সর্বশেষ আপডেট : ৩১ মিনিট ২০ সেকেন্ড আগে
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

সিলেটে ৪ জঙ্গি আটক

ডেইলি সিলেট ডেস্ক ::

নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র’ শুরা সদস্য ও দাওয়াতী শাখার প্রধান আবদুল্লাহ মায়মুনসহ চার জঙ্গিকে সিলেটের বিমানবন্দর থানা এলাকা থেকে আটক করেছে র‍্যাব।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

আটককৃতরা হলেন- সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার হাফিজ মাওলানা মাহমুদ হোসাইনের ছেলে ও ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র’ শুরা সদস্য এবং দাওয়াতী শাখার প্রধান আবদুল্লাহ মায়মুন ওরফে মুমিন (৩৪), ফরিদপুরের চরভদ্রসন এলাকার মৃত. শেখ আব্দুস ছালাম মাস্টারের ছেলে মো. আবু জাফর তাহান (৪০), চাঁদপুরের মতলব উত্তরের মৃত মোস্তফা কাজীর ছেলে মো. আক্তার কাজী সাইদ অরজে আইজল (৩৮) ও গোপালগঞ্জের মুকসেদপুর এলাকার মৃত আব্দুর রাজ্জাক মোল্লার ছেলে সালাউদ্দিন রাজ্জাক মোল্লা (৩২)।

এসময় তাদের হেফাজত থেকে নগদ ২ লাখ টাকা, ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করা হয়।

মঙ্গলবার (০৯ মে) দুপুরে র‍্যাব-৯ এর সদরদপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের মিডিয়া উইং এর প্রধান খন্দকার আল মইন জানান, আটক সকলেই পাহাড়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গি। এই জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদি সংগঠন কেএনএফ। এছাড়া আনসার আল ইসলামের সাথেও তাদের যোগসূত্র রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব জানায়, এক সপ্তাহ আগে সিলেট শহরতলীর বড়শলা এলাকায় মিথ্যা পরিচয়ে বাসা ভাড়া নেয় ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামক জঙ্গি সংগঠনের চার সদস্য।

এরমধ্যে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা জানতে পারে, এই নতুন জঙ্গি সংগঠনের অন্যতম শুরা সদস্য ও দাওয়াতী শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ মায়মুনসহ সংগঠনের কয়েকজন সদস্যসহ সিলেট এলাকায় অবস্থান করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা নিশ্চিত করে সিলেটে এই জঙ্গি সদস্যদের অবস্থান।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র‍্যাব-৯ এর যৌথ অভিযান চালিয়ে ওই জঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতী শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ মায়মুন, আবু জাফর তাহান, আক্তার কাজী ওরফে সাইদ ও সালাউদ্দিন রাজ্জাক মোল্লাকে আটক করে।

র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল্লাহ মায়মুন সিলেটের স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল সম্পন্ন করে। অনলাইনে ফিলিস্তিন, মিয়ানমার, ইরাকসহ বিভিন্ন স্থানে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের ভিডিও দেখে সে উগ্রবাদে আকৃষ্ট হয়। ২০১৩ সালে সে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে আনসার আল ইসলাম জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেয়। আনসার আল ইসলামের সিলেট বিভাগীয় প্রধানও ছিল সে।

আনসার আল ইসলামের শীর্ষ জঙ্গি নেতা চাকরিচ্যুত মেজর জিয়ার সাথে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল, এমনকি জঙ্গি জিয়া তার বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন। ২০১৯ সালে বগুড়ার একটি সন্ত্রাস বিরোধী মামলায় সে গ্রেপ্তার হয় এবং এক বছরের অধিক কারাভোগ করে ২০২০ সালের শেষের দিকে জামিনে মুক্তি পায়। পরবর্তীতে তার জামিন বাতিল হলে সে আত্মগোপনে চলে যায়। ২০২১ সালে শুরা সদস্য রণবীর ও মানিকের মাধ্যমে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ায় যোগ দেয় এবং পাহাড়ে গমন করে। আনসার আল ইসলামের সিলেট বিভাগীয় মাসুল হওয়ায় সে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র শুরা সদস্য ও দাওয়াতী শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পায়। এছাড়াও সে সিলেট অঞ্চলে সংগঠনটির দাওয়াতী, প্রশিক্ষণসহ সংগঠনটির সার্বিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করতো।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব কর্মকর্তারা জানান, সিলেট বিভাগের যারা এই জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হয় তারা মায়মুনের মাধ্যমে আসে। শুরুর দিকে তার মাধ্যমে আনসার আল ইসলাম এই জঙ্গি সংগঠনকে ১৫ লক্ষ টাকা অনুদান দেয়, মূলত সে আনসার আল ইসলামের সাথে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সেতু বন্ধন তৈরি করে। এছাড়াও তার পরিচিত প্রবাসে থাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও অন্যান্য সংগঠন এবং নিজ অর্থায়নে সে উক্ত জঙ্গি সংগঠনের জন্য প্রাথমিকভাবে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করেছে বলে জানা যায়। বিভিন্ন সময়ে সে বিদেশে অবস্থানরত তার আত্মীয়, বন্ধু বান্ধবের কাছ থেকে প্রতি ৩/৪ মাস পরপর ৩০/৩৫ লক্ষ টাকা নিয়ে আসতো বলে সূত্রে জানা যায়।

পাহাড়ে অভিযান শুরু হলে সে সংগঠনের সিদ্ধান্তে সমতলে এসে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছিল সে। সাম্প্রতিক সময় সে পরিচয় গোপন করে ভুল তথ্য দিয়ে সিলেটের এই বাড়িটিতে ভাড়াটিয়া হিসেবে অবস্থান করছিল। আত্মগোপনে থেকে সে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে যোগাযোগ রেখে সাংগঠনিক বিভিন্ন কাজ করতে থাকে এবং আনসার আল ইসলামের সাথে সমন্বয় করে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছিল বলে জানা যায়।

র‍্যাবের মিডিয়া উইং প্রধান খন্দকার আল মইন জানান, গেলো বছরের ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে ০৮ জন তরুণের নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। উক্ত নিখোঁজের ঘটনায় নিখোঁজ তরুণদের পরিবার কুমিল্লার কোতয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। গণমাধ্যমসমূহে বহুলভাবে আলোচিত নিখোঁজের এই ঘটনা দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এর প্রেক্ষিতে র‍্যাব ফোর্সেস নিখোঁজদের উদ্ধারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। নিখোঁজ তরুণদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে র‍্যাব “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া” নামক একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় থাকার তথ্য পায় এবং র‍্যাব জানতে পারে যে, এই সংগঠনের সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’ এর সহায়তায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে।

পরবর্তীতে অক্টোবর ২০২২ থেকে অদ্যাবধি দেশের বিভিন্ন স্থানে ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইতোমধ্যে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ সর্বমোট ৬৮ জন এবং পাহাড়ে অবস্থান, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রমে জঙ্গিদের সহায়তার জন্য পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’ এর ১৭ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমান দেশি-বিদেশি অস্ত্র, গোলাবারুদ ও উগ্রবাদী বই। এছাড়াও উদ্ধার করা হয় সংগঠন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও কন্টেন্ট।

বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তারকৃতদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, এই সংগঠনের আমীর আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ, দাওয়াতী কার্যক্রমের প্রধান গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল্লাহ মায়মুন, সংগঠনের উপদেষ্টা শামীম মাহফুজ, অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান রাকিব। ইতিপূর্বে র‍্যাব কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও সামরিক শাখার উপপ্রধান মানিক, অর্থ বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক মুনতাছির, দাওয়াতী ও অন্যতম অর্থসরবরাহকারী হাবিবুল্লাহ, বোমা বিশেষজ্ঞ বাশার ও পার্বত্য অঞ্চলের প্রশিক্ষণ কমান্ডার দিদার হোসেন হোচম্পাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এছাড়া সংগঠনের আমীর আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদের সাথে কেএনএফ এর প্রধান নাথাম বমের সুসম্পর্ক থাকায় কেএনএফ এর সাথে তাদের অর্থের বিনিময়ে চুক্তি হয় এবং কেএনএফ জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র জঙ্গিদের পাহাড়ে আশ্রয়, অস্ত্র ও রশদ সরবরাহ এবং সশস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদান করতো। পরবর্তীতে র‍্যাবের অব্যাহত অভিযানের পর আমীরের নির্দেশে জঙ্গিরা পাহাড় হতে পলায়ন করে সমতলের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে যায় এবং পুনরায়, সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।

এদিকে গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন র‍্যাব কর্মকর্তারা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: