তারেক হাসান, কুলাউড়া :

কুলাউড়ায় ব্যাটারি চালিত অটোরিকশাই বিদ্যুতের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৌর শহরসহ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নেই রয়েছে ব্যাটারী চালিত এসব অটোরিকশা। পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ বা বিদ্যুত কতৃপক্ষ কেউই জানেনা কতটি অটোরিকশা রয়েছে। শহরের প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই যানগুলো। আর এসব রিকশার কারনে জনজীবন এখন অতিষ্ট হয়ে পড়ছে, বাড়ছে যানজট ও বিদ্যুতের লোডশেডিং।

প্রতিদিনই সড়কে নতুন নতুন আটোরিকশা ও চালক দেখা যাচ্ছে। এদের বেশিরভাগের নেই রেজিস্ট্রেশন বা লাইসেন্স। অনিয়ন্ত্রিত হারে এসব পরিবহন বিদ্যুতের ঘাটতি ও লোডশেডিং মূল কারন হিসেবে মনে করছেন বিজ্ঞজনেরা। আর এগুলোর বেশিরভাগ চালক’ই অদক্ষ ও কম বয়সী কিশোর। তাদের বেপরোয়া গতিতে চালানোর কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

শহরের মূল রাস্তায় সকালে স্কুল ও অফিস শুরুর সময় এবং সন্ধায় যানজটের পরিমান বেশি হয়ে থাকে। কখনো কখনো অতিরিক্ত যানজটের কারনে কুলাউড়া শহরের দক্ষিণবাজার থেকে উত্তরবাজার যাতায়াতে ৩০-৪০মিনিট সময় লেগে যায়।

এসকল ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা প্রতিদিন চার্জ করতে সময় লাগে ৭থেকে ৮ঘন্টা। যার ফলে বিদ্যুতের বৃহৎ একটা অংশ ব্যাবহার হচ্ছে অটোরিকশা চার্জ করতে। এমনিতেই বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে আর এই সকল অনিয়ন্ত্রিত যানগুলোর জন্য বিদ্যুৎ অতিরিক্ত ব্যবহারের কারনেই কুলাউড়া উপজেলার বিদ্যুত গ্রাহকরা প্রতিদিনই গড়ে ৩-৪ঘন্টা লোডশেডিংয়ে পড়তে হয়। ভূক্তভোগি বিদ্যুত গ্রাহকরা এই লোডশেডিংয়ের জন্য একমাত্র ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে দায়ী করছেন। তাদের মতে বিভিন্ন স্থানে অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চার্জ দেয়া হয়ে থাকে, যার ফলে বিদ্যুৎ অতিরিক্ত ব্যবহার বেড়েছে। অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের ব্যাপারে বিদ্যুত বিভাগের পক্ষ থেকে তদারকি, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলে ও ট্রাফিক অভিযান তৎপর হলে শহরে অটোরিকশার পরিমান নিয়ন্ত্রিত হবে বলে মনে করছেন তারা।

সচেতন মহলের প্রশ্ন কুলউড়ায় বিদ্যুতের সাব স্টেশন নির্মান হয়ে কি লাভ হলো গ্রাহকদের, এটা থেকে কুলাউড়াবাসী কি কোন প্রকার সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে? বরং বেড়েছে লোডশেডিংয়ের মাত্রা।
অটোরিকশা লাভজনক হওয়াতে প্রতিনিয়ত এর বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে অনেক জায়গাতে বাণিজ্যিক ভাবে গড়ে উঠেছে গ্যারেজ। কেউ কেউ মাসিক চুক্তিতে গ্যারেজে রাখছেন অটোরিকশা। কয়েকজন চালকের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ব্যাটারি চার্জসহ রাতে গ্যারেজে রাখার জন্য গ্যারেজ মালিককে প্রতিদিন অটোরিকশা বাবত তাদের দিতে হয় ১০০-১২০টাকা।

এ ব্যাপারে কুলাউড়া পৌরসভার উচ্চমান সহকারী মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৪০০টি অটোরিকশা রেজিস্ট্রশন (প্লেট নাম্বার), লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। তবে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে রেজিস্ট্রশন কেউ নেয়নি।
কুলাউড়া বিদ্যুত বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের (পিডিবি) নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন মুঠোফোনে জানান, আমাদের কাছে ব্যাটারী চালিত অটোরিকশার কোন হিসাব নেই। তবে অটোরিকশা চার্জ দেয়ার ক্ষেত্রে আলাদা নির্ধারিত ট্যারিফে শুধু কুলউড়ায় ১২০টির মতো মিটার রয়েছে।

এ কার্যালয়ের আওতাধিন কুলাউড়া ও জুড়ীর বিদ্যুত গ্রাহক রয়েছেন ৫৫হাজারের মতো। শুধু কুলাউড়াতে ৩৯হাজার ৫শ বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছেন। বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৯মেগাওয়াট। চাহিদার তুলনায় কত মেগাওয়াট মিলছে এটা নির্ধারিত নয়, উৎপাদনের উপর নির্ভর করে এক এক সময় এক এক অনুপাতে পাই যেমন আজকে চলছে ১০মেগাওয়াট আবার কখনো কখনো চাহিদার পুরোটা পেয়ে থাকি। বিদ্যুত চাহিদার কম হলে লোডশেডিং করতে হয়। আমরা অবৈধ সংযোগের খবর জানলে অভিযান পরিচালনা করছি জরিমানা আদায় করছি। আমার যোগদানের পর এ বিষয়ে ৭৫টি মামলা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন:

• ফেইসবুক
• টুইটার
• গুগল প্লাস
• ইমেইল