cialis fiyat cialis sipariş http://umraniyetip.org/
Fapperman.com DoEscortscialis viagra viagra cialis cialis viagra cialis20mgsite.com geciktirici sprey azdırıcı damla
ডেইলি সিলেট ডেস্ক ::
ঢাকা থেকে এক আইনজীবী নিজে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন চট্টগ্রামের পথে। রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী পার হওয়ার পর হঠাৎ গাড়ি লক্ষ্য করে ছুটে আসে লম্বা এক শাবল; চোখের পলকে তা বিকট শব্দে পেছনের দরজার নিচে আঘাত করে। হচকচিয়ে যান তিনি। গাড়ির গতি কমিয়ে থামানোর চেষ্টা করতেই পাশে থাকা স্ত্রী চিৎকার করে বলেন, “থামিও না, ডাকাত- জোরে চালাও।”
হঠাৎ শব্দে গাড়িতে থাকা তাদের দুই শিশু সন্তানও জেগে গিয়ে চিৎকার করতে থাকে। তৈরি হয় আতঙ্ক আর ভীতির এক মুহূর্ত। আশপাশে অন্ধকার থাকায় গাড়িও থামাতে পারছিলেন না।
মিনিট দশেক পর মহাসড়কের পাশে লোকজন দেখে একটি স্থানে গাড়ি থামান। দেখতে পান শাবলের আঘাতে গাড়ির পেছনের অংশ কেটে দেবে গেছে। বুঝতে পারেন ডাকাত বা লুটেরাদের লক্ষ্য ছিল গাড়ির চাকা। ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতির গাড়ির চাকায় তা আঘাত করলে কী ঘটতে পারত ভাবতেই গা শিউরে ওঠে ওই আইনজীবীর।
৩০ জানুয়ারির ওই ঘটনার পরদিন এক অনুষ্ঠানে ওই আইনজীবীর সঙ্গে দেখা হলে কথা প্রসঙ্গে ভয়ঙ্কর এ ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি। বলেন, শাবলটি চাকায় আঘাত করলে প্রাণহানির মত দুর্ঘটনাও ঘটতে পারত। ডাকাতরা লুটপাটের জন্য জান নেয়া এমন হামলা করতে পারে ভেবে আঁতকে উঠছেন।
তার স্ত্রী গাড়িতে আঘাতের শব্দের পরপরই চোখের এক কোণে সড়কের পাশ থেকে অন্ধকার ফুড়ে কয়েকজনকে এগিয়ে আসতে দেখে তাকে গাড়ি থামাতে নিষেধ করেছিলেন। তা না হলে কী যে হত- আর ভাবতেও চান না তিনি।
শুধু এই একটি ঘটনাই নয়। বরং একের পর এক ‘দুর্ধর্ষ’ কায়দায় ডাকাতির কারণে রীতিমত ‘আতঙ্কে’ পরিণত হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। অস্ত্রধারী ডাকাতদের কবলে অর্থ আর মালামাল খোয়াচ্ছেন অনেকে, যাদের মধ্যে বড় অংশ প্রবাস ফেরত ব্যক্তিরা। মাইক্রোবাসের পাশাপাশি সেডান কারের মত ছোট গাড়ি থাকে তাদের নিশানায়।
মহাসড়কে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় যাত্রী ও চালকদের জীবন হুমকির মুখে পড়ছে। ভুক্তভোগীরা শুধু আর্থিক নয়, ডাকাত-বা ছিনতাইকারীর মারধরের শিকার হয়ে শারীরিকভাবেও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে টানা ঘটতে থাকা এসব ডাকাতি ও লুটের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় হাইওয়ে পুলিশের একজন ওসিকে প্রত্যাহার করে নেয়াও প্রমাণ করে, পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক হয়ে উঠেছে এ পথের যাত্রীদের জন্য।
কুমিল্লার মানুষের ভাষ্য, রাতে এ পথে ডাকাত; আর দিনে শহরের রাস্তাঘাটে ‘মলম’ বা ‘অজ্ঞান পার্টির’ দৌড়াত্ম। দুইয়ে মিলে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ।
এ ধরনের অপরাধ দমনে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’, যৌথবাহিনীর অভিযান চললেও লুটপাট থামছে না। এমন প্রেক্ষাপটে বুধবারও সড়কে আলাদা করে প্রায় ২৫০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম, কুমিল্লা সিলেট ও কুমিল্লা নোয়াখালী অঞ্চলের মহাসড়কগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা নিয়মিত সদস্যদের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করবেন। হাইওয়ে কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম বলেন, অন্তত আগামী এক মাসের জন্য মহাসড়কের নিরাপত্তা জোরদার করতে কাজ করবেন তারা। বিশেষত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রাধান্য দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হচ্ছে।
একের পর এক ডাকাতি ও লুটপাটের ঘটনা বাড়তে থাকা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলেন, ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আগে ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও ৫ অগাস্টের পর তা বাড়ছে। বিমানবন্দর হয়ে দেশে ফেরা প্রবাসী, রাজধানীতে আসা ব্যবসায়ী, গাড়িচালক, মোটরসাইকেল আরোহী ও স্থানীয় তৈরি পোশাক শ্রমিকরা বেশি ডাকাতি, ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন।
আর দিনের বেলায় শহরে নানা ধরনের চেতনানাশক ওষুধ ব্যবহার করে টাকা-পয়সা স্বর্ণালংকার কেড়ে নিচ্ছে অজ্ঞান পার্টি।
ডাকাতদের তথ্য দেয় ‘হকাররা’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মুন্সীগঞ্জের ভবেরচর, কুমিল্লার দাউদকান্দি এবং চৌদ্দগ্রাম এলাকায় গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ১০ থেকে ১২টি ডাকাতির ঘটনার খবর দিয়েছেন পুলিশ ও ভুক্তভোগীরা।
এ পথে চলাচলকারী গাড়ির চালকরা বলছেন, ডাকাতদের অন্যতম লক্ষ্য ‘প্রবাসীরা’। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া পরিচয়েও ডাকাতি করা হচ্ছে মহাসড়ক সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায়। এছাড়া বিভিন্ন টোল প্লাজার হকাররা এবং হাইওয়ের বিভিন্ন হোটেলগুলো থেকে তথ্য দিয়েও ডাকাতদের সহযোগিতা করে।
১ মার্চ ভোর সাড়ে ৬টার দিকে চৌদ্দগ্রাম থানা থেকে ৫০০ মিটার দূরে মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের ফাল্গুনকরা এলাকায় বেলাল হোসেন নামে মালয়েশিয়া প্রবাসীর সবকিছু লুট করে ডাকাতদল।
ফেনীর দাগনভূঁইয়া উপজেলার শরিফপুর গ্রামের এ বাসিন্দা বলছিলেন, “একদল ডাকাত পিকআপ ভ্যান দিয়ে আমাদের গাড়িকে ধাক্কা দিয়ে সড়কের বাইরে ফেলে দেয়। পরে দেশি অস্ত্রশস্ত্র দেখিয়ে মোবাইল ফোন, সোনা ও নগদ টাকাসহ আমার সর্বস্ব লুট করে।
“কষ্ট করে টাকা-পয়সা রোজগার করে বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছিলাম, পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটানোর জন্য। ডাকাতরা আমার পরিবারের জন্য আনা বিভিন্ন উপহারের তিনটি লাগেজ, মোবাইল ফোন, নগদ বিদেশি মুদ্রা সব নিয়ে গেছে।”
বেলাল হোসেনকে বহনকারী মাইক্রেবাসের মালিক সাগর মিয়া বলেন, “প্রবাসীদের গাড়িগুলোকে মূলত টার্গেট করা হয়, বিভিন্ন টোল প্লাজায় পানি, শসা, চানাচুর, বড়ই বিক্রেতা হকারদের মাধ্যমে। এছাড়া হাইওয়ের পাশের কোনো হোটেল থেকেও সোর্সরা ডাকাতদের গাড়ির মালামাল ও মানুষ সম্পর্কে তথ্য দেয়। ডাকাতরা বেশির ভাগই এখন পিকআপ ভ্যান এবং কভার্ড ভ্যান ব্যবহার করছে। যেন তারা দ্রুত পালিয়ে যেতে পারে।”
একই এলাকায় একই কায়দায় এবং একই সময়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি কুয়েতপ্রবাসী নাইমুল ইসলাম ডাকাতির শিকার হন। তার গাড়িতে হামলা চালিয়ে ডাকাতরা সব লুট করে নিয়ে যাওয়ার তথ্য দেন চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ উপজেলার এই প্রবাসী।
একই তারিখে রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানা থেকে ৩০০ মিটার দূরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মডেল মসজিদের বিপরীত পাশে ডাকাত দল পিকআপ ভ্যান চাপা দিয়ে মহিউদ্দিন নামের এক ব্যক্তির মোটরসাইকেল নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ওই ব্যাংক কর্মকর্তার দুই পা ভেঙে যায়। বর্তমানে তিনি কুমিল্লা নগরীতে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
মহিউদ্দিন বলছিলেন, “ডাকাতরা পিকআপ দিয়ে এসে আমার মোটরসাইকেলের মুখোমুখি হয়ে হামলা শুরু করে। আমি তাদের বলি, মোটরসাইকেল দিয়ে দিয়েছি আমাকে ছেড়ে দাও। তাও তারা আমাকে ছাড়েনি। আমাকে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে আহত করেছে। রাস্তার ওপর পড়ে থাকার সময় অপর একটি গাড়ির চাপায় আমার পা ভেঙে গেছে। এই ঘটনাও থানা থেকে খুব বেশি দূরে নয়।”
তার ভাই পেশায় চিকিৎসক শাহিন উদ্দিন বলেন, “আমার ভাইয়ের দুটি পা-ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডাকাতদের পিটুনি এবং অপর একটি পা গাড়ির চাকার নিচে থেঁতলে দুটি পায়েই রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, তার পায়ের একটি আঙ্গুল আর কাজ করবে না। এটা আসলে কোনোভাবে মেনে নেয়া যাচ্ছে না।”
ডাকাতির ঘটনা বেড়ে চলার মধ্যে সবশেষ শুক্রবার মধ্যরাতে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার পাবনা-সাঁথিয়া সড়কে ছেচানিয়া সেতুর পাশে তলট এলাকায় গণডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা যাত্রীদের সর্বস্ব নিয়ে যায়।
কয়েক দিন আগে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে রাজশাহীগামী একটি বাসে ডাকাতির ঘটনায় দুজন নারীকে যৌন-হয়রানির খবর আসে। টাঙ্গাইলেই ডাকাতি হয়েছে শিক্ষার্থীদের পিকনিকের চারটি বাসে।
সক্রিয় অজ্ঞান পার্টি
এদিকে দিনের বেলা কুমিল্লা জেলা শহরের বিভিন্ন রাস্তাঘাটে অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকে। প্রতারকরা ‘শয়তানের নিঃশ্বাস’ নামে পরিচিত মাদক ‘স্কোপোলামিন’ ব্যবহার করে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা-পয়সা।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন কেমিক্যাল বা চেতনানাশক ব্যবহার করেন প্রতারকরা। অটোরিকশা ও ইজিবাইক যাত্রীদের সঙ্গে উঠে তাদের লক্ষ্য করা হয়। বিশেষ করে ফাঁদে ফেলা হয় ‘নারী’ ও ‘অপরিচিতদের’।
সম্প্রতি নিজ এলাকা কুমিল্লা নগরীর পদুয়ার বাজার থেকে চকবাজার যাওয়ার পথে শয়তানের নিঃশ্বাসের ফাঁদে পড়ে দামি মোবাইল, ঘড়ি ও নগদ টাকা হারিয়েছেন আরিফুল ইসলাম নামের একজন সৌদি আরব প্রবাসী।
ওই প্রতারক আরিফুলকে ‘বশ’ করে তার সঙ্গে ব্যাংক এটিএম কার্ডের পাসওয়ার্ড জেনে তুলে নিয়েছে দেড় লক্ষাধিক টাকা। পরে তাকে তার নামেই হোটেলের রুম বুক করে সেখানে ফেলে রাখা হয়। তিনি নিজেই এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “সিসি ক্যামেরা দিয়ে ওই প্রতারকের ছবি আমরা সংগ্রহ করেছি। থানায় একটি জিডিও করা হয়েছে। তবে সে যে কীভাবে আমার কাছ থেকে আমার এটিএম কার্ডের পাসওয়ার্ড নিয়ে গেছে আমি কিছুই বলতে পারব না। এমনকি সে আমাকে ঘরের মধ্যে রেখে আমাকে দিয়েই হোটেল রুম বুক করে সেখানে ফেলে গেছে। অন্তত তিন ঘণ্টা পর আমার জ্ঞান ফেরে।”
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ওই ঘটনার পর টানা দুদিন হাসপাপাতালে ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন আমার শুধু মাথা ঘুরায় ও ঝিমঝিম করে।”
এর আগে ১৪ জানুয়ারি কুমিল্লা নগরীর কোটবাড়ি থেকে শহরে ঠাকুরপাড়ায় ফেরার পথে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে দিগ্বিদিক হারান পেশায় শিক্ষিকা নিগার সুলতানা। বয়োবৃদ্ধ এই নারীর কাছ থেকে কানের দুল, হাতের চুড়িসহ ব্যাগে থাকা ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
খপ্পর পার্টি যেসব কেমিক্যাল ব্যবহার করে, তাতে সাধারণ মানুষের হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক ও শ্বাসযন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা না হলে, এটা দীর্ঘমেয়াদীও হতে পারে, বলেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হেলাল আহমেদ।
ওসি প্রত্যাহার
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লা অংশে অব্যাহত ডাকাতির মধ্যেই হাইওয়ে পুলিশের এক ওসিকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
হাইওয়ে কুমিল্লার রিজিয়নের পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. খাইরুল আলম বলেন, “ডাকাতির ঘটনা প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়ায় মিয়াবাজার হাইওয়ে থানার ওসি জসিম উদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে টহল জোরদার করা হয়েছে।”
এছাড়া সম্প্রতি দেবিদ্বার উপজেলার প্রজাপতি গ্রামে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে অস্ত্রসহ মোট ৩৪ মামলার আসামি তিন ডাকাতকে আটক করে পুলিশ।
এ তথ্য দিয়ে দেবিদ্বার থানার ওসি শামসুদ্দীন মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, “গ্রেপ্তার জহিরুল ইসলামের নামে ১৯টি, শাহ আলমের নামে আটটি ও খলিলুর রহমানের নামে সাতটি চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে।”
মামলায় অনীহা, নিরাপত্তা চান যাত্রীরা
গত পাঁচ মাসে কুমিল্লায় ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনার ভুক্তভোগীরা ঘটনায় মামলা কিংবা অভিযোগ করতেও অনিহা প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতির সংখ্যা জানতে চাইলে কুমিল্লা রিজন হাইওয়ে পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম এবং কুমিল্লার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরাফাতুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়েছে তিনটি। যেসব ঘটনা জানা গেছে সেগুলোই কেবল মামলা আকারে লিপিবদ্ধ হয়েছে বলে জানান তারা।
তবে থানা পুলিশের মামলার বাইরে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ে সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। যেসব ঘটনায় ভুক্তভোগীরা মামলা কিংবা অভিযোগ দায়ের করেননি সে সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই পুলিশের কাছে।
কুমিল্লার সাংবাদিক ও গবেষক আবুল কাশেম হৃদয় বলেন, “মহাসড়কে পুলিশের টহল জোরদার না করলে ডাকাতির ঘটনা বাড়তেই থাকবে। এছাড়া যেসব ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে, সেগুলোতে জড়িতদের আটক করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।
“আসলে ডাকাতি কিংবা ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলায় তদন্তে অগ্রগতির না হওয়ার কারণে অনেকেই থানায় যেতে অনীহা প্রকাশ করছে।”
তিনি বলেন, “ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যেসব সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে সেগুলোসহ কুমিল্লা নগরীর ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছিল সেগুলো পুনরায় সচল করে নজরদারি বাড়াতে হবে। তাহলে কিছুটা হলেও ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ন্য কমে আসবে।”
মহাসড়কে নিরাপত্তার বিষয়ে কুমিল্লার ডিসি মো. আমিরুল কায়সার বলেন, “পুলিশ থাকলে ডাকাতি করা সম্ভব নয়। ডাকাতি প্রতিরোধে হাইওয়ে পুলিশকেই সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হতে হবে। সুতরাং মহাসড়কে নিরাপত্তার দায়-দায়িত্ব তাদের ওপরেই বর্তায়।
“আমি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবাইকে কঠোরভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশনা শুধু দিতে পারি। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে পুলিশকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে।”
তিনি ডাকাতি, চুরি ও ছিনতাইয়ের মত অপরাধ কার্যক্রম কমিয়ে আনতে প্রতিকার ও প্রতিরোধেরও আহ্বান জানান। ভুক্তভোগীদের মামলা করার তাগিদ দেন।
নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
ডাকাতির ঘটনা বাড়তে থাকায় বাড়ানো হয়েছে মহাসড়কের হাইওয়ে পুলিশের টহল। রোজার সময় ও ঈদকে সামনে রেখে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে।
চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা জেলা কার্যালয় থেকে অতিরিক্ত গাড়ি ও ফোর্স এনে মহাসড়কে টহলের ব্যবস্থা করছি। এছাড়া হাইওয়ে পুলিশও ব্যবস্থা নিচ্ছে।”
র্যাব-১১ সিপিসি ২ কুমিল্লা কোম্পানি কমান্ডার মাহমুদুল হাসান বলেন, “জেলা ও উপজেলা শহরগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মত অপরাধীদের ধরতে চেকপোস্ট ছাড়াও গোয়েন্দারা নজরদারি করছে। আমরা এরই মধ্যে কুমিল্লার রেলস্টেশন এলাকা থেকে চারজন ছিনতাইকারীকে আটক করতেও সক্ষম হয়েছি।”
আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা ‘মাল্টি পার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরামের’ কুমিল্লা জেলার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, “সবাই যেন দায়িত্বহীনের মত দায়িত্ব পালন করছে! শহরে চলাফেরা থাকার মত নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে নাগরিকরা বাঁচার মৌলিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমাদের নিরাপত্তা সবগুলো দিক প্রশাসনকে নিশ্চিত করা উচিত।
“অন্তত শহরের বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো সিসি ক্যামেরার নিরাপত্তায় আনা উচিত। প্রয়োজনে প্রতিদিনই চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহভাজনদের তল্লাশি হোক।”
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের কুমিল্লা জেলা সভাপতি আলমগীর খান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ, জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জিরো টলারেন্স নীতি নিতে ডিসি ও এসপিসহ সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি দায়িত্বশীল ও আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তা না হলে চুরি-ডাকাতি ছিনতাইয়ের মত অপরাধ আরও দিন দিন বাড়বে।