সর্বশেষ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

রামগতিতে পানিবন্দি ৫০ হাজার পরিবার, অবৈধ বাঁধ অপসারণ চান স্থানীয়রা

ডেইলি সিলেট ডেস্ক ::

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতি উপজেলার পূর্বাঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ভুলুয়া নদী। এ নদীটি নোয়াখালীতেও রয়েছে বিস্তৃতি। তবে একসময় তীব্র স্রোতের নদীটি অবৈধ বাঁধ, দখল ও দূষণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে নদীটির অধিকাংশ এলাকা শুকিয়ে যায়। বর্ষায় নদীর পানি উপচে পড়ে আশপাশের এলাকা প্লাবিত করে। নদীতে প্রবাহ না থাকায় এ পানি সরতে পারে না। যে কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয় কয়েক লাখ মানুষকে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ২ মাস ধরে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রায় ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন। এ সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে ভুলুয়া নদী খনন এবং অবৈধ বাঁধ অপসারণ।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভুলুয়া নদীতে তেমন পানি ছিল না। প্রায় ৫০ দিন আগে বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি টানা ২০ দিন ছিল। বৃষ্টির কারণে নদীটি পানিতে টইটম্বুর হয়ে যায়। অবৈধ বাঁধের কারণে নদীতে পানি প্রবাহ নেই। পানি উপচে পড়ে আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়। ফলে রামগতি-কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা, চরবাদাম ও চরপোড়াগাছা ইউনিয়নসহ নোয়াখালীর আন্ডারচর ও চরমটুয়া ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েন। এসব এলাকার কোথাও কোমর ও কোথাও বুক পরিমাণ পানিতে ডুবে ছিল। পরে নোয়াখালীর বন্যার পানিও যুক্ত হয়েছে। গত ২ মাস হতে চললেও এখনো অধকাংশ বাড়ি থেকে পানি নামেনি। এর প্রধান কারণ ভুলুয়ায় শত শত অবৈধ বাঁধ ও নদীর গভীরতা না থাকা। ভুলুয়া নদীকে খননসহ অবৈধ বাঁধগুলো অপসারণ করতে হবে। নদীতে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে পারলেই এ জনপদের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব হবে।

চরকাদিরা গ্রামের কৃষক ফয়েজ উল্লাহ বলেন, এমন পানি আর দেখিনি। ভুলুয়া নদীর কারণেই আমাদেরকে পানিবন্দি হয়ে থাকতে হচ্ছে। এ নদীটিতে অবৈধ বাঁধ না থাকলে পানি আরও আগে শুকিয়ে যেতো। আমাদের দুর্ভোগে পড়তে হতো না।

গত বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) মানবসৃষ্ট বন্যা রোধে ভুলুয়া নদীসহ লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর সব খাল থেকে অবৈধ বাঁধ অপসারণ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুস সাত্তার পালোয়ান হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট আবেদন করেন। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর ভুলুয়া নদীসহ সব খাল দখলে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। ভুলুয়া নদীতে অবৈধ দখলের ঘটনা তদন্ত ও অবৈধ বাঁধ অপসারণে সময় বেঁধে আদেশ দেয়া হয়। আদেশ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অবৈধ দখলের ঘটনায় তদন্ত শুরু করতে হবে। তদন্তপূর্বক ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে দখল উচ্ছেদ করে ভুলুয়া নদীর পানি প্রবাহ নিশ্চিত করে হাইকোর্টকে প্রতিবেদন দিতে লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী আবদুস সাত্তার পালোয়ান বলেন, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলা ৫০ দিন ধরে জলাবদ্ধতার শিকার। সবাই বন্যা বললেও আমরা বলবো এটি জলাবদ্ধতা। কারণ এখানে কোনো বানের পানি আসেনি। দীর্ঘদিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ভুলুয়া নদীতে অবৈধ বাঁধ দেওয়ার কারণে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ভুলুয়া নদীটি লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে। এ নদী হয়ে পানি মেঘনা নদীতে মেশে। নদীটির এখন মূল সমস্যা হচ্ছে অবৈধ দখল। দখলদারদের হাত থেকে নদীটি মুক্ত করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে আমি উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। উচ্চ আদালত ভুলুয়া নদী থেকে অবৈধ বাঁধ অপসারণে নির্দেশ দিয়েছেন।

এই আইনজীবী বলেন, যতদ্রুত সম্ভব ভুলুয়া নদীকে বড় ধরণের প্রকল্পের মাধ্যমে খননের আওতায় আনতে হবে। এ নদীর আশপাশের খালগুলো দখলমুক্ত করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করলে আর কখনোই জলাবদ্ধতা হবে না।

গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রামগতি উপজেলার আজাদনগর ব্রিজ এলাকায় অবৈধ বাঁধ অপসারণে নদীতে নামে শত শত মানুষ। এরপর তারা চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের কোডেক বাজার এলাকায় বাঁধ অপসারণে কাজ করেন। দা-কোদাল ও সাবল দিয়ে যতটুকু সম্ভব হয়েছে স্বেচ্ছায় ততটুকুই কাজ করেছেন তারা। মাথায় লাল ফিতা বেঁধে একযোগে কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষজন ঐক্যবদ্ধভাবে এ কাজে যোগ দেন।

রামগতি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম আবদুল্লাহ বিন শফিক বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ভুলুয়া নদী রক্ষায় আমরা কার্যক্রম নেমেছি। স্থানীয় জনগণ আমাদেরকে সহযোগিতা করছেন। ভুলুয়া নদী খননে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো। আশা করছি, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ভুলুয়া নদীকে দখলদার মুক্ত করতে পারবো।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: