সর্বশেষ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

গরম মিষ্টি খেতে ঝিনাইদহের শৈলকূপায়

ডেইলি সিলেট ডেস্ক ::

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ঘুরতে বেরিয়েছি। এরই মধ্যে গিয়েছি নাটোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ। কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই ঝিনাইদহ। সেখানকার শৈলকূপার ত্রিবেণী গ্রামের গরম মিষ্টি নাকি খুবই বিখ্যাত! মূলত সেই মিষ্টি খাওয়ার জন্যই ঝিনাইদহে যাওয়া।

মাগরিবের আজান কানে বাজছে। এরই মধ্যে পৌঁছে গেলাম ঝিনাইদহের শেখপাড়া বাজারে। বাজারে নেমে এক দোকানিকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘মামা ত্রিবেণীর গরম মিষ্টি কি এখন গেলে পাওয়া যাবে?’ তিনি বললেন, ‘যদিও সন্ধ্যা হয়েছে, দেরি হয়ে গেছে। তাও পাবেন, সমস্যা নেই।’

মামার কথা শুনে একমুহূর্ত দেরি না করে তাড়াতাড়ি একটা অটোভ্যান ঠিক করলাম ২০ টাকায়। ভ্যানে বসে আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে এগোচ্ছি ত্রিবেণী বাজারের দিকে। পূর্ণিমার চাঁদের আলো এসে পড়েছে মুখে। এছাড়া আশপাশে আর কোনো আলো দেখতে পেলাম না।

অটোভ্যানের সামনের লাইট আর চাঁদের আলোই একমাত্র ভরসা। চারদিকে পিনপতন নীরবতা। প্রায় ২০ মিনিট ভ্যান চলার পর সামনে বেশ আলো দেখতে পেলাম। সেখানে যেতেই ভ্যানচালক মামা বললেন, ‘এটাই ত্রিবেণী বাজার।’

প্রায় রাত ৯টায় পৌঁছে গেলাম বাজারে। বাজারে এখনো ছোট কয়েকটি চায়ের দোকান ও মুদি দোকান খোলা। সাধারণত রাত ৯টার পর গ্রামের বাজারের দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তবে ত্রিবেণী বাজারের দোকান খোলা দেখে আশ্বস্ত হলাম।

ত্রিবেণীর আরেকটি খাবার বিখ্যাত। তা হলো ‘এক টাকার সিঙারা’। তবে বেশি রাত হওয়ায় তা আর পাওয়া গেলো না। সিঙারা নাকি দুপুর ১২ থেকে ৪টা পর্যন্ত পাওয়া যায়।

বাজারের এক দোকানিকে গরম মিষ্টির কথা বললে তিনি পথ চিনিয়ে দিলেন। বাজার থেকে হাতের ডানে সোজা মাটির এক রাস্তা নেমে গেছে। সেই রাস্তা ধরে যেতে লাগলাম।

রাস্তা ঘুটঘুটে অন্ধকার। একটু হাঁটতেই দেখতে পেলাম বড় একটা বাঁশঝাড়। তার ঠিক পেছনেই একটি মন্দির ও তার উঠানেই দেখি মিষ্টি বানাতে ব্যস্ত এক নারী।

নারীর বয়স কতই বা হবে ৩০-৩৫! মুখের গড়ন গোলগাল। উজ্জ্বল ফর্সা। মাথায় লেপ্টে দিয়েছেন সিঁদুর। কিছুটা লাজুক ভঙ্গিতে মিষ্টি বানাচ্ছেন তিনি, আর তাকে সাহায্য করছেন একজন পুরুষ।

আর সেই মিষ্টি বানানোর ঝুপড়ি ঘরের সামনে চেয়ারে বসে কয়েকজন ছেলেমেয়ে মিষ্টি খাচ্ছেন। আমি মন্দির ঘুরে দেখতেই তাদের খাওয়া শেষ হলো। তারা উঠে চলে গেলো।

ওরা চলে যেতেই মিষ্টি কণ্ঠে আওয়াজ দিলেন মিষ্টি বানাতে ব্যস্ত ওই নারী ‘দাদা চেয়ারে বসেন, কি মিষ্টি খাবেন বলেন?’ বললাম মিষ্টি খেতেই তো এসেছি, তাও আবার সদ্য হাঁড়ি থেকে নামানো গরম মিষ্টি।

তিনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন ও তার ছেলেকে ডেকে বললেন, ‘দাদাকে মাত্র নামানো ওই হাঁড়ি থেকে দুইটা বড় কালোজাম মিষ্টি দে তো!’ তার ছেলে একটি হাফ-পিরিচে করে চামচসহ মিষ্টি আনলেন।

মিষ্টি খেতে খেতে দিদির সঙ্গে জুড়ে দিলাম গল্প। বললাম এতো রাতেও এই ছেলেমেয়েরা মিষ্টি খেতে এসেছে? তিনি বললেন, ‘প্রতিদিনই এরকম অনেকে আসেন। এরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।’

‘এখানে বেশিরভাগই আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খুব একটা দূরের পথ নয়, মাত্র ৭-৮ কিলো পথ। তাই তো তারা এই গরম মিষ্টির স্বাদ নিতে চলে আসে সবাই।’

দিদির নাম অঞ্জনা রানী কুণ্ড। স্বামী রামপ্রসাদ কুণ্ড। তিনি দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে এই মিষ্টি তৈরি করছেন। বিয়ে হওয়ার পরে তিনি দেখতেন তার শ্বশুর মিষ্টি বানাতেন ও তা স্থানীয় হাটে বিক্রি করতেন। তার শ্বশুর বৃদ্ধ হয়ে গেলে হাল ধরেন স্বামী।

সেই হিসাব করলে প্রায় ৭০ বছর ধরে মিষ্টি বানায় এই পরিবার। এই মিষ্টি বিক্রি করেই তিনি তার তিন সন্তানকে পড়ালেখা করিয়েছেন। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এক ছেলে এখন দশম শ্রেণিতে পড়ে।

দিদি বলেন, ‘এটাই আমার বাড়ি। বাড়িতে বসেই আমি মিষ্টি বানাই। আর স্বামী তা বাজারে বিক্রি করেন। এখানকার বানানো প্রায় সব মিষ্টিই চলে যায় শৈলকূপার স্থানীয় সব মিষ্টির দোকানে।’

‘শেখপাড়া বাজারে আমাদেরও একটা মিষ্টির দোকান আছে। সেই দোকান সামলায় আমার স্বামী। আমাদের তো আর জমিজমা নেই। এই মিষ্টির ব্যবসায় শেষ অবলম্বন।’

দিদির সঙ্গে কথা বলে আরও জানতে পারলাম, এখানে তারা মিষ্টি বানালেও সবাই যে এখানেই মিষ্টি খেতে আসেন তা ঠিক নয়। এখানে মূলত শিক্ষার্থী ও ভ্রমণপিপাসুরা আসেন। যারা গরম মিষ্টি পছন্দ করেন। এছাড়া যারা বেশি পরিমাণ মিষ্টি কেনেন তারা সরাসরি অর্ডার দিয়ে এখান থেকেই সংগ্রহ করেন।

এখানকার বানানো সব মিষ্টি দিনেরটা দিনেই বিক্রি হয়। চাহিদামাফিক বানানোর কারণে অতিরিক্ত মিষ্টি থাকে না, ফলে মিষ্টি বাসি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মাঝে মধ্যেই মিষ্টির চাহিদা অনুযায়ী জোগান দিতে পারে না। তখন পরদিন আবার মিষ্টি সংগ্রহ করতে হয়।

তারা দিনে প্রায় এক থেকে দেড় মণ মিষ্টি তৈরি করে ও তা ২০০-২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। সে হিসাবে দিনে তাদের বিক্রি দাঁড়ায় ১০-১২ হাজার টাকার মতো।

প্রায় ১০-১২ রকমের মিষ্টি তৈরি করেন তারা। এর মধ্যে রসগোলা, চমচম, কালোজাম, সাদাজাম, পদ্মা, পাখিসাঁচ, দানাদার, কদম, রাজভোগ, খেজুর, রসমালাই উল্লেখযোগ্য।

দিদি বলেন, ‘আগে দুধ সংগ্রহ করতাম ২৫ টাকায়। এখন তা সংগ্রহ করতে হয় ৫০ টাকায়। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেলেও আমরা মিষ্টির দাম বাড়াইনি। এর গুণগতমানও ধরে রেখেছি। এজন্য আমাদের চাহিদা এখনো ব্যাপক। আশা করি এই মিষ্টির সাথেই কেটে যাবে আমার জীবন।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: