সর্বশেষ আপডেট : ৯ ঘন্টা আগে
বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৯ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

সিলেটের ইতিহাসে ভয়াবহ বন্যা, বাঁচার আকুতি মানুষের

৩ হাজার টাকায় একটি নৌকা ভাড়া করে স্ত্রী’-সন্তান নিয়ে কোনোমতে সিলেট শহরে পৌঁছেছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজে’লার জমির হোসেন। আশ্রয় নিয়েছেন নগরীর একটি আবাসিক হোটেলে।

জমির হোসেন বলেন, উপজে’লার উত্তর রণিখাই গ্রামের বাড়িতে ঘরে এখন ৭ ফু্ট পানি। এরমধ্যে ভবনের উপরে আশ্রয়ে ছিলেন, সেখান থেকে নৌকা করে সালুটিকরে এসে পৌঁছান। তার মতো হাজার হাজার মানুষ এলাকা ছাড়ার অ’পেক্ষায়।

স্ত্রী’ সন্তান নিয়ে জমির হোসেন প্রা’ণে বাঁচলেও কোম্পানীগঞ্জ উপজে’লার লাখো মানুষ রয়েছেন পানিব’ন্দি। ব’ন্যায় গ্রাস করছে সব এলাকা। কোনো বাড়িই রক্ষা পাচ্ছে না ব’ন্যার করাল গ্রাস থেকে।

অনাহারে থাকা লোকজন এখন কেবল প্রা’ণে বাঁচতে চান। কিন্তু একটি নৌকা মেলানো তাদের কাছে এখন সোনার হরিণ।

জমির হোসেন বলেন, এমন ভ’য়ানক দু’র্যোগ ৫০ বছর বয়সে আর দেখিনি। উপজে’লার প্রায় শতভাগ মানুষ পানিব’ন্দি। কেউ ত্রাণ চায় না, প্রা’ণে বাঁচতে চায়।

তাছাড়া গত ৪দিন ধরে বিদ্যুৎহীন থাকায় মোবাইলফোনে যোগাযোগ বন্ধ। ফলে উ’দ্ধারে সহায়তা চাওয়ার সুযোগ নেই। এ জন্য মানুষকে খোঁজে খোঁজে উ’দ্ধারে সে’নাবাহিনী ও প্রশাসনের কাছে মিনতি জানান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, ভ’য়াবহ ব’ন্যায় গ্রাস করছে একের পর এক এলাকা। মানুষ এখন ত্রাণ চায় না, প্রা’ণ বাঁ’চাতে চায়। কিন্তু হাওরে আফা’ল (ঢেউ) চলছে। ছোট নৌকা দিয়ে পারাপার বেশি ঝুঁ’কি, ডুবে যেতে পারে। ফলে অনেকে পানিব’ন্দি অবস্থায় আ’ট’কে আছেন। পানি বাড়তে থাকায় উ’দ্ধারের আর্তনাদে রয়েছেন মানুষজন। তাই মানুষজনকে উ’দ্ধারে বড় নৌকা নিয়ে যাওয়া দরকার।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মানুষ টাকা দিয়ে একটি নৌকা ব্যবস্থা করতে পারছেন না। ফলে উ’দ্ধারের আর্তনাদ সবখানে। কে-কাকে উ’দ্ধার করবে, এমন দৃশ্য চোখে দেখে বরদাস্ত করার নয়।

জানা গেছে, একই অবস্থা সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজে’লা গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, সিলেট সদর উপজে’লাতেও। এছাড়া সিলেটের ১৩টি উপজে’লায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ফলে আশ্রয়ের সন্ধানে রযেছেন মানুষজন।

যু’ক্তরাজ্য প্রবাসী গোয়াইনঘাট এলাকার বাসিন্দা অধ্যাপক নুরুজ্জামান মনি বলেন, ১৯৮৮ সালের ব’ন্যায়ও আমা’র বাড়ির উঠোনে পানি উঠেছিল। কিন্তু এবারের ব’ন্যায় ঘরেও ব’ন্যার পানি প্রবেশ করেছে। তাঁর ৬৬ বছর বয়সে এ ধরণের প্লাবন কখনো দেখেননি।

তিনি বলেন, আমাদের বাড়ি অনেকটা উঁচু স্থানে। তাই বাড়িতে কয়েক পরিবার আশ্রয় নিয়েছিলেন। এখন আমা’র বাড়ির লোকজনই আশ্রয়ের খোঁজে অন্যত্র যেতে হচ্ছে।

অ’তিদ্রুত সিলেট অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে, শুক্রবার (১৭ জুন) দুপুর থেকে সে’নাবাহিনী নেমেছে উ’দ্ধার তৎপরতায়। ব’ন্যার্তদের উ’দ্ধারে এবং সিলেট বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র সচল রাখতে সে’নাবাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে।

জে’লা প্রশাসন থেকে জানানো হয়, ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’- এর আওতায় ও দু’র্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১২ এর ধারা ৩০ মোতাবেক বেসাম’রিক প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে সিলেট বিভাগের (সিলেট ও সুনামগঞ্জ জে’লা) বিভিন্ন উপজে’লায় সে’নাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ব’ন্যা কবলিত প্রান্তিক এলাকায় পানিবন্দী লোকদের উ’দ্ধারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় মানবিক কার্যক্রম সে’নাবাহিনীর সহযোগিতায় স্থানীয় প্রশাসন ইতোমধ্যে শুরু করেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ভা’রি বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে সিলেটে সব নদ নদীর পানি বেড়েই চলেছে। নদীগুলোর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপৎসীমা’র উপর দিয়ে প্রবাহমান রয়েছে। বিকেল ৩টার হিসাব অনুযায়ী, সুরমা’র পানি কানাইঘাটে ১২৮ সেন্টিমিটার, সিলেটে সুরমা’র পানি ৭৭ সেন্টিমিটার, সারি নদীতে ৬৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া কুশিয়ারার বিভিন্ন পয়েন্টেও নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।

এদিকে, গত রাত থেকে সিলেটে মোষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে জনজীবন বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে। ব’ন্যাকবলিত এলাকার লোকজন গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয়ের খোঁজে কেবল শহরের দিকে আসছেন। কিন্তু নগর এলাকারও প্রায় অর্ধেকাংশ ব’ন্যার পানিতে নিমজ্জিত। এ অবস্থায়ও সে’নাবাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে নৌকা যোগে ও পায়ে হেঁটে উ’দ্ধার কাজ চালাচ্ছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

এ বিভাগের অন্যান্য খবর

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম
নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
মোবাইল: ০১৭১২ ৮৮৬ ৫০৩
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: