সর্বশেষ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

ওসমানী বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালান যেন থামছেই না

সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালান যেন থামছেই না। গতকাল শুক্রবারও ১১টি পাতসদৃশ ১শ’ ভরি স্বর্ণের বারসহ ধরা পড়েছেন এক দুবাই প্রবাসী।

আলী আহমদ নামের ওই ব্যক্তি নেব্যুলাইজারের ভেতর ঢুকিয়ে অভিনব পদ্ধতিতে নিয়ে আসছিলেন এই স্বর্ণ।

অন্যদিকে, নতুন ধরা পড়া স্বর্ণসহ গত ৮ বছরে ওসমানী বিমানবন্দরে ১১২ কেজির অধিক স্বর্ণ আটক করেছে কাস্টমস বিভাগ। যার দাম ৭৬ কোটি ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বরাবর স্বর্ণ উদ্ধার হলেও মূল হোতারা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কাস্টমস’র উপ-কমিশনার মো. আল-আমিন বলেন, গ্রীন চ্যানেল অতিক্রমকালে সন্দেহ হলে আমরা আলী আহমদকে চ্যালেঞ্জ করি। পরে তল্লাশি চালিয়ে তার ল্যাগেজ থেকে স্বর্ণগুলো উদ্ধার করা হয়। সুকৌশলে নেব্যুলাইজারের ভেতরে লুকিয়ে চালানটি নিয়ে এসেছিল।

গ্রেফতারকৃত আলী আহমদ সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার উজান মেহেরপুর গ্রামের বাসিন্দা। এঘটনায় কাস্টমস’র পক্ষ থেকে এয়ারপোর্ট থানায় প্রবাসী আলী আহমদকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ ঘটনায় এয়ারপোর্ট থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, স্বর্ণের চালান আমরা আটক করলেও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে পুলিশ। তাই, চোরাচালানের মূল হোতা বা নেপথ্যে নায়কদের চিহ্নিত করার বিষয়টিও তারা ভালো বলতে পারবেন।

এবিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, কাস্টমস স্বর্ণের চোরাচালান আটক করার পর থানায় মামলা করা হয়। এরপর পুলিশ মামলা তদন্ত করে। তদন্তকালে আসামীকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদও করার পাশাপাশি নানাভাবে মূল রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালানো হয়।

আসামী স্বীকারোক্তি দিয়ে বলে সে নিজেই চালানটি নিয়ে এসেছে। এর সাথে অন্য কেউ জড়িত নয়। এরপর আর পুলিশের কিছু করার থাকে না। আসামীর স্বীকারোক্তির প্রেক্ষিতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়ে থাকে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৭ সালের জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত শুক্রবার ওসমানী বিমানবন্দরে ২০ টি স্বর্ণের চালান আটক করে কাস্টমস। এই চার বছরে ২০টি চোরাচালানের ঘটনায় ৭১ দশমিক ৫৬ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। ভরিতে হিসেব করলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ হাজার ১৩৪ ভরি স্বর্ণ। উদ্ধার হওয়া এই স্বর্ণের দাম ৪৯ কোটি টাকারও বেশি। গতকালসহ গেল ৮ বছরের মধ্যে ৪ বছরে উদ্ধার করা হয় দেড় মণ স্বর্ণ। আর বাকি সব স্বর্ণ উদ্ধার করা হয় পূর্ববর্তী তিন বছরে।

এদিকে, এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে এপর্যন্ত ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১১২ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করেছে কাস্টমস। মণ হিসেবে এর ওজন প্রায় আড়াই মণ। আর ভরি হিসেবে ৯ হাজার ৬০১ দশমিক ৭৬ ভরি। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৭৬ কোটি ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকারও বেশি।

এদিকে, এর আগে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর দুবাই থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২৪৮ ফ্লাইটের ৪ যাত্রীর ব্যাগ থেকে ১১ কেজি ২২০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণ উদ্ধার করে কাস্টমস। আটক স্বর্ণের দাম প্রায় ৭ কোটি টাকা। এঘটনায় দুবাই থেকে আসা প্রবাসী শেখ মো. জাহিদ, মকবুল আলী, বশির উদ্দিন ও সুলতান মাহমুদ নামের ৪ প্রবাসীকে গ্রেফতার করা হয়। বিমানের ৪ যাত্রী তাদের সাথে থাকা ব্যাগের ভেতরে আয়রন মেশিন ও জুসার মেশিনে করে স্বর্ণের চালানটি নিয়ে এসেছিলেন।

ওই বছরের ৮ নভেম্বর দুবাই ফেরত যাত্রী নরেন্দ্র নাথের কাছ থেকে ৬ কেজি ১৪৮ গ্রাম ওজনের ৩৮ পিস স্বর্ণের বার উদ্ধার করে কাস্টমস। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের দাম প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। গত ২০২০ সালের ১৮ ডিসেম্বর ওসমানী বিমানবন্দরে দুবাই থেকে আসা জামিল আহমদ (২৮) নামের এক যাত্রীর কাছ থেকে ১৪টি স্বর্ণের বার ও কিছু স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের ওজন প্রায় দুই কেজি। যার দাম প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ১২টি বার বিশেষ ব্যবস্থায় জামিলের উরুতে আটকানো ছিল। জামিলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায়।

২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ওসমানী বিমানবন্দরে আবুধাবী থেকে আসা জাহিদ হোসেন নামের এক যাত্রীর কাছ থেকে ৪ কেজি ৬৪ গ্রাম ওজনের ৪০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া স্বর্ণের দাম প্রায় ২ কোটি টাকা। এরপর জাহিদ হোসেনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে কাস্টমস।

একই বছরের ৩ জানুয়ারি ওসমানী বিমানবন্দরে দুবাইর একটি ফ্লাইটে তল্লাশি চালিয়ে ৬০ পিস স্বর্ণের বার উদ্ধার করে কাস্টমস। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের ওজন প্রায় ৭ কেজি। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের দাম প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ ঘটনায় বাংলাদেশ বিমানের মেকানিক্যাল অ্যাসিসট্যান্ট কারিমুল ইসলামকে আটক করা হয়।
২০১৭ সালের ২৩ জুলাই আবুধাবি থেকে আসা বিমানের ল্যাগেজ হোল্ডে অভিযান চালিয়ে ৩ কেজি ৫০০ গ্রাম ওজনের ৩০ টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে কাস্টমস। বিমানের ওই ফ্লাইটটি সিলেট হয়ে ঢাকায় ফিরছিল। এ চোরাচালানের ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি।

২০১৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর দুবাই থেকে আসা বিমানে তল্লাশি চালিয়ে ১৬ টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে কাস্টমস। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের ওজন ১ কেজি ৮৭২ গ্রাম। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। একই বছরের ১৬ নভেম্বর ওসমানী বিমানবন্দর থেকে ৯ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের ৮০ টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে কাস্টমস।

উদ্ধারকৃত স্বর্ণের দাম প্রায় ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানের আসনের নিচে তল্লাশি চালিয়ে এসব স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। ওই বছরের ১৭ মার্চ ৫৮০ গ্রাম ওজনের ৫ টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায়ও কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। ২৪ এপ্রিল এক লন্ডন প্রবাসীর কাছ থেকে ৪৩২ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার করে কাস্টমস। পরে ব্যাগেজ রুলস মোতাবেক বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে ওসমানী বিমানবন্দর থেকে ১৯ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করে কাস্টমস।

এছাড়াও ১০০ ও ২০০ গ্রাম স্বর্ণ আটক, শুল্কায়ন,ন্যায্য নির্ণয়নের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সুত্র: সিলেটের ডাক

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: