সর্বশেষ আপডেট : ৪৯ মিনিট ১৮ সেকেন্ড আগে
সোমবার, ৫ জুন ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দ | ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

হাওরে এবার ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার ধান উৎপাদনের আশা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি ::

হাওরে পুরোদমে চলছে ধান কাটার মৌসুম। এলাকার কিষাণ-কিষাণিরা এখন ভীষণ ব্যস্ত, তাদের দম ফেলার ফুরসত নেই। ধান কাটা, বহন করা, মাড়াই করা, শুকানো, ঝাড়াই করে ঘরে তোলার কাজে তারা মহাব্যস্ত। গত বছরের পাহাড়ি ঢলে ফসলহানীর আশঙ্কায় এবার তারা আগেভাগেই কোমর বেঁধে নেমেছেন। নিরাপদে ধান কাটা শেষের দিকে। এই কর্মব্যস্ত কয়েক লাখ চাষির অর্ধেকই নারী। পুরুষ শ্রমিকরা ধান কাটছেন আর ধান মাড়াই ঝাড়াই ও শুকানোসহ গোলায় তোলার কাজে ব্যস্ত নারী শ্রমিকরা। হাওরে এবার ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার ধান উৎপাদন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অতি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যার কারনে গেলো মৌসুমে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয় সুনামগঞ্জ জেলা। ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য এ বছর কৃষকেরা কোমড়বেধে ধান কাটা শুরু করেন। বর্তমানে ধানের মূল্য ভালো থাকায় চাষির মুখে হাসি।

অপরদিকে দীর্ঘদিন কর্মহীন কৃষিশ্রমিকেরা কাজ পেয়ে আছেন খোশ মেজাজ। তাদেরও আয় রোজগারের পথ খুলে দিয়েছে মাঠভরা সোনালি ধান। প্রতি রোজ ছয়শত টাকা হিসেবে ধান কাটছেন শ্রমিকেরা।

মাথার ওপর সূর্যের প্রচুর তাপ, প্রচন্ড দাবদাহ, তবু সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপই নেই তাদের। মনের সুখে গান গেয়ে গেয়ে চলছে ধান কাটার কাজ। পরিবারের ছেলে, বুড়ো, নারী শিশু সবাই এসেছেন ধান কাটার কর্মযজ্ঞে।

শনির হাওর, মাটিয়ান হাওর, খরচার হাওর, ঝাউয়ার হাওর, সমসা চুনখলা, এরালিয়া কোনা, মাঝের গুল, লামার গুল, রাঙ্গামাটিয়া ও দেখার হাওরের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ধান কাটছে পুরুষরা। নারীরা মেশিনে মাড়াই, খড়-নাড়া, ধানখলা তৈরি, ধান শুকানোসহ নানা কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। এর মধ্যে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও রয়েছে।

কেউ ধান কাটছেন। কেউ কেউ ক্ষেতের ‘খলা’ (ধান মাড়াই ও শুকানোর স্থান) তৈরিতে ব্যস্ত। ধান কাটা শেষে ইঞ্জিনচালিত নৌকা, ট্রলি, লরি এবং মহিষের গাড়ি দিয়ে জমি থেকে খলায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এরপর মাড়াই কল দিয়ে চলছে মাড়াই। পরে সেখানেই শুকানো হচ্ছে মাড়াইকৃত ধান। কড়া রোদে শুকানো ধান বস্তাভর্তি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গোলায়।

সারাদেশে ধানের জেলা ও খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত সুনামগঞ্জ জেলা। জেলার ১৩৭টি হাওড়ে বোরো আবাদ করা হয়েছে। আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের আশঙ্কায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার সব উপজেলার কৃষকদের দ্রুত ধান কাটা শেষ করার জন্য মাইকিং করেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, আজ পর্যন্ত হাওরের ৮৫ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। এ ছাড়াও হাওরের আশপাশে ২২ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। গড়ে ৭৫ ভাগ বোরো ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান তিনি। আর বড়জোর ১০ দিনেই জেলার সবকটি হাওড়ের ধান কাটা শেষ হবে।

জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জ জেলায় এবার ২ লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন। জেলায় ৭০ পার্সেন্ট সরকারি ভর্তুকির মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় ১০০০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। আশা করি কোনোরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

এদিকে ধান মাড়াইয়ের পর খলা থেকেই ধান বিক্রি শুরু করেছেন কৃষকরা। বিশেষ করে যারা ঋণ নিয়ে ধানের আবাদ করেছেন তাঁরা ঋণ পরিশোধের জন্য মাঠেই ভেজা ধান বিক্রি করছেন। এতে তাদের আক্ষেপ নেই। কারণ, এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় হাওড়ের ধান শুকনো থাকায় তুলনামূলকভাবে ভালো দাম পাচ্ছেন তারা।

ব্রি-২৮, ব্রি-২৯ চিকন ধান ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা দামে মাঠ থেকেই কিনে নিচ্ছেন পাইকাররা। আর মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে। তবে ব্লাস্টের কারণে চিটা হয়ে যাওয়া ধানের দাম তুলনামূলক কম; সর্বোচ্চ ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বড়দল গ্রামের কৃষক ইয়াহিয়া জানান, হাওড়ের কৃষকের হাত এখন খালি। ঋন পরিশোধ করতে এবং সংসার চালাতে খলা থেকেই ধান বিক্রি করছেন তারা। আমাদের এলাকায় ১০০০ টাকায় ধান বিক্রি হচ্ছে।

তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের বাসিন্দা নিলুফা ইয়াসমিন। এরালিয়া কোনা হাওরে এবার ৫ কেয়ার (৩০ শতাংশে ১ কেয়ার) জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন তার স্বামী জুলফিকার। হাওরের কিনারে খলায় ধান শুকাতে কাজ করার সময় তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, স্বামী ধান কেটে খলায় এনে রেখেছে। পরে মেশিন দিয়ে মাড়াই করা হয়েছে। এখন খলায় ধান শুকাই, ওড়াই এবং খড় শুকাই। একই গ্রামের বাসিন্দা কামরুল নাহার বলেন, আমার স্বামী জমি থেকে ধান কেটে খলায় আনছে। পরে সেগুলো মাড়াই করে খলায় শুকাই। খড়গুলো গরুর খাবার।

সালেমা বিবি বলেন, বৈশাখে মেয়েদের অনেক কাজ। পুরুষরা ধান কাটেন। সেই ধান নারীরা মাথায় করে বয়ে নিয়ে যায় মাড়াই করার জন্য। এরপর ধান রইদে (রোদে) শুকাতে হয়। ধান উড়িয়ে চিটা আলাদা করা লাগে, বস্তা ভরাসহ বাড়িতে নিয়ে যেতে হয়।

ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য কৃষক শাহজাহান খন্দকার জানান, এবার ফলন ভালো হয়েছে। দামও বেশি রয়েছে গত মৌসুমের ক্ষতি কিছুটা হলেও পূরণ হবে বলে আশা করছি।

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান-উদ-দৌলা প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, উপজেলার প্রায় ৮৫ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। এবার ধানের ফলন বেশি। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা রয়েছে। বাজারে ধানের দাম বেশি। তাই কৃষক আনন্দিত। তিনি দাবি করেন, কৃষকের বীজতলা তৈরি থেকে ধান কাটা ও মাড়াই পর্যন্ত কৃষিবিভাগ সকল প্রকার পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে এসেছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের অন্যান্য খবর

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: