করে সেখানে খোলা আকাশের নিচে অতিথিদের আপ্যায়নের পরিকল্পনা করেন, তখন মেলানিয়া বিরক্ত হয়েছিলেন বলে জানান এই বিষয় সংশ্লিষ্ট দুজন ব্যক্তি। তারা বলেন, পরে অবশ্য ফার্স্ট লেডিকে এই বলে আশ্বস্ত করা হয় যে গোলাপের ঝোঁপগুলো অক্ষত থাকবে।

ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে যে বলরুমটি তৈরি করতে চাইছিলেন, তাও তিনি মেনে নিয়েছিলেন এটা বলার যে এটি মূল বাসভবনের খুব কাছে হবে না।

দীর্ঘদিন ধরে মেলানিয়াকে চেনেন এমন একজন হলেন ইতালীয় মডেলিং এজেন্ট পাওলো জাম্পোলি। তিনি ১৯৯০-এর দশকে মিলানে প্রথম মেলানিয়াকে দেখেছিলেন। জাম্পোলিই ১৯৯৮ সালে ম্যানহাটনের কিট ক্যাট ক্লাবে ট্রাম্পের সঙ্গে মেলানিয়ার প্রথম পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি মেলানিয়াকে শ্রদ্ধাভরে বলে থাকেন- ‘দ্য লেডি’। জাম্মোলির মতে, ওয়াশিংটনে মেলানিয়ার অনুপস্থিতি নিয়ে খুঁতখুঁতানি অনাবশ্যক।

তিনি বলেন, ‘তিনি হোয়াইট হাউসকে ভালোবাসেন এবং আমাদের ফার্স্ট লেডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে ভালোবাসেন।’

পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে ভ্যাটিকান সিটিতে স্বামীর সহযাত্রী হলেও ট্রাম্পের সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে নেই ফার্স্ট লেডি। রোম থেকে যেদিন তারা নিউ ইয়ার্কে ফিরে আসেন, সেদিন ছিল মেলানিয়ার ৫৫তম জন্মদিন। প্রেসিডেন্ট সেদিন ফার্স্ট লেডির গালে একটি চুমু এঁকেছিলেন। এরপর মেলানিয়া একটি গাড়িতে উঠে যান। ট্রাম্প উঠে যান একটি হেলিকপ্টারে। দুজন চলে যান আলাদা পথে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

এ বিভাগের অন্যান্য খবর

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম
নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
মোবাইল: ০১৭১২ ৮৮৬ ৫০৩
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: