সর্বশেষ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

চা শ্রমিকদের ‘মুল্লুকে চলো’ দিবস আজ

ডেইলি সিলেট ডেস্ক ::

২০ মে, এ দিনটিকে চা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা পালন করেন চা শ্রমিক দিবস হিসেবে। শতবর্ষ পূর্বে চা শ্রমিকদের স্বভূমিতে ফিরে যাওয়ার আন্দোলনই ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয় ‘মুল্লুক চলো’ আন্দোলন হিসেবে।

উন্নত জীবনযাপনের আশা নিয়ে জন্মমাটি ছেড়ে চা বাগানে কাজ করতে আসেন একদল মানুষ। কিন্তু কাজে এসে তাদের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে যায়। স্বপ্নভঙ্গের জ্বালা নিয়ে তারা ফিরতে চান নিজের দেশে। ডাক দেওয়া হয় ‘মুল্লুক চলো’ আন্দোলনের। ১৯২১ সালের ২০ মে এক রক্তাক্ত পরিণতিতে চা শ্রমিকদের মুল্লুকে ফেরার স্বপ্নও শেষ হয়ে যায়। এ দিনটিকে এখনও চা শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে।

তবে এ সকল চা শ্রমিকদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেনি আজও। উন্নয়নের স্বর্ণযুগেও নানামুখী অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে চা শ্রমিকদের এ বিশাল জনগোষ্ঠী।

নানা কর্মসূচির মধ্যে দিনটি পালন করবে চা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা। সারাদেশে ১৬৬ চা বাগান রয়েছে। এরমধ্যে সিলেট বিভাগে ১৩৫ চা বাগান। শুধুমাত্র মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে দেশের অর্ধেকেরও বেশি ৯২ টি চা বাগান।

বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, ১৯২১ সালের ২০ মে সিলেট অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার চা শ্রমিক সিলেট থেকে পায়ে হেটে চাঁদপুর মেঘনা স্টিমার ঘাটে পৌঁছান। তারা জাহাজে চড়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে চাইলে ব্রিটিশ গোর্খা বাহিনীর সৈনিকরা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে চা শ্রমিকদের হত্যা করে মেঘনা নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেয়। যারা পালিয়ে এসেছিলেন তাদেরকেও আন্দোলন করার অপরাধে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। চা শ্রমিক পায়নি ফিরে স্বভূমির অধিকার। এরপর থেকেই প্রতি বছর ২০ মে নিজেরাই চা শ্রমিক দিবস হিসেবে দিনটি পালন করে আসছেন নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত শোষণ বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার চা শ্রমিকরা।

জানা যায়, ১৮৫৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে সিলেটের মালিনীছড়া চা বাগানে চা চাষ শুরু করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। সে সময় চা বাগান তৈরির জন্য ভারতের আসাম, উড়িষ্যা, বিহার, উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকদের একই ভুখন্ডের জায়গা স্থানান্তর করা হয়। ‘গাছ হিলেগা, রুপিয়া মিলেগা’ (গাছ নড়লে টাকা মিলবে) এমন প্রলোভনে শ্রমিকদের নিয়ে এলেও তাদের যে প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে সেই ভুল বুঝতে বেশি সময় লাগেনি তাদের। বিশাল পাহাড় পরিষ্কার করে চা বাগান করতে গিয়ে হিংস্র পশুর কবলে পড়ে হিসেবহীন অনেক চা শ্রমিকের জীবন অকালে ঝড়েছে। এর মধ্যে অব্যাহত ব্রিটিশদের অত্যাচার তো ছিলই। নির্যাতনের প্রতিবাদে তৎকালীন চা শ্রমিক নেতা পন্ডিত গঙ্গাচরণ দীক্ষিত ও পন্ডিত দেওসরন ‘মুল্লুকে চল’ ( মাতৃভমিতে ফিরে যাবার) আন্দোলনের ডাক দেন।

চা শ্রমিক ইউনিয়নের সূত্রমতে, বর্তমানে সারাদেশে ১৬৬ চা বাগানে চা জনগোষ্ঠী রয়েছেন ৫ লক্ষাধিক। এর মধ্যে শ্রমিক রয়েছেন ১ লক্ষ ৪০ হাজারের উপরে। এছাড়া সিলেট বিভাগের তিনটি জেলায় ১৩৫টি চা বাগান রয়েছেন। যেখানে প্রায় ৪৭ হাজার নিবন্ধিত শ্রমিক এবং প্রায় ১৬ হাজার অনিবন্ধিত শ্রমিক কাজ করছেন। চা শ্রমিকদের ৬৪ শতাংশই নারী। একজন চা শ্রমিকের সাপ্তাহিক বেতন ১১৯০ টাকা।

চা শ্রমিকরা আক্ষেপ করে জানান, চা শিল্পের উন্নতি হলেও বদলাচ্ছেনা চা শ্রমিকদের জীবন। সারাদিন কাজের পর একজন চা শ্রমিকের আয় হয় ১৭০ টাকা। নেই নিজস্ব জাতিগত পরিচয়, লেখাপড়ার সুযোগ নেই, নেই স্যানিটেশনও, রয়েছে চিকিৎসার অভাব।

দেওরাছড়া চা বাগানের চা শ্রমিক বৃটিশ ঘাটুয়াল বলেন, ‘৫ থেকে ৬ সদস্যের অনেক পরিবার আছে যেখানে ১ জন কাজ পাচ্ছে বাকিরা এই ১৭০ টাকার উপর নির্ভর করেই দিন চালাচ্ছে। ছোট ভাঙাচোরা ঘরে থাকতে হয় গবাদি পশুসহ সন্তানদের নিয়ে। যা অমানবিক।’

ভাড়াউড়া চা বাগানের চা শ্রমিক অনিতা কুর্মি বলেন, ‘বাগান কর্তৃপক্ষের ঘর মেরামত করে দেয়ার কথা থাকলেও তা হয় না বছরের পর বছর। তাদের নেই নিজস্ব কোনো জায়গা। বাগানে কাজ না করলে থাকার জায়গাও হারাতে হবে।’

চা জনগোষ্ঠীদের নিয়ে কাজ করেন বিশ্বজিত নন্দী। তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের চুক্তি অনুসারে একজন শ্রমিককে অবসর ভাতা হিসেবে সে যত বছর কাজ করেছে তার মোট বছরের গড়ে দেড় মাসের বেতন হিসেবে পেনশন দেয়ার কথা। কিন্তু সেটা শুধু কাগজে কলমে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, চা জনগোষ্ঠীর সদস্য সন্তোষ রবিদাশ বলেন, ‘আমরা আমাদের অধিকারের জন্য লড়ছি। আজ ১০০ বছর পরেও মনে হচ্ছে আমরা আগের চেয়ে আরও বঞ্চিত হচ্ছি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে, আমাদের নেই কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, নেই কোনো চাকুরীতে কোটা। চা শ্রমিকের সন্তান হিসাবে আমরা এখনো অনেকভাবে সমতলের মেইনস্ট্রিম জনগোষ্ঠীর কাছে অপদস্ত হতে হই।’

চা বাগানের এই জনগোষ্ঠী এখনও ব্রিটিশ সামন্তবাদ আর স্থানীয় বাবু-সাহেবদের বেড়াজাল ছিন্ন করতে পারেনি জানিয়ে চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু ধলাই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরি বলেন, ‘চা বাগানের শ্রমিকদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন আসেনি। আজও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি আমাদের জীবনযাত্রায়। এমনকি মৌলিক অধিকারও ভোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন না চা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।’

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রীয় ভাবে চা শ্রমিক দিবসটি পালনের স্বীকৃতি চেয়ে আজও এই স্বাধীন দেশে উপেক্ষিত হয়ে আছি। আমাদের ভোটে সংসদ সদস্য হন, এমপি, মন্ত্রী হন, কিন্ত আমাদের পক্ষে কথা বলার লোক নেই।’

বাংলাদেশ চা সংসদ সিলেট ভ্যালির সভাপতি জি এম শিবলী জানান, চা শ্রমিকদের জীবন মান আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে, লেখাপড়া চাকরিতেও অনেকে এগিয়ে গিয়েছে। তাদের আরও উন্নয়নের জন্য কাজ চলছে।

 

সূত্র : ঢাকা মেইল

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

এ বিভাগের অন্যান্য খবর

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: