সর্বশেষ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

সারাদেশে সহিংসতার ভয়াবহ তাণ্ডব

ডেইলি সিলেট ডেস্ক ::

গণ আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরের চার দিনে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা; শহর থেকে গ্রামজুড়ে হামলা, ভাঙচুরের অগুণিত ঘটনা ঘটেছে। জেলায় জেলায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি, মন্দির ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় নেতাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কোনো কোনো জেলায় বিএনপি নেতাদের বাড়িঘরেও হামলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) পর্যন্ত ভাঙচুর-লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে কোথাও কোথাও।

হামলা হয়েছে থানাতেও; অস্ত্র লুট, পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি আক্রমণ করা হয়েছে পুলিশ সদস্যদের ওপর। মঙ্গল ও বুধবারেও অনেক জায়গা থেকে পুলিশের লাশ ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এই অবস্থায় আতঙ্কের ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশ কাজে ফিরতে শুরু করলেও পরিস্থিতির উন্নতি হতে সময় লাগবে বলে মনে করছেন তারা।

নানা ধরনের আতঙ্কের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অনেকে এলাকাছাড়া। অনেক হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা, মন্দির, উপাসনালয় ঘিরে রাতের বেলায় সাধারণ মানুষের পাহারা দেখা গেছে। তাতে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও যোগ দিচ্ছেন। একে আতঙ্কের মধ্যেও ভরসা হিসেবে বর্ণনা করেছেন কেউ কেউ।

টাঙ্গাইল: রোববার দুপুরে টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের বাসভবন এবং তার মালিকানাধীন পেট্রোল পাম্প ও হাইওয়ে রেঁস্তোরায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। হামলা হয়েছে শহরের আকুর টাকুর পাড়ায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলামের বাসভবনে।

টাঙ্গাইল পৌরসভা ভবনে হামলা-ভাঙচুর করার পর অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। হামলাকারীরা সদর সড়কে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়েও ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছে। একই দিন সন্ধ্যায় মির্জাপুরের গোড়াই হাইওয়ে থানায় ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। সেসসয় পুলিশের চারটি গাড়িও পুড়িয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা।

একই দিন টাঙ্গাইল পৌর এলাকার বিবেকানন্দ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে হামলা হয়। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের) তার কিছু কর্মী নিয়ে অবস্থান করছিলেন। পরে আন্দোলনকারীরা জোয়াহেরুলের ব্যক্তিগত গাড়ি ভাঙচুর করে ও আগুন দেয়। সেখানে একটি মোটরসাইকেলেও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

আন্দোলনকারীরা শহরের পূর্বআদালত পাড়ায় টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের বাসভবনে হামলা চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে। বাসার নিচে থাকা সাতটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। পরে তারা শিবনাথ পাড়া এলাকায় পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীরের বাসভবন ভাঙচুর করে।

টাঙ্গাইল শহর বাইপাস সড়কের দরুইন এলাকায় সংসদ সদস্য ছোট মনিরের মালিকানাধীন ‘দি টাঙ্গাইল মডেল ফিলিং স্টেশন’ ও ‘ধ্রুব রেস্তোরাঁয়’ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইইএনও) কার্যালয় ও অ্যাডভোকেট বার সমিতি ভবনেও ভাঙচুর করা হয়েছে।

কালিহাতীতেও আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর হয়েছে। ঘাটাইলে পুলিশ বক্সে ভাঙচুর হয়েছে।

সোমবার শহরের আকুরটাকুর পাড়া জেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আনন্দ মোহন দে’র বাসায় হামলা চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে। একই এলাকার তালতলায় শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শিশির দাসের বাসায়ও একই ঘটনা ঘটে।

হামলা হয়েছে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন খান তোফার বাসায়। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য সৈকত চন্দ ও সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রানা ভট্টের বাসাও বাদ যায়নি।

নাটোর: সোমবার নাটোর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাসভবন ‘জান্নাতি প্যালেস’ এবং তার ছোট ভাইয়ের বাড়িতে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ লোকজন। চলে ভাঙচুর ও লুটপাট। পরে ওই বাসভবন থেকে চারটি অগ্নিদগ্ধ মরদেহ উদ্ধার হয়।

একই দিন সিংড়া উপজেলায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের বাসায় ভাঙচুর করে মালামাল লুট করা হয়। বাসার সামনে একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। শহরে পলকের ছবি সম্বলিত সাইনবোর্ডও ভেঙে ফেলা হয়েছে।

সিংড়া পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌসের বাসায়ও ভাঙচুর হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলামের বাসা, অপর যুগ্ম সম্পাদক রুহুল আমিন, পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক তহিদুল ইসলামের বাসা-কার্যালয়ও ভাঙচুরের হাত থেকে রেহাই পায়নি।

নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি এবং নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যা ও রাতে লালপুরে পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতির বাড়িসহ ছয়টি বাড়ি ও একটি মন্দিরে ভাঙচুর ও লুটপাট করা বলে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান।

মঙ্গলবার ও বুধবার রাতে বড়াইগ্রামে পৌরসভার কাঁচাবাজারসহ দশটি দোকান ভেঙে ফেলা হয়। বৃহস্পতিবার বিকালে শহরের হয়বতপুর (গাজীর বিল) নাটোর-বনপাড়া মহাসড়কের পাশে ‘সামির চয়েসের’ ছয়টি পুড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী বাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, পুড়ে যাওয়া বাসগুলোর মালিক নাটোরের সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের বড় ভাই সিরাজ আহমেদের। একইদিন গুরুদাসপুর উপজেলায় চাঁচকৈড়ের গিয়াসের মোড় এলাকায় আনন্দ সিনেপ্লেক্সে দুই ঘণ্টা ধরে চলে ভাঙচুর ও লুটপাট।

গাজীপুর: ছাত্র-জনতার রাজধানীর রাজপথ দখলের পর ৫ অগাস্ট দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার খবরে সেদিনই গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মো. কামরুল আহসান সরকার রাসেলের নগরের ভোগড়া এলাকায় বাড়ি, গাড়ি ও ব্যক্তিগত অফিসে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

একই সময় ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয় নগরীর ছয়দানা এলাকায় গাজীপুর সিটির মেয়র জায়দা খাতুন বসত বাড়ি ও গাড়িতে। বাড়ির মূল্যবান মালামালসহ গবাদিপশুও লুটপাট হয় এ সময়।

বাসন থানার ভেতরে ও বাইরে ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়েছে। হামলা হয়েছে সিটি করপোরেশনের টঙ্গী আঞ্চলিক কার্যালয় এবং গাজীপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সাংসদ ইকবাল হোসেন সবুজের বাসভবনে।

গাজীপুর জেলা পুলিশ লাইন্সের সামনে বঙ্গন্ধুসহ চার নেতার ভাস্কর্য, গাজীপুর শহরের কালী মন্দিরের পাশে থাকা মুক্তিযুদ্ধে একাত্তর সালের ১৯ মার্চ স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে। শহরে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও এর পাশে থাকা বেশ কিছু দোকানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে মালপত্র লুট করে নিয়ে গেছে। শ্রীপুরে বিজিবির তিনটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

শ্রীপুর উপজেলার মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি শেখ মাহবুবুর রহমান বলেন, দুটি বাস মাওনা হাইওয়ে থানা পুলিশ জব্দ করে ফ্লাইওভারের দক্ষিণ পাশে একটি অস্থায়ী ফাঁড়ির সামনে মহাসড়কের ওপর রেখেছিল। ৪ অগাস্ট রোববার বাস দুটিতে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা।

এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা শ্রীপুরের মাওনা এলাকার পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তারা দুটি পুলিশের গাড়িতেও আগুন দেয়।

একইদিন সন্ধ্যায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খোরশেদ আলম সরকারের নাওজোরের কার্যালয়ের তালা ভেঙে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। সেখানে আলমারিতে থাকা নগদ অর্থসহ বিভিন্ন মালামাল লুট হয়েছে।

রক্ষা পায়নি শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কও। সেখানে ব্যাপক ভাঙচুরের পাশাপাশি পার্ক থেকে বিদেশি পাখি ম্যাকাউ, ময়ূর ও টিয়া পাখি লুট করা হয়েছে। অনেক খাঁচা ভেঙে পাখি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পার্কে ঘোরার জন্য দর্শনার্থীদের ব্যবহৃত মিনিবাসও ভেঙে ফেলা হয়েছে। পাকের্র দুটি রেস্টুরেন্ট এবং সব সাইনবোর্ড ও ব্যানার ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আহম্মেদ নিয়ামুর রহমান বলেন, “পুরো পার্কে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। তবে কী পরিমাণ পাখি লুট হয়েছে, তা রিপোর্ট পাওয়ার পর বিস্তারিত বলতে পারব।”

পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার পুলিশ বক্স। পাশে সড়ক ও জনপথের কার্যালয়ের ভেতরে চারটি গাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের স্টেশনগুলোয় রাখা এসকেলেটরগুলোর আংশিক পুড়ে গেছে হামলাকারীদের দেওয়া আগুনে। কোনাবাড়ী এলাকায়ও পুলিশের একটি বক্স পোড়ানো হয়েছে।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৪ বা টঙ্গী কার্যালয়ের সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ও যন্ত্রবিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তার কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর হয়েছে। সেখানে অগ্নিসংযোগও করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের ১৯টি গাড়িও পুড়েছে হামলাকারীদের আগুনে। ভাঙচুর করা হয়েছে ১৩টি যানবাহন। সিটির জোন-১ এর ভবনের দরজা, জানালা ভাঙচুর এবং নিচতলার তিনটি কক্ষ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আঞ্চলিক কার্যালয় জোন-৩ এর ভবনের দরজা-জানালাও ভাঙচুর হয়েছে।

টঙ্গীতে ডেসকোর কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে সাতটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, উপ-কেন্দ্রের অফিস ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর হয়েছে। হামলাকারীরা টঙ্গীর বেক্সিমকো ফার্মার ভেতরের চারটি গাড়ি পুড়িয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গাজীপুরা, বোর্ড বাজার, গাছা, কোনাবাড়ি ও চান্দনা চৌরাস্তা পাঁচটি পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে।

বুধবার নগরীর কোনাবাড়ি এলাকায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা মো. সেলিমের (কিং সেলিম) ঝুট গুদামে অগ্নিসংযোগ করা হয়। দুইদিন চেষ্টার পর আগুন নেভানো হয়েছে।

মাদারীপুর: সোমবার দুপুরে জেলা শহরে মাদারীপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শাজাহান খানের বাসভবনে ভাঙচুর, লুটপাট করে আগুন দেওয়া হয়। এসময় তার ভাইদের বাসভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও একইভাবে আক্রান্ত হয়।আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা-৮ ও মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের শহরের ইটের পুল এলাকার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে জেলা শহরের বিভিন্ন স্বাধীনতার স্থাপনাগুলো।

ভেঙে ফেলা হয়েছে শিবচর উপজেলার সরকারি ও বেসরকারি নানা স্থাপনা; স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। লুটপাট ও ভাঙচুর হয়েছে শিবচর উপজেলায় যমুনা টিভির সাংবাদিক প্রদ্যুত কুমার সরকার ও একাত্তর টিভির সাংবাদিক একেএম নাসিরুল হকের বাড়িতে।

মঙ্গলবার মাদারীপুর শহরের লেকেরপাড়ে ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়। বৃহস্পতিবার মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার নবগ্রামের নতুন করে নির্মাণাধীন কেন্দ্রীয় মন্দির প্রাঙ্গণে চেয়ার ভাঙচুর করা হয়েছে।

সরকার পতনের আগেও মাদারীপুরে পুলিশ ফাঁড়ি ও মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তনসহ অনেক প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

নীলফামারী: সদর উপজেলায় সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলা প্রশাসক কার্যালয়, জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়, প্রধান ডাক, শহরের ডিসির মোড়, জেলা পরিষদ চত্বর, জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় চত্বর, সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে হামলা ভাঙচুর হয়েছ। ভেঙে ফেলা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল।

একই সময় উপজেলা সড়কে নীলফামারী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের বাসভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট করে ১০টি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়।

জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও নীলফামারী পৌরসভার মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুজার রহমানের বাসভবন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল আমিন স্বপনের বাসভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্কাই ভিউ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনিরুল হাসান শাহ আপেল ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ সরকারের বাসাবাড়িতে ভাঙচুর হয়েছে।

ভাঙচুর ও লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগ করা হয় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মমতাজুল হক এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ রহমানের বাসভবন। জেলা সদরের লক্ষ্মীচাপ ও গোড়গ্রাম ইউনিয়নে হিন্দুদের সাতটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুট করে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোখছেদুল মোমিনের বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে। এছাড়া পৌর মেয়র ও মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রাফিকা আকতার জাহান বেবী, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদ মোজাম্মেল হকসহ একাধিক নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট হয়েছে। ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে উপজেলা পরিষদ চত্বরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল।

ডোমার উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রতিটি দলীয় কার্যালয় এবং উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান চত্বরে থাকা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোয়ার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদ আহমেদ শান্তু, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তোফায়ের হোসেন, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ময়নুল হক, জেলা পরিষদ সদস্য মঞ্জুর আলম ডনের বাসভবন ভাঙচুরের শিকার হয়েছে।

ডেমার উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক গনেশ কুমার আগরওয়ালার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট এবং সোনারায় ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের বাড়ি ভাঙচুরসহ গোলায়ে থাকা বেশ কয়েকটি গরু লুট করা হয়েছে।

ডিমলা উপজেলায় নীলফামারী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকারের বাসভবন, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, পেট্টোল পাম্পে ভাঙচুর-লুটপাট করে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

সংসদ সদস্যের তিন ভাতিজা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফেরদৌস পারভেজ, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু সায়েম সরকার, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ সরকারে বাসভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সংসদ সদস্যের চাচাতো ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক সরকার মিন্টুর বাসভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়সহ প্রত্যেকটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য সাদ্দাম হোসেন পাভেলের বাসভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পেট্টোল পাম্প, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহেদ বাহাদুর, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বাবুর বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরসহ মালামাল লুটপাট করে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এই উপজেলায় সরকারি স্থাপনা ভাঙচুর না করলেও জলঢাকা শহরজুড়ে থানা কর্তৃপক্ষের সিসি ক্যামেরাগুলো ভাঙচুর করা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ উপজেলায় উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কার্যালয়, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, উপজেলা পরিষদের বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, উপজেলা পরিষদে অবস্থিত দুইটি হলরুম, স্কাউট ভবন ভাঙচুর করা হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, ছাত্রলীগের কার্যলয়, ছাত্রলীগ সভাপতির পরিচালিত সৃস্টি কোচিং সেন্টার ও উপজেলা যুবলীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

লালমনিরহাট: সোমবার লালমনিরহাট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেনের হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা এলাকার বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করে অগ্নিসংযোগ করেছে হামলাকারীরা।

এছাড়াও তার ছেলে মাহমুদুল হাসান সোহাগ বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে একটি পেট্রোল পাম্পে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

ভাঙচুরের হাত থেকে রেহাই পায়নি হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি লিয়াকত হোসেন বাচ্চুর বাড়ি। উপজেলার কয়েকজন হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে লুটপাট চালানোর পর থেকে অনেকেই বাড়ি ছেড়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

কালিগঞ্জ উপজেলায় লালমনিরহাট-২ (কালিগঞ্জ- আদিতমারী) আসনের সাবেক সংসদ ও সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুদ্ধ লোকজন। উপজেলা পরিষদ ভবনে ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনেও হামলা হয়েছে।

লালমনিরহাট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান সদরের বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে। জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী সাবেক সাংসদ সফুরা বেগম রুমির বাসভবনে ব্যাপক ভাঙচুর চলেছে।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুমন খাঁনের কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিশাল এক অট্রালিকায় চালানো হয় ব্যাপক লুটপাট। দেওয়া হয় আগুন। সেখান থেকে পাওয়া যায় ছয়টি পোড়া মৃতদেহ।

বরগুনা: সোমবার জেলা প্রশাসন ভবন সংলগ্ন পুরাতন পাবলিক লাইব্রেরি চত্বরে ‘নৌকা জাদুঘর’ আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘরেও হামলা হয় এদিন।

সেখানে সংরক্ষণ করে রাখা ৫২ থেকে ৭১-এর সকল তথ্য, ছবিসহ মুক্তিযুদ্ধকালীন দলিল, মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত অস্ত্র, তৈজষপত্র, পোষাক, বিভিন্ন ধরনের মুদ্রা, বই এবং সাউন্ড সিস্টেমসহ বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়েছে। হয়েছে লুটপাটও।

বরগুনা জেলা প্রশাসক ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি ভেঙে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছে। আমতলী পৌরসভার সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষনের ভাস্কর্যটি গুঁড়িয়ে ফেলা হয়েছে। শহরের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্সের ভেতরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিফলক ভেঙে ফেলেছে বিক্ষুদ্ধরা।

জেলা শহরের শেরে-ই সড়কে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর, সদরে বরগুনা-১ সাবেক সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ এবং পাথরঘাটা পৌরসভায় বরগুনা-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরার বাসায় হামলা হয়েছে। এছাড়া ২৯টি হিন্দু বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে।

জয়পুরহাট: রোববার জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সোমবার কালাই উপজেলার দুজন ইউপি চেয়ারম্যানসহ অন্তত ১১ জন নেতাকর্মীর বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট হয়েছে।

সদর উপজেলায় সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান মিঠুর ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, জেলা যুবলীগ আহ্বায়কের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, পৌর মেয়রের বাড়ি, চারজন ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটের ঘটনা ঘটে।

ক্ষেতলাল উপজেলার অন্তত ৯ জন, আক্কেলপুর উপজেলার ৮ জন ও পাঁচবিবি উপজেলার কমপক্ষে ১৯ জন নেতাকর্মীর বাড়িও হামলা-ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য আবু সাঈদের বাসভবনেও ভাঙচুর হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

এ বিভাগের অন্যান্য খবর

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: