সর্বশেষ আপডেট : ১০ ঘন্টা আগে
শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

মুক্তিপণের পুরো টাকাই ফেরত পেল এমভি আবদুল্লাহ

ডেইলি সিলেট ডেস্ক ::

মুক্তিপণের টাকা দিয়েই সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে এমভি আবদুল্লাহ ও এর ২৩ নাবিক। প্রশ্ন উঠেছিল বিশাল অংকের মুক্তিপণের এই টাকা কে দিয়েছে? সে সময় মুক্তিপণের টাকা দেশ থেকে কিভাবে যাবে কিংবা ডলার সংকট কিভাবে সমাধান হবে এসব বিষয় নিয়েও ছিল অনেকের প্রশ্ন।

গত ১৩ এপ্রিল দস্যুদের কাছ থেকে মুক্তির পর ১৪ এপ্রিল জাহাজ মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও মুক্তিপণের টাকা নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। তবে মঙ্গলবার (১৪ মে) জানা গেল, বিমা কোম্পানির পক্ষ থেকেই দেয়া হয়েছে মুক্তিপণের পুরো টাকা।

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের জেটিতে ২৩ নাবিক নিয়ে আসার আগ মুহূর্তে মিডিয়ার পক্ষ থেকে মুক্তিপণ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কেএসআরএম এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সারোয়ার জাহান রাহাত বলেন, ‘আমরা শতভাগ টাকা ইনস্যুরেন্স (বিমা) কোম্পানি থেকেই নিয়েছি।’

এতে আর্থিক ক্ষতি কেমন হয়েছে পাল্টা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ব্যবসায় লাভ-লস সবই থাকবে। আমাদের জাহাজটি দীর্ঘদিন বসা ছিল এতে অবশ্যই আমাদের ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতি হলেও নাবিকদের ও তাদের স্বজনদের আজকের হাসিমুখ দেখার তৃপ্তিই আলাদা।

দস্যুদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে যোগাযোগের কাজটি তখন করেছিলেন কেএসআরএম’র প্রধান নির্বাহী মেহেরুল করিম। পৃথকভাবে একই প্রশ্ন তাকে করা হলে তিনিও একই উত্তর দেন। তিনি বলেন, ‘বিধি অনুযায়ী আমরা বিমা কোম্পানির কাছ থেকে মুক্তিপণের টাকা পেয়েছি। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আমাদের জাহাজের প্রথম শ্রেণির বিমা করা ছিল। আর এই বিমার আওতায় দস্যুদের কবলে পড়ার বিষয়টি যুক্ত ছিল।’ তিনি আরও বলেন, এই বিমা খুবই উচ্চ মূল্যের বিমা। আর সেজন্যই আমরা এই সুবিধাটি পেয়েছি।

আন্তর্জাতিক আইনে কি রয়েছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্বে ইউরোপ, আমেরিকা, চীন ও জাপানের ১৫ থেকে ২০টি ইনস্যুরেন্স কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানি ঝুঁকিপূর্ণ রুটে চলাচলকারী জাহাজগুলোর বিমা করে থাকে। আমাদের এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের বিমা করা ছিল যুক্তরাজ্যের বার্কলি কোম্পানির কাছে।’

কিন্তু উচ্চ মূল্যের এসব বিমা সবসময় পরিচালনা করা তো ব্যয়বহুল। এতে জাহাজ মালিকদের লস হওয়ার কথা। এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উচ্চমূল্যের এসব বিমা ৫ থেকে ৭ দিনের জন্য করা যায়। এজন্য বিমা কোম্পানিকে কমপক্ষে ৫০ হাজার ডলারও পরিশোধ করতে হয়। তাই জাহাজ মালিকরা ঝুঁকিপূর্ণ রুটে চলাচলের সময় শুধুমাত্র পাইরেসি (দস্যুদের দ্বারা আক্রান্ত) বিমা করে থাকে।’

এতে মালিকদের ক্ষতি হয় না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এতে সবচেয়ে বেশি লাভ হয় বিমা কোম্পানির। ঝুঁকিপূর্ণ এসব রুটে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক জাহাজ চলাচল করে। একটি জাহাজ থেকে যদি ৫০ হাজার মার্কিন ডলার করে নেয়া হয় তাহলে তাদের অনেক টাকা আয় হয়। বিপরীতে ঝুঁকিপূর্ণ রুটে জিম্মির ঘটনা খুবই নগণ্য। তাই এক আবদুল্লাহর পেছনে ৫ মিলিয়ন ডলার দিলেও তারা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আয় করে নিচ্ছে।

জাহাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধাপের বিমা রয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল আলম সুজন। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি জাহাজে বিভিন্ন ক্যাটাগরির বিমা রয়েছে। আর ক্যাটাগরি ভিত্তিক টাকা দিতে হয়। আর এগুলো সবই আন্তর্জাতিক আইন মেনেই করা হয়ে থাকে।’

উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে প্রায় ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগর থেকে জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সোমালিয়ান জলদস্যুরা। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাই যাচ্ছিল। জাহাজটি ছিনতাইয়ের পর সোমালিয়ার উত্তর-পূর্ব উপকূলের গ্যরাকাদে নোঙ্গর করে। পরবর্তীতে অনেক নাটকীয়তা ও অনিশ্চয়তা পর গত ১৩ এপ্রিল ভোর ৩টায় সোমালিয়ান দস্যুদের কাছ থেকে মুক্তি পায় এমভি আবদুল্লাহ ও ২৩ নাবিক। দস্যুদের ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মুক্তিপণ হিসেবে দেয়া হয়েছে। মুক্তিপণের টাকা বুঝে পাওয়ার পর তাদের মুক্তি দেয় দস্যুরা।

মুক্তিপণের টাকা কিভাবে দেয়া হয়েছিল জানতে চাইলে থার্ড অফিসার তারেকুল ইসলাম বলেন, ‘টাকা ভর্তি তিনটি ব্রিফকেস উড়োজাহাজে করে পানিতে ফেলার পর দস্যুরা সেগুলো নিয়ে জাহাজের ভেতরে ঢুকে যায়। তখন আমরা জাহাজের উপরের রুমে ছিলাম।’

এর আগে একই মালিক গ্রুপের এমভি জাহান মনিকে ২০১০ সালে জিম্মি করেছিল একই গ্রুপের জলদস্যুরা। সেবারও মুক্তিপণ দিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। সোমালিয়ান জলদস্যুরা ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৮টি জাহাজ জিম্মি করেছিল। এর আগে ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে জিম্মি করেছিল ৩৫৮টি জাহাজ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: