সর্বশেষ আপডেট : ১৪ ঘন্টা আগে
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

টানা বর্ষণ-পাহাড়ি ঢলে সিলেট বন্যা

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। লোকালয়সহ রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। পানিতে ডুবে যাওয়ায় সিলেট সদরের সঙ্গে গোয়াইনঘাট উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরের সঙ্গে প্রত্যন্ত এলাকার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জৈন্তাপুর উপজেলায় চারদিনে টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে নিজপাট, জৈন্তাপুর ও চারিকাটা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের অনেক পরিবার। বন্যায় আটকে পড়া লোকজনকে নৌকা অথবা ভেলায় করে উঁচু স্থানে আশ্রয়ের জন্য ছুটতে দেখা গেছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলায় তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও ধানিজমি। সিলেট-গোয়াইনঘাট সড়কের বিভিন্ন অংশ পানিতে ডুবে গেছে। উপজেলার পূর্ব জাফলং, মধ্য জাফলং, পূর্ব আলীরগাঁও, পশ্চিম আলীরগাঁও, পশ্চিম জাফলং, রুস্তমপুর, ডৌবাড়ী, তোয়াকুল ইউনিয়নসহ সবকটি ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে কৃষি, মৎসসহ ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়ক। পিরিজপুর সোনার হাট সড়কে উনাই সেতুর নির্মাণকাজ চলার কারণে তৈরীকৃত বাইপাস সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় গোয়াইনঘাট সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দুটি ইউনিয়নের মানুষ।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার গ্রামীণ অনেক সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। গবাদিপশু নিয়ে দুর্ভোগে মানুষ। কিছু কিছু এলাকার আউশ ধানের বীজতলা ডুবে গেছে। তবে হাওরাঞ্চলের বোরো ধান শতভাগ কাটা হয়ে যাওয়ায় কৃষক বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছেন।

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল বশিরুল ইসলাম জানান, ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য ও গ্রাম পুলিশদের বন্যা পরিস্থিতিতে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং বলেন, কোম্পানীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি এখনো বিপত্সীমা অতিক্রম করেনি।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামিলুর রহমান জানান, বিভিন্ন স্থানে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।

এদিকে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে নদনদী ও হাওরের পানি ক্রমেই বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টার পাহাড়ি ঢলে জেলার দোয়ারাবাজার ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলাসহ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে করে খরচার হাওরের উঁচু এলাকার প্রায় এক হাজার হেক্টর বোরোধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের গজারিয়া রাবারড্যাম এলাকার দুটি সড়ক ভেঙে গেছে।

গতকাল সকাল থেকে বিকালে পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি বিপত্সীমা ছুঁই ছুঁই অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

স্থানীয়রা জানায়, জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরের প্রায় আট হাজার হেক্টর বোরো জমির ধান চাষাবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে হাওরের ভেতরের ধান কাটা শেষ। বর্তমানে উঁচু জায়গায় ধান কাটা চলছিল। কিন্তু হঠাৎ পাহাড়ি ঢলের পানিতে হাওরের এক হাজার হেক্টর ধান তলিয়ে নিয়ে গেছে। এছাড়া দুপুরে পাহাড়ি ঢলের পানিতে সুরমা ও চলতি নদীর পানি বেড়ে গজারিয়া রাবার ড্যাম এলাকার দুটি সড়কে ভেঙে ভাদেরটেক গ্রামের অসংখ্য ঘর-বাড়ি ভেসে গেছে। এছাড়া জেলার দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এদিকে শুক্রবার থেকে তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের আনোয়ারপুর বাজার এলাকার সড়ক ঢলের পানিতে তলিয়ে যাওয়া যান চলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

লালপুর এলাকার সরওয়ার হোসেন বলেন, খরচার হাওরের উঁচু এলাকার ধান পাকছে কিন্তু আমরা অনেক কৃষক কাটতে পারিনি। হঠাৎ পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতি হয়েছে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির ধান।

ভাদেরকে গ্রামের দেলওয়ার হোসেন রাহি বলেন, হঠাৎ পাহাড়ি পানিতে গজারিয়া রাবারড্যাম এলাকাসহ আমাদের দুটি সড়ক ভেঙে গেছে। ঘরবাড়িও পানির সঙ্গে চলে গেছে। আমরা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদি উর রহিম জাদিদ জানান, পাহাড়ি ঢলের পানির চাপে উপজেলার গজারিয়া রাবারড্যামের পাশের দুটি সড়ক ভেঙে গেছে। কয়েকটি পরিবারের বসতভিটা ভেঙেছে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করব। আর খরচার হাওরের কৃষকদের ধানগুলো গোলায় কাটতে কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করছে।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল জানান, সদর উপজেলা গৌরারং ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের কৃষকের ধান বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহযোগিতা করার জন্য তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব।

সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সামসুদ্দোহা বলেন, হাওরে ও নদনদীতে পানি বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মেঘালয়ে পাহাড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

এ বিভাগের অন্যান্য খবর

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: