সর্বশেষ আপডেট : ৩৪ মিনিট ৮ সেকেন্ড আগে
বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

আমি ভাত না বিষ খাচ্ছি, সেটা বুঝতে পারি না

কোন সন্তানের মৃত্যুই কাম্য নয় বাবা-মার। কিন্তু যখন চোখের সামনে ব্যথায় ছটফট করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো মেয়েটি তখন সেই স্মৃতি সারা জীবন রক্ত অশ্রু দেয়। করোসিন দিয়ে শরীরে অগ্নিসংযোগের পর ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে ৩ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে হরে যাওয়া নুসরাত জাহান রাফির মায়ের ক্ষেত্রেও তা।

ফেনীর সোনাগাজীর আলোচিত মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির গায়ে অগ্নিসংযোগ করে হত্যাকান্ডের এক বছর আজ। ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল রাত সাড়ে নয়টায় ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুবরণ করে নুসরাত।

২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষার আরবী প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে গেলে হল থেকে ডেকে পাশের ভবনের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় তাকে তার সহপাঠিরা গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে হত্যার চেষ্টা চালায়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়।

১০ এপ্রিল বিকালে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সোনাগাজী মোহাম্মদ ছাবের সরকারি মডেল পাইলট হাইস্কুল মাঠে নামাজে জানাজা শেষে তাকে সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সেই কবরেই চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছে রাফি। এই নির্মম হত্যাকান্ডের এক বছর উপলক্ষে তার বাড়িতে গেলে দেখা যায় সুনশান নিরবতা। নুসরাতের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তায় তিনজন পুলিশ বাড়ি পাহারায় রয়েছেন।

নুসরাতের মা শিরিন আক্তারের কাছে তার প্রিয় কন্যা রাফির শূন্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় পানি ও ভাত খেতে চেয়েছিল রাফি। তখন আমি ডাক্তারদের কাছে অনুমতি চেয়েছিলাম। বলেছিলাম, স্যার আমার মেয়ে পানি ও ভাতে খেতে চায়। ডাক্তারেরা আমাকে পানি ও ভাত দিতে নিষেধ করে বলেন, ওরা শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। তাকে পানি ও ভাত খাওয়ানো যাবে না। আমি একটা বছর যখন ভাত খেতে যাই, তখন আমার মনে চলে আসে। আমার মেয়ে ভাত ও পানি পানি বলে বলে খেয়ে যেতে পারে নাই। আমি এখন ভাত না বিষ খাচ্ছি, সেটা বুঝতে পারিনা।

আবেগ আপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, আজ একটি বছর আমি আমার মেয়ের কন্ঠে মা ডাকটি শুনতে পাইনা। রাতে ঘুম হয়না। আমার মেয়েকে মহান আল্লাহ তিন দিন বাঁচিয়ে রেখেছিলেন, তার জবান থেকে খুনিদের নাম বেরিয়ে আসার জন্য। আমার মেয়েতো সেই দিনও মরে যেতো পারতো। আমার মেয়ে যদি আজকে রোগে মারা যেত, তাহলে মনকে বুঝ দিতে পারতাম। আমার মেয়ে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আমাকে অনেক কথা বলেছে।

তিনি বলেন, তখন আমার মেয়ে আমাকে বলেছিল মা আমি মৃত্যুকে ভয় পাইনা। তারা সাদা কাগজ ধরে সিগনিচার (স্বাক্ষর) চেয়েছিল তখন আমার মেয়ে রাজি না হওয়ায় তারা হাত-পা বেধে কেরোসিন তেল ঢেলে আমার মেয়ের গায়ে দিয়াশলাই মেরে আগুন ধরিয়েছিল। তখন আমার মেয়ে যা চিৎকার দিয়েছিল কেউ শুনতে পায়নি।

নুসরাতের মা বলেন, আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি। শুনেছি উচ্চ আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আপীল করেছেন। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আসামিদের রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি।

মাননীয় আইনমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন ১০ এপ্রিল নুসরাত দিবস পালন করা হবে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের জন্য হয়তো সেটি সম্ভব হয়নি। আগামীতে হলেও যেন নুসরাত দিবস পালনের জন্য সরকার উদ্যোগ গ্রহন করেন সে দাবি জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ নিজ প্রতিষ্ঠানের তৎকালীণ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা কর্তৃক যৌন নিপিড়নের শিকার হন রাফি। ওই ঘটনায় তার মা বাদি হয়ে তৎকালীণ অধ্যক্ষ সিরাজকে একমাত্র আসামি করে মামলা করেন। একই দিন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ওই মামলা তুলে নিতে অধ্যক্ষের অনুসারী ওই মাদ্রাসার ছাত্ররা রাফি ও তার পরিবারের সদস্যদের চাপ দিতে থাকে।

২০১৯ সালের ৩ এপ্রিল খুনিরা সিরাজের সঙ্গে কারাগারে পরামর্শ করে এসে ৪ এপ্রিল মাদরাসার ছাত্রাবাসে নুসরাতকে খুন করার পরিকল্পনা নেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৬ এপ্রিল নুসরাত মাদরাসায় আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে খুনিরা পরিকল্পিতভাবে সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে নুসরাতকে হত্যার চেষ্টা চালায়।

ঘটনাস্থল থেকে নুসরাতকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর তাকে স্থানান্থর করা হয় ফেনী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় সেখান থেকে নুসরাতকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।

এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল মামলা দায়ের করেন। এদিকে ৯ এপ্রিল মারা যান নুসরাত। এই মামলায় ২৮ মে অভিযোগপত্র দাখিলের পর ২০ জুন অভিযোগ গঠন করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। পরে সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর আদালত রায়ের জন্য ২৪ অক্টোবর নির্ধারণ করেন। মামলাটিতে মাত্র ৬১ কার্যদিবসে ৮৭ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্ততর্ক গ্রহণ করা হয়।

২৪ অক্টোবর রায়ে ১৬ আসামিকে মৃত্যুদন্ড দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে একলাখ টাকা করে জরিমানা দন্ডেও দন্ডিত করেন।

আসামিরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীণ সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)। সূত্র: পরিবর্তন

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: