সর্বশেষ আপডেট : ১০ ঘন্টা আগে
বুধবার, ১ মে ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

মিনিটে মিনিটে বাড়ছে পানি, ডুবছে সিলেট নগরী

মিনিটে মিনিটে বাড়ছে পানি। নগরীর বিভিন্ন স্থানে এরইমধ্যে পানি উঠে গেছে। সোমবার (১৬ মে) বৃষ্টিহীন দিনেও সিলেটের এমন অবস্থা। এদিন বৃষ্টি না হলেও ভা’রত থেকে নেমে আসা পানির সংকুলান হচ্ছে না সুরমা’র বুকে। তাই নদীর পানি বেড়ে ডুবছে শহর।

বিপৎসীমা অ’তিক্রম করা ভরা সুরমা’র পানিতে নগরীর ছড়াখাল ভরে গিয়ে রাস্তাঘাট ডুবছে। অনেকের বাসা-বাড়িতে নীচের ফ্লোরে পানি চলে গেলে। যত সময় যাচ্ছে, ততই জোয়ারের ন্যায় বৃদ্ধি পাচ্ছে পানি।

আর টানা কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যাবে সিলেট নগরী। সোমবার দিনেও বিভিন্ন সড়ক ও গলিতে পানি মাড়িয়েছে। পানি ঢুকে বাসাবাড়ি, অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। আগামি ২৪ ঘন্টা এ অবস্থা চলতে থাকলে বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে মনে করছেন নগরীর বাসিন্দারা। অনেকে বাসা-বাড়িতে পানি ওঠার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়ছেন।

সিসিকের তথ্য মতে, মহানগর এলাকায় প্রায় ১১ শ কিলোমিটার ড্রেন সংস্কারের কাজ ২০১২ সালে শুরু হয়।

সিসিকের দাবি অনুযায়ী, ৩ শ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ প্রায় ৭৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। তবে ৯ বছরের বেশি সময় ধরে ছড়া ও ড্রেনের সংস্কার কাজ চললেও নদীর নাব্যতা হা’রানোর কারণে দুভোগে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। ছড়াখালের সংস্কার কোনো সুফল বয়ে আনতে পারেনি। মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই তলিয়ে যাচ্ছে নগরী।

যেসব রাস্তা-ঘাটে বিগত দিনে ব’ন্যায়ও পানির দেখা পায়নি। সেসব সড়কে, হাটু থেকে কোম’র পানি জমেছে। বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি- দোকানপাটে পানি উঠে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

তবে সিসিকের দাবি, ড্রেনেজ সংস্কার কাজ শতভাগ শেষ হয়ে গেলে আর এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে না। উন্নয়নের সুফল পাবেন নগরবাসী।

গত সপ্তাহের মঙ্গলবার রাত থেকে সিলেটে ভা’রি বর্ষণ শুরু হয়। থেমে থেমে সে বৃষ্টি এখন পর্যন্ত চলমান। বুধবার থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে শুরু করে।বৃষ্টির পানি এভাবে উঠে আবার নেমে যায়, নগরবাসীর এমন আশ’ঙ্কাকে এবার ম্লান করে দিয়ে সুরমায় আচ’মকা জোয়ারের গতিতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সোমবার (১৬ মে) দিনে বৃষ্টিপাত না হলেও দিবাগত ১২ টার দিকে পানি নেমে যাওয়ার বদলে আরও বাড়ছে।সুরমা’র তীরে বসবাসকারী ভুক্তভোগি পরিবারের অনেকে বাসা-বাড়ি ফেলে অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন।

নগরীর মাছিমপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল কাইয়ুম সামি শ্যামল সিলেট’কে বলেন, দিনের বেলা সড়কে জলাবদ্ধতা মাড়িয়ে চলতে হয়েছে। বিভিন্ন বাড়িতে পানি ঢোকার কারণে অনেকে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমাদের বাড়ি থেকে ৩ পরিবার এরইমধ্যে অন্যত্র সরে গেছেন। বাড়ির আঙিনায়ও পানি উঠেছে। বানের পানি ও বাসা-বাড়ির পানি একাকার হয়ে গেছে। রাতে কি অবস্থা হয় আল্লাহ জানেন। সবাই আশ’ঙ্কার মধ্যে রাত কা’টাচ্ছেন। রাত ১টা ৫ মিনিটে ক্রমশ পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ছড়ারপাড়ের বাসিন্দা আরাফাত হোসেন সিয়াম শ্যামল সিলেট’কে বলেন, ছড়ার পানি চালিবন্দর-ছড়ারপাড় সড়কে উঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন কলোনীতে এরইমধ্যে পানি উঠে গেছে। তাছাড়াও বিভিন্ন বাসা বাড়িতে পানি উঠে গেছে। মানুষজন আতঙ্কে বাসা-বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তাছাড়া দিনমজুর ও কলোনীর নিম্ন আয়ের মানুষদের অন্যত্র আশ্রয়ে সুযোগ না থাকায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে।

জলাবদ্ধতা সৃষ্ট এলাকাগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে নগরীর শাহ’জালাল উপশহর, যতরপুর, সোবহানিঘাট, কালীঘাট, শেখঘাট, তালতলা, পাঠানটুলা, লন্ডনি রোড, সাগরদিঘির পাড়, সুবিদবাজার, শি’বগঞ্জ, মেজরটিলা, ম’দিনা মা’র্কেট, দক্ষিণ সুরমা’র বঙ্গবীর রোড, ভা’র্তখলা, মোমিনখলা, পিরোজপুর, আলমপুর ও ঝালোপাড়া এলাকা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, সুরমা-কুশিয়ারা, লো’ভা, সারি ও দলাই নদীর পানি ৭টি পয়েন্টে বিপৎসীমা’র উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টার প্রতিবেদন অনুযায়ী কানাইঘাটে সুরমা’র পানি ১৪৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি না থাকলেও গতকালের চেয়ে ওই পয়েন্টে আজ আরো ১৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। সিলেটে সুরমা’র পানি বিপৎসীমা’র ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উৎসমুখ আমলশীদে কুশিয়ার নদীর পানি ১৩০ সেন্টিমিটার বিপৎসীমা’র উপর দিয়ে প্রবাহমান রয়েছে। সিলেটের বিয়ানীবাজার শেওলা পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি ৩৫ সেন্টিমিটার উপরে, সারি নদীতে ২ সেন্টিমিটার, লো’ভা ছড়ায় পানির গতি প্রবাহ ১৪.৬৫ সেন্টিমিটারে প্রবাহমান রয়েছে।

জানা গেছে, বরাক মোহনা থেকে উৎপত্তিস্থ লেকে সুরমা নদীর ২৪৯ কিলোমিটার বা ১৫৫ মাইল দৈর্ঘ্যের নদীটি সিলেট নগরের বুক চিড়ে সুনামগঞ্জ জে’লার বাউলাই নদীর মোহনায় গিয়ে মিশেছে। শুস্ক মৌসুমে সুরমা’র তলদেশ চারণ ভূমিতে পরিণত হয়। যে নদী দিয়ে একসময় জাহাজ চলতো। সেই সুরমা’র বুকে শুষ্ক মৌসুমে খেলার মাঠে পরিণত হয়। আর ঘন ঘন সেতু দিয়ে নদী শাসন করায় এবং উজানের পাহাড়ি ঢলে নদীর তলদেশ ভরাট হওয়াতে বর্ষায় বৃষ্টি ও উজানের নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সহ’জেই টইটুম্বুর হয় সুরমা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে ফের সুরমা নদী খননের জন্য সমীক্ষা চালানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত এ সমীক্ষা প্রতিবেদনও আলোর মুখ দেখেনি। অবশ্য ২০১৮ সালে সিলেট সদর উপজে’লার কানিশাইলে ৬০০ মিটার সুরমা নদী খনন করা হয়। এ সময় সিলেট সদর উপজে’লা এবং কানাইঘাট উপজে’লার কয়েকটি অংশে নদী খননের জন্য প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। কিন্তু তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে নদীটির উৎসমুখের ৩২ কিলোমিটারে ৩৫টি জায়গাসহ বিভিন্ন স্থানে পলি জমে ভরাট হয়ে পড়েছে তলদেশ।

এ অবস্থায় এ নদীর খনন ছাড়া সিলেট নগরীর সুরমা তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বর্ষা মৌসুমে জলবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হবে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান সোমবার রাতে শ্যামল সিলেকে বলেন, ‘পরিকল্পনা করেই ড্রেন করা হয়েছে। রাস্তা থেকে ড্রেনে পানি নিষ্কাশনের ছিদ্র বা ছোট পথে অনেক সময় আবর্জনায় আ’ট’কে যায়। এতে দ্রুত পানি নিষ্কাশন হয় না। আর অ’তিবৃষ্টি হলে এমনিতে পানি নামতে সময় লাগে। ওই পথগুলো বড় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’আর চলমান ড্রেনের সংস্কার কাজ ৭০-৭৫ ভাগ শেষ হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ড্রেনের কাজ শতভাগ কাজ সম্পন্ন হলে সমস্যা স্থায়ী হবে না।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

এ বিভাগের অন্যান্য খবর

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: