সর্বশেষ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

আইসিইউ নিয়ে হাহাকার তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে

রংপুর বিভাগের আট জে’লায় আইসিইউ শয্যা এখনো সোনার হরিণ। অ’ত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেকেই ইচ্ছে থাকলেও বেসরকারি আইসিইউ ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

রংপুর ডেডিকে’টেড করো’না আইসোলেশন হাসপাতাল যাত্রা শুরু করে গত বছরের এপ্রিল মাসে। ১০০ শয্যার এ হাসপাতা’লে ১০টি আইসিইউ শয্যাসহ নারী ও পুরুষ রোগীদের জন্য ৯০টি সাধারণ শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি আইসিইউতে সমস্যার কারণে রোগী রাখা হচ্ছে না। সোমবার দুপুর পর্যন্ত করো’না ডেলিকেডেট হাসপাতাল ও রমেক হাসপাতা’লের সাধারণ শয্যায় করো’না রোগী চিকিৎসা নিচ্ছিলেন ১৬২ জন এবং আইসিইউতে আটজন। স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, আইসিইউ শয্যা রয়েছে মোট ৪৪টি। এর মধ্যে রংপুরে আটটি ও দিনাজপুরে ১৬টি। রংপুরের দুটি বেসরকারি হাসপাতা’লে আইসিইউ বেড রয়েছে ২০টি। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা অ’ত্যন্ত ব্যয়বহুল। ভুক্তভোগী এক রোগীর স্বজন জানান, বেসরকারি হাসপাতা’লে প্রতিদিন আইসিইউ শয্যা ভাড়া ১১ হাজার টাকা দিতে হয়। এর পরে ওষুধ পরীক্ষা নিরীক্ষাসহ অন্যান্য খরচ রয়েছে। তাই ধনী ব্যক্তি ছাড়া বেসরকারি হাসপাতা’লে আইসিইউ চিকিৎসা নেওয়া সাধারণ রোগীদের কাছে সোনার হরিণ।

রংপুরের মানবাধিকার কর্মী জোবাইদুল ইস’লাম বলেন, রংপুর বিভাগে করো’না পরিস্থিতির অবনতির এই সুযোগে বেসরকারি হাসপাতালগুলো গলাকা’টা ফি আদায় করছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো মনিটরিং না থাকায় করো’না দুর্যোগে হাসপাতালগুলো অমানবিক কাজ করছেন। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোতাহারুল ইস’লাম বলেন, আইসিইউ বেড বাড়ানোর চাহিদাপত্র অনেক আগেই দেওয়া হয়েছে।

অক্সিজেন নেই বরিশাল শেবাচিমে : বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতা’লের (শেবাচিম) করো’না ওয়ার্ডে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার চলছে। অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য সিরিয়াল লিখে দীর্ঘক্ষণ অ’পেক্ষা করতে হচ্ছে রোগীদের। ততক্ষণে মুমূর্ষু রোগীরা ঢলে পড়ছেন মৃ’ত্যুর কোলে। করো’না ওয়ার্ড মাস্টার বলছেন, রোগীর প্রভাবশালী স্বজনরা ২/৩টি সিলিন্ডার নিয়ে লুকিয়ে মজুদ রাখেন। অথচ অন্য মুমূর্ষু রোগীরা অক্সিজেনের অভাবে মা’রা যাচ্ছেন। এদিকে করো’না ওয়ার্ডে দুটি সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট থাকলেও কারিগরি ত্রুটির কারণে একটি প্ল্যান্ট পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ পাচ্ছেন না রোগীরা।

অ’পরদিকে ভাড়া দিয়ে বনিবনা না হওয়ায় ইউনিসেফের বসানো অক্সিজেন প্ল্যান্টের কার্যক্রমই শুরু হয়নি। করো’না ওয়ার্ডে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবস্থাপনায় সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন হাসপাতা’লের পরিচালক। তিনি দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শেরেবাংলা মেডিকেলের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. মনিরুজ্জামান জানান, করো’না ওয়ার্ডে গতকাল দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ছিলেন ৩১৯ জন রোগী। এর মধ্যে আইসিইউ সেবা পাচ্ছেন ২৫ জন রোগী। ১৫ জন রোগী পাচ্ছেন হাই ফ্লো ন্যাসল ক্যানোলা সেবা। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সেবা পাচ্ছেন ৮৫ জন রোগী। বাকি ১৯৪ জন রোগীর সিলিন্ডার সেবা প্রয়োজন। দুপুর ১২টায় শেবাচিমের করো’না ওয়ার্ডের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, অক্সিজেন সিলিন্ডার বহনকারী খালি ক্যারিয়ার (ট্রলি) নিয়ে তীর্থের কাকের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছেন অর্ধ শতাধিক রোগীর স্বজন। তারা সিরিয়ালে নাম লিখে অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য অ’পেক্ষা করছেন।

কিছুক্ষণ পর প্রায় অর্ধশত অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে করো’না ওয়ার্ডের সামনে আসে একটি পিকাপ। এ সময় সিলিন্ডার নিয়ে কাড়াকাড়ি হয় রোগীর স্বজনদের মধ্যে। রোগীর স্বজন মো. রুবেল বলেন, ‘করো’না ওয়ার্ডে কেয়ামত চলতেছে। অক্সিজেনের অভাবে ১০/১৫ মিনিট পর পর মুমূর্ষু রোগীরা মা’রা যাচ্ছে। দেখার কেউ নেই। রুবেল বলেন, গত শনিবার তার মায়ের জন্য একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার পেয়েছিলেন। অক্সিজেন শেষ হয়ে যাওয়ার পর নতুন সিলিন্ডার পাওয়ার জন্য গত রবিবার ৮১ নম্বর সিরিয়ালে তার মায়ের নাম লিখিয়েছেন। গতকাল দুপুর পর্যন্ত দেড়শ’ মানুষের নাম অক্সিজেন সিলিন্ডারের সিরিয়ালে লিখিয়েছেন। তার মায়ের জন্য কখন সিলিন্ডার পাবেন তা অনিশ্চিত।

ফয়সাল নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, তার রোগীর অক্সিজেন সিচুরেশন ৬০ থেকে ৭০। ডাক্তার বলেছে অক্সিজেন সিচুরেশন ৩০ থেকে ৩৫ না হলে অক্সিজেন সিলিন্ডার দেবেন না। সিচুরেশন ৩০ এ নেমে গেলে তখন সিলিন্ডার পেয়ে কি লাভ।

রোগীর স্বজন নুসরাত বেগম বলেন, গতকাল সকালে তার রোগীর জন্য ৮০ নম্বর সিরিয়ালে অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য নাম লিখিয়েছেন। সকালে অক্সিজেন সিলিন্ডারের গাড়ি আসার পর সিলিন্ডার ভাগে পাননি। দুপুরেও সিলিন্ডারবাহী একটি গাড়ি এসেছে। কিন্তু তার রোগীর সিরিয়াল আসতে আসতে সিলিন্ডার শেষ হয়ে যায়।

সাইদুল ইস’লাম নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, কেউ কেউ ২/৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে লুকিয়ে মজুদ করে রাখেন। আর কোনো কোনো রোগী অক্সিজেনের অভাবে মা’রা যাচ্ছে।

আব্দুর রহমান নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, অক্সিজেন সিচুরেশন কমে যাওয়ার পর রোগীরা যখন ছটফট করে তখন তাকে জরুরিভাবে অক্সিজেন দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সময় মতো অক্সিজেন সরবরাহ না পেয়ে অনেক রোগী মা’রা যাচ্ছেন। কোনো কোনো স্বজন অর্থের বিনিময়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করার অ’ভিযোগ করেন।

করো’না ওয়ার্ডের ওয়ার্ড মাস্টার মশিউর রহমান ফেরদৌস বলেন, বাঙালি কোনোদিন ভালো হবে না। কেউ কেউ ২/৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে লুকিয়ে মজুদ করে। আর কেউ অক্সিজেন সিলিন্ডার পায় না। কয়েক দিন আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করো’না ওয়ার্ডে অক্সিজেন সিলিন্ডার তল্লা’শি করেছে। এ সময় কোনো রোগীর শয্যার নিচে, কারোর পাটির নিচে আবার কেউ পেটিকোটের নিচে অক্সিজেন সিলিন্ডার লুকিয়ে রাখা অবস্থায় পেয়েছে।

এদিকে হাসপাতা’লের জন্য লিন্ডা বাংলাদেশ নামে একটি কোম্পানির অক্সিজেন ব্যাংক থাকলেও কারিগরি ত্রুটির কারণে পর্যাপ্ত ফ্লো সহ অক্সিজেন সরবরাহ পাচ্ছে না রোগীরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, লিন্ডা বাংলাদেশের ৭ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি অক্সিজেন ব্যাংক রয়েছে। এই ব্যাংক থেকে ৪২ মিলিমিটার ডায়ার সরবরাহ লাইন প্রয়োজন হলেও কর্তৃপক্ষ ২২ মিলিমিটার ডায়ার অক্সিজেন সরবরাহের পাইপলাইন স্থাপন করেছে। এ কারণে রোগীরা প্রয়োজনীয় অক্সিজেন টানতে পারছেন না ওই লাইন থেকে।

সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহের জন্য ২ মাস আগে ইউনিসেফের সহায়তায় স্পেক্ট্রা মেডিকেল চত্ত্বরে ১০ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি অক্সিজেন ব্যাংক স্থাপন করে। কিন্তু ভাড়া এবং রিফিল নিয়ে আর্থিক বনিবনা না হওয়ায় স্পেক্ট্রার ওই অক্সিজেন ব্যাংক চালু হচ্ছে না। সেন্ট্রাল অক্সিজেনের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত হলে করো’না ওয়ার্ডে রোগী মৃ’ত্যুর হার অনেক কমবে বলে আশা করেন স্থানীয় বাসিন্দা তাজুল ইস’লাম।

করো’না ওয়ার্ডে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবস্থাপনায় কিছুটা সমস্যা রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন হাসপাতা’লের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইস’লাম। অক্সিজেন সিলিন্ডারের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সেন্ট্রাল অক্সিজেন সেবা শিগগিরই স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

এ বিভাগের অন্যান্য খবর

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: