সর্বশেষ আপডেট : ১২ ঘন্টা আগে
বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৭ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

জেলেনস্কিকে ক্ষমতা থেকে সরাচ্ছে আমেরিকা ও পশ্চিমা জোট

ডেইলি সিলেট ডেস্ক ::

আগামী বছরের মার্চ মাসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে এবং সেই নির্বাচনের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। আমেরিকার কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (সিআইএ) ও যুক্তরাজ্যের তদন্ত সংস্থা এমআই–৬ ইতিমধ্যেই জেলেনস্কিকে সরিয়ে ফেলার মঞ্চ তৈরি করে ফেলেছে। এ বিষয়ে একটি ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে পশ্চিমারা। যুক্তরাজ্যের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে একমত হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

তবে জেলেনস্কি যদি এতে রাজি না হন, তাহলে ২০১৪ সালে ‘মায়দান অভ্যুত্থানের’ মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল জেলেনস্কির কপালেও সেটি জুটবে। ইউক্রেনের ক্ষমতার পালাবদলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নতুন কিছু নয়। ২০১৪ যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের বর্তমান আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড এর আগেও ইউক্রেনে অভ্যুত্থানের পেছনে কলকাঠি নেড়েছিলেন। ওই সময়ে কিয়েভে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জিওফ্রে পাইট ও নুল্যান্ড এর ফাঁস হওয়া ফোনকল থেকে এ তথ্য জানা যায়। নুল্যান্ড এবং পাইটের ফাঁস হওয়া ফোনালাপটি বেশ কৌতুহল উদ্দীপক। কারণ ওই সময়ে তারা ইউক্রেনের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পেরেছিলেন। আর এ কাজে তাঁদের যারা সহযোগিতা করতে পারেন, তাদের তালিকায় ছিল জো বাইডেন (বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট) ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের নাম।

আমেরিকার সেই তিন কুশীলব- বাইডেন, সুলিভান ও নুল্যান্ড আবারও ইউক্রেনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে একজোট হয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যাঁরাই জেলেনস্কিকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন, তারাই কেন এখন জেলেনস্কিকে সরাতে চাইছেন?

রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে সাবধানী পরিকল্পনা সাজিয়েছিল, জেলেনস্কি তা অনুসরণ করেননি। এমনকি নিজের জেনারেলদেরও কথা না শুনে নিজের খেয়াল খুশিমতো বাখমুত শহর পুনর্দখলের জন্য সেনা পাঠিয়েছিলেন। রুশ সেনাবাহিনী ও প্রিগোজিনের ওয়াগনার বাহিনী এই শহরটি দখল করে রেখেছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা ছিল, বড় পরিসরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সম্মুখসমরে অংশ নেওয়ার জন্য ইউক্রেনের সেরা সেনা ইউনিটগুলোতে ছড়িয়ে দেওয়া। কিন্তু জেলেনস্কি সেই পরিকল্পনাও মানেননি। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। ওয়াশিংটনের লক্ষ্য ছিল পাল্টা আক্রমণের মাধ্যমে রাশিয়াকে একটি চুক্তিতে আনতে বাধ্য করা। কিন্তু জেলেনস্কির গোয়ার্তুমির কারণে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।

মনে রাখতে হবে, বিস্তর গবেষণা করে ও দীর্ঘ সময় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এই পাল্টা আক্রমণের পরিকল্পনা সাজিয়েছিল। সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়াতে স্বাভাবিকভাবেই জেলেনস্কির ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছে ওয়াশিংটন। প্রিগোশিনের ওয়াগনার গ্রুপ যখন রাশিয়ায় বিদ্রোহ শুরু করেছিল, তখনই পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছিল ইউক্রেন বাহিনী। তখন প্রিগোশিনের সঙ্গে ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দাপ্রধান কিরিলো বুদানভের কথাও হয়েছিল। এ ব্যাপারে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ রয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে, কিরিলোর সঙ্গে প্রিগোশিনের আলাপ হয়েছিল আফ্রিকায়।

প্রিগোশিন যদি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারতেন তাহলে হয়তো তাৎক্ষণিকভাবে ইউক্রেনের সঙ্গে চুক্তি করে ফেলতেন। তবে কোন শর্তে চুক্তি করতেন তা অবশ্য জানা যায়নি। আবার এমনটাও হয়তো হতে পারত যে, বিশেষ সামরিক অভিযান থেকে সরে আসার বিনিময়ে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার হাতে পুরোপুরি দিয়ে দিতে চেয়েছিল ইউক্রেন। এর বিনিময়ে রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে পারত ওয়াশিংটন। কিন্তু প্রিগোশিনের অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের এসব স্বপ্নের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে ইউক্রেনে বাইডেনের ছেলে হান্টারের কর্মকাণ্ড নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই কংগ্রেসের রিপাবলিকানরা তদন্ত করছে। তারা বলছে, বাইডেন নিজেই সেখানে তার ছেলের ব্যবসা রক্ষায় হস্তক্ষেপ করেছেন। যদিও এ অভিযোগের পেছনে এখনো কার্যকর প্রমাণ মেলেনি। তবে এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ইউক্রেনের স্বাধীনতা বেশ সীমিত। যুক্তরাষ্ট্র শুধু ইউক্রেনকে অস্ত্রশস্ত্র দিয়েই সহযোগিতা করে না, ইউক্রেনের সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের পেনশনের জন্যও অর্থ দিয়ে থাকে। সুতরাং ইউক্রেনের ওপর আমেরিকার প্রভাব কতটা সুদূর প্রসারী, তা সহজেই অনুমেয়।

এখন ইউক্রেন দাবি করছে, পশ্চিমাদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র না পাওয়ায় তাদের পাল্টা আক্রমণ অভিযান মুখ থুবড়ে পড়েছে। জেলেনস্কির একটি বড় সমস্যা হচ্ছে, তিনি মনে মনে বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন যে, ইউক্রেন এই যুদ্ধে হারতে চলেছে। এই হীনমন্যতার কারণে ব্রিটিশ ও আমেরিকান কর্তাদের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।

এ রকম পরিস্থিতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সবচেয়ে ভালো সমাধান হচ্ছে, রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের সমঝোতা করে ফেলা। কিন্তু রাশিয়া তো আগেই বলে দিয়েছে, তারা কোনো যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হবে না। রুশ বাহিনী তখনই যুদ্ধের মাঠ ত্যাগ করবে, যখন ইউক্রেন ন্যাটোর কাছ থেকে পুরোপুরি সরে যাবে।

এদিকে জেলেনস্কিও বলেছেন, তিনি কোনোভাবেই রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করতে রাজি নয়। এ ক্ষেত্রে আমেরিকার কাছে বিকল্প কী? জেলেনস্কিকে সরিয়ে দেওয়া। কিন্তু জেলেনস্কি কি চুপচাপ সরে যাওয়ার পাত্র? মোটেও নন। সে ক্ষেত্রে আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য মিলে কীভাবে জেলেনস্কিকে ক্ষমতা থেকে সরান, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

স্টিফেন ব্রায়েন যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সাবেক সদস্য এবং বর্তমানে সেন্টার ফর সিকিউরিটি পলিসি অ্যান্ড দ্য ইয়র্কটাউন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: