সর্বশেষ আপডেট : ১১ ঘন্টা আগে
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

২২ বছর ধরে বিদ্যালয়ের সভাপতি, বাবা-ছে’লে মিলে নিয়োগ বাণিজ্য

ব্যক্তি নামীয় প্রতিষ্ঠানের বিধি-বিধান না মেনে বাবার নামে বিদ্যালয় স্থাপন এবং ২২ বছর ধরে নিজে সভাপতির দায়িত্বে থেকে নানা অনিয়ম-দু’র্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অ’ভিযোগ উঠেছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজে’লার দিঘীসগুনা এমআরএ নিম্নমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মির্জা আব্দুর রশিদ বকুলের বি’রুদ্ধে।

এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (রাজশাহী অঞ্চল) বরাবর লিখিত অ’ভিযোগ দায়ের করেছেন ওই বিদ্যালয়ের অ’ভিভাবক সদস্যরা। সুনির্দিষ্ট ১২টি অ’ভিযোগ উল্লেখ করে দায়ের করা অ’ভিযোগের অনুলিপি জে’লা শিক্ষা অফিসার ও উপজে’লা নির্বাহী কর্মক’র্তা এবং উপজে’লা শিক্ষা অফিসার বরাবরও প্রেরণ করা হয়েছে।

অ’ভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০০০ সালে দিঘীসগুণা গ্রামের কতিপয় বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তির প্রচেষ্টায় এমএআর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মির্জা আব্দুর রশিদ বকুল তার আস্থাভাজনদের সদস্য করে নিজে ২২ বছর ধরে সভাপতির পদ আঁকড়ে রয়েছেন। নানা অনিয়মের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠাকালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক করা হয় সভাপতি মির্জা আব্দুর রশিদ বকুলের ছে’লে মির্জা ফারুক আহমেদকে। তিনি তখন পার্শ্ববর্তী জেআইবিএম স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক পদে কর্ম’রত ছিলেন। ওই প্রতিষ্ঠানে কর্ম’রত থেকেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এ বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের হাজিরা স্বাক্ষর করে গেছেন।

ওইসময় বাবা সভাপতি ও ছে’লে প্রধান শিক্ষক ছিলেন। বাবা-ছে’লে যোগসাজশে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে আব্দুল হাকিম নামে একজনকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করেন। যার নিয়োগের সময় দেখানো হয় ১৪ জানুয়ারি ২০০৩ সাল। অথচ প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক পদে স্বাক্ষর করেছেন মির্জা ফারুক আহমেদ। এছাড়াও উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সভাপতি ও তার ছে’লে মিলে টাকার বিনিময়ে একাধিক প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও অব্যাহতি দেন। এরা হলেন মাসুম বিল্লাহ, কল্পনা খাতুন, আব্দুল মামুন ও মোখলেসুর রহমান।

অ’ভিযোগে আরও বলা হয়, সভাপতির আপন ছোট ভাই মির্জা আব্দুর রউফকে অফিস সহকারি পদে নিয়োগ দেন এবং অ’জ্ঞাত কারণে তাকে শোকজ ও অব্যাহতি দেন। পরবর্তীতে টাকার বিনিময়ে রত্না খাতুন নামে একজনকে নিয়োগ দিলেও অফিসিয়াল কাজকর্ম অব্যাহতিপ্রাপ্ত ভাই রউফকে দিয়েই করানো হচ্ছে।

সিরাজুল ইস’লাম নামে একজন বিদ্যালয়ের নামে দেড় বিঘা জমি দিয়ে দপ্তরী পদে নিয়োগ পান। অথচ জো’রালো কোন অ’ভিযোগ ছাড়াই ২০০৭ সাল তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন। পরবর্তীতে সভাপতির নিকটাত্মীয়কে টাকার বিনিময়ে দপ্তরীর চাকরি দেন। অ’ভিযোগে আরও বলা হয়েছে- স্থানীয় আজিজুল ইস’লাম, মোহাম্ম’দ আলী, আশরাফ আলী, আব্দুল জলিল, শরিফুল ইস’লাম, আরিফুল ইস’লাম, খাদেমুল ইস’লাম, ছকির উদ্দিন, খবির উদ্দিন ও ফজলার রহমান বিভিন্ন পরিমাণে মোট ৯০ শতাংশ জমি বিদ্যালয়ের নামে দান করেন। গত ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল বিদ্যালয়ের নামীয় জমির মধ্য থেকে ৪০ শতাংশ জমি অ’বৈধভাবে মির্জা ফারুক আহমেদের কাছে বিক্রি করা হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সেক্রেটারি আব্দুল হাকিম দাতা সেজে এ জমি বিক্রি করেন বলে অ’ভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে ক্যাটাগরি অনুযায়ী বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে ১০ জন শিক্ষক দিয়ে চালানো হচ্ছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে একাধিক ব্যক্তিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও অব্যাহতি দেয়া হয়। এসব ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকাও হাতিয়ে নেন সভাপতি মির্জা আব্দুর রশিদ বকুল ও তার ছে’লে মির্জা ফারুক আহমেদ।

আব্দুল মামুন নামে এক ব্যক্তি জানান, প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে আমা’র কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছিল। ২০১৬ সাল থেকে প্রায় বছর খানেক স্কুলে আমি যাতায়াতও করেছি। আমাকে কাগজে কলমে নিয়োগ না দিয়ে পরবর্তীতে ম্যানেজিং কমিটি টাকা ফেরত দেন।

সেলিম প্রধান নামে এক ব্যক্তি বলেন, তার ছোট বোন কল্পনা খাতুনকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছিলেন মির্জা আব্দুর রশিদ বকুল। ২০১৫-১৬ সালে বেশ কিছুদিন প্রধান শিক্ষক পদে চাকরিও করেছেন। পরবর্তীতে কিছু টাকা ফেরত দিয়ে চাকরি থেকে অব্যাহত দেয় ম্যানেজিং কমিটি।

সাবেক প্রধান শিক্ষক গো’লাম মোস্তফা বলেন, ওই বিদ্যালয়ে ২০১৮ সাল থেকে প্রায় দেড় বছর আমি প্রধান শিক্ষক পদে চাকরি করেছি। পরবর্তীতে আমাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

সাবেক দপ্তরী সিরাজুল ইস’লাম বলেন, আমা’র শ্বশুর ও চাচা শ্বশুড়ের দেড় বিঘা জমি রয়েছে ওই বিদ্যালয়ের নামে। বিনিময়ে আমাকে দপ্তরির চাকরি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু অ’জ্ঞাত কারণে আমাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে টাকার বিনিময়ে সভাপতির আত্মীয় ইউনুস আলীকে চাকরি দিয়েছেন।

স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিস আলী বলেন, আজিজুল ইস’লাম, মোহাম্ম’দ আলী ও আশরাফ আলীর কাছ থেকে ৪০ শতাংশ জমি কিনেছিলাম। স্কুল প্রতিষ্ঠার সময় গ্রামবাসীর অনুরোধে ওই জমি স্কুলের নামে দিয়ে দেই। অথচ স্কুলের সেই জমি বেআইনিভাবে বিক্রি করা হয়েছে সভাপতি ছে’লের কাছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ওই বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাকিম বলেন, আমাকে সা’সপেন্ড করা হয়েছে, তাই দুই বছর ধরে বিদ্যালয়ে যাই না। ২০০৩ সালে আমাকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হলেও মাঝখানে অনেককেই এ পদে নিয়োগ এবং অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের ৪০ শতাংশ জমি আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছে সভাপতি ও তার ছে’লে।

তাড়াশ উপজে’লা নির্বাহী অফিসার মো. মেজবাউল করিম জানান, দিঘীসগুনা এমএআর নিম্নমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের বিষয়ে একটি লিখিত অ’ভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। এখনও অ’ভিযোগটি পুরোপুরি দেখা হয়নি। এটি দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সিরাজগঞ্জ জে’লা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহীদুল্লাহ বলেন, অ’ভিযোগের চিঠি এখনও আমাদের হাতে আসেনি। অ’ভিযোগ হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: