সর্বশেষ আপডেট : ১৪ ঘন্টা আগে
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

প্রস্তুত দেশের সবচেয়ে আধুনিক ও নান্দনিক সিলেটের বাস টার্মিনাল

নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই বছর পর শেষ হতে যাচ্ছে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের নির্মাণ কাজ। ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেলে নির্মিত এই বাস টার্মিনালকে দেশের সবচেয়ে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন বাস টার্মিনাল বলে দাবি করছে কর্তৃপক্ষ। বলা হচ্ছে, আধুনিক ও উন্নতমানের সব সেবাই পাওয়া যাবে এখানে।

এটি এখন উদ্বোধনের অ’পেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে টার্মিনালটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের মধ্যে। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ২০২২ এর জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু এই সময়সীমা’র মধ্যেও শেষ হয়নি কাজ। মহামা’রি করো’না আর ব’ন্যার কারণে কাজ শেষ হতে দেরি হয়েছে বলে দাবি বাস টার্মিনাল নির্মাণকারী সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক)।

সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘জুনেই বাস টার্মিনালের কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু এবার ব’ন্যার কারণে এটি আরও কিছুটা বিলম্বিত হয়। সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল হবে দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক বাস টার্মিনাল। এতে আধুনিক সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকবে। এর নানন্দিক স্থাপত্যশৈলীও সবার নজর কাড়বে।’

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মক’র্তা (অ’তিরিক্ত সচিব) বিধায়ক রায় চৌধুরী বুধবার বলেন, ‘টার্মিনালের কাজ মোটামুটি শেষ। এখন ফিনিশিংয়ের কিছু কাজ হচ্ছে। তবে টার্মিনালটি উদ্বোধনের জন্য এখন প্রস্তুতই বলা চলে।

‘আম’রা চেষ্টা করছি প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে উদ্বোধন করাতে। তার সময় পাওয়া না গেলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী এটি উদ্বোধন করবেন। তবে নভেম্বরের আগে উদ্বোধন সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।’

সিসিক সূত্রে জানা যায়, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে মিউনিসিপ্যাল গভর্নমেন্ট সার্ভিস প্রজেক্ট (এমজিএসপি) প্রকল্পের আওতায় সিসিকের উদ্যোগে এই টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। ৬ তলা ভিত্তির ৩ তলা কমপ্লেক্স প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ডালি কনস্ট্রাকশন।

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী আসাম টাইপ বাড়ি আর আলী আমজদের ঘড়ির স্থাপনার সঙ্গে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয় ঘটিয়ে নির্মিত হয়েছে এই বাস টার্মিনাল। নগরের কদমতলী এলাকায় পুরনো বাস টার্মিনালের স্থানেই ৮ একর জায়গা জুড়ে এই টার্মিনালে ব্যয় প্রায় ৬৩ কোটি টাকা।

এটি দেশের সবচেয়ে আধুনিক বাস টার্মিনাল হবে জানিয়ে সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘চালু হওয়ার পর এ টার্মিনালই হবে দেশের সবচাইতে দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক সুবিধা সংবলিত বাস টার্মিনাল। এখানে যাত্রীদের বিশ্রাম নেয়ার পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক ও অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া প্রত্যেক রুট অনুযায়ী থাকবে আলাদা বাস পার্কিং জোন, এন্ট্রি ও এক্সিটের ব্যবস্থা।’

টার্মিনালে যাত্রীরা আধুনিক ও উন্নতমানের সব সেবা পাবেন উল্লেখ করে মেয়র আরও বলেন, ‘টার্মিনালটি চালু হওয়ার পর এ এলাকার চেহারা পাল্টে যাবে’

সরেজমিনে টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। কারুকার্যময় লাল ইটের দেয়াল, ইট রঙের স্টিলের ছাউনি, গাছপালা আবৃত গ্রিন জোন, বিমানবন্দরের আদলে আলাদা প্রবেশ ও বহির্গমন পথ, যাত্রীদের জন্য প্রায় দেড় হাজার আসনের বিশাল ওয়েটিং লাউঞ্জ রয়েছে এখানে।

নতুন এই টার্মিনালের নকশা করেছেন শাহ’জালাল বিজ্ঞান ও প্রযু’ক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের তিন শিক্ষক সুব্রত দাশ, রবিন দে এবং মোহাম্ম’দ জসিম উদ্দিন।

নকশা প্রসঙ্গে সুব্রত দে বলেন, ‘বাস টার্মিনালের নকশায় সিলেটের ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রন ঘটানো হয়েছে। সিলেটের ঐতিহ্য আসাম টাইপ বাড়ি, চাঁদনীঘাটের ঘড়ির আদলে এর নকশা করা হয়েছে। একই সঙ্গে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয় ঘটানো হয়েছে।’

জানা যায়, আগে এই টার্মিনাল এলাকাটি ছিল ময়লার ভাগাড়। বৃষ্টির দিনে কাদা-পানিতে একাকার থাকত পুরো এলাকা। আর এবড়ো-থেবড়োভাবে রাখা গাড়ির কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হত যাত্রীদের। নতুন টার্মিনালে সব কিছুকে শৃঙ্খলায় নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নির্মাণ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, পুরো টার্মিনালের নির্মাণ কাজ তিনটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম অংশের বর্হিগমন ভবনের দৈর্ঘ্য সাড়ে ৩০০ ফুট। এই অংশে ৪৮টি বাস একসঙ্গে থাকতে পারবে। এ ছাড়া যাত্রীদের বসার জন্য রয়েছে ৯৭০ আসনের বিশাল হল। রয়েছে ৩০ আসনের ভিআইপি কক্ষ, ৩০টি টিকিট কাউন্টার ও নামাজের জন্য আলাদা কক্ষ। পুরুষ নারী ও বিশেষ সুবিধাসম্পন্ন লোকদের ব্যবহার উপযোগী ৬টি টয়লেটও থাকবে এখানে। প্রয়োজনে হুইল চেয়ার নিয়েও টয়লেট ব্যবহার করা যাবে। উপরে উঠার জন্য রয়েছে-লিফট এবং খাবারের জন্য রেস্টুরেন্ট ও ফুড কোর্ট। হঠাৎ অ’সুস্থ হয়ে যাওয়া যাত্রীর জন্য আলাদা শয্যা ও ব্রেস্ট ফিডিং জোন থাকবে এখানে।

দ্বিতীয় অংশের আগমনী ভবন প্রায় ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যের। এখানে রয়েছে বাস বে, যাত্রীদের বসার জন্য ৫১০ আসনের বসার স্থান ও ৩০ আসনের ভিআইপি কক্ষ, আধুনিক টয়লেট সুবিধা, ব্রেস্ট ফিডিং জোন, লিফট, রেস্টুরেন্টসহ অন্যান্য সুবিধা।

আগমন ও বহির্গমন অংশ আলাদা হলেও করিডোরের মাধ্যমে পুরো স্থাপনাকে সংযু’ক্ত করা হয়েছে। এই বিল্ডিংয়ের পশ্চিম-দক্ষিণ কর্নারে সড়কের সঙ্গে গো’লাকার ৫ তলা টাওয়ার বিল্ডিংয়ে রয়েছে টার্মিনাল পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা অফিস। যেখানে থাকবে পুরো টার্মিনালের সিকিউরিটি কন্ট্রোল ও সিসিটিভি মনিটরিং কক্ষ, পু’লিশ কক্ষ এবং পর্যটন অফিস।

টার্মিনালের পেছনের দিকে তৃতীয় অংশে নির্মিত হয়েছে একটি মাল্টিপারপাস ওয়েলফেয়ার সেন্টার। যেখানে মালিক ও চালক সমিতির জন্য থাকবে ২৪ বেডের বিশ্রাম কক্ষ, গোসলের ব্যবস্থা, অফিস, লকার ব্যবস্থা, ক্যান্টিন এবং মিটিং ও অনুষ্ঠানের জন্য মাল্টিপারপাস মিলনায়তন।

নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডালি কনস্ট্রাকশনের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এই প্রকল্পের স্টিলের টিন আনা হয়েছে থাইওয়ান থেকে। স্টিল স্ট্রাকচারের জন্য লোহার বার আনা হয়েছে চায়না থেকে এবং প্রতিটি জিনিস বুয়েটে টেস্ট করা হয়েছে।’

তিনি জানান, এখানে বিমানবন্দরের মতো বিশাল ওয়েটিং স্পেস রাখা হয়েছে। আছে পার্কিং জোন। পরিবেশের কথা বিবেচনা করে ভবনের পেছনের দিকে থাকবে গাছপালা আচ্ছাদিত গ্রিনজোন। পরিবহন শ্রমিকদের জন্য মাল্টিপারপাস বিল্ডিংয়ে থাকবে বিশাল হলরুম, অফিস, ওয়াশরুম, রেস্ট রুমসহ বিভিন্ন সুবিধা।’

হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘সব মিলিয়ে এটি হবে দেশের অন্যতম সুন্দর একটি স্থাপনা।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: