সর্বশেষ আপডেট : ৮ ঘন্টা আগে
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এবং সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যম শিক্ষা

মোঃ কায়ছার আলী: ২০২১ সালে জাপানে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস বলেন’ তিন শূণ্য দারিদ্র, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ এবং চার মহাশক্তি তারুণ্য, প্রযুক্তি, সুশাসন ও সামাজিক ব্যবসা নিয়ে। সারা দুনিয়ার মতো আমাদের দেশের মহাশক্তি তারুণ্য মানে নতুন প্রজন্ম গত দুই বছর যাবৎ কোভিড- ১৯ ফেস করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে।

দীর্ঘদিন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এই ক্ষতি পূরণ আজ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। কিছু কিছু অভিভাবক অনেকটা না বুঝে শুনেই বলেন “স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া হয় না”। এখন তারাই আবার বলছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমাদের সন্তানেরা বাড়িতে বা অনলাইনে লেখাপড়া না করে গোল্লায় যাচ্ছে। সত্যি কথা হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু থাকা মানে মানব শরীরের হৃদপিন্ড চালু থাকা। এগুলো বন্ধ হলে দেশ বা জাতি চিরতরে মরে যাবে। চরম বাস্তবতা হলো আমাদের নতুন প্রজন্মকে সামান্য শাসন বা বকাবকি করার ক্ষমতা এখন শিক্ষক, অভিভাবক এবং পিতা-মাতার নেই। গালমন্দ করলে হয়তো বাড়ি ছেড়ে পালাবে, না হয় অন্য কিছু করবে। দামি মোবাইল না কিনে দিলে, পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে, বাড়িতে দেরিতে ফিরে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা মাইন্ড করে। এরকম পরিবেশত দুই-তিন দশক আগেও ছিল না। এখন ছেলে মেয়েরা বেশি পড়তে চায় না। মোবাইলের নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি তারা বেশি আসক্ত। এগুলো অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সামাজিক অস্থিরতার পরিবেশ বন্ধে মনোবিজ্ঞানী বা অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। বেশি দেরি করা যাবে না। মূল্যবোধের ধস অবশ্যই ঠেকাতে হবে। আমাদের শিক্ষা জীবনে সৃজনশীল পদ্ধতি বা অবজেক্টিভ পদ্ধতি ছিল না, রচনামূলক ছিল। কোন একটি বিষয়ে ফেল করলে, পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকলে (ব্যবহারিক সহ) মান উন্নয়ন পরীক্ষা দিলে পুনরায় সকল বিষয়ে পরের বছর আবার পরীক্ষায় বসতে হতো। এখন কিছু বিষয়ে নম্বর কম পেলে বা পরীক্ষায় খারাপ করলে অথবা মান উন্নয়নের পরীক্ষা দিতে চাইলে শুধুমাত্র ঐ বিষয়গুলোতে পরীক্ষা দিতে হয়। একেই বলে মহাসুযোগ। প্রাইভেট পরীক্ষা দিতে ব্রেক অব স্টাডি আর লাগে না। আমাদের শিক্ষা জীবনের বাংলা প্রথম পত্র সকাল দশ টা হতে দুপুর একটা পর্যন্ত, সামান্য বিরতি দিয়ে বাংলা দ্বিতীয় পত্র দুপুর দুইটা থেকে বিকাল পাচঁটা পর্যন্ত একটানা পরীক্ষা হত। এভাবে ইংরেজি প্রথম এবং দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা হত। পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা পরপর দুইদিনে সকল বিষয়ে সকাল এবং বিকালে অুনষ্ঠিত হত। আজকের মতো বেশিদিন ধরে সে সময় পাবলিক পরীক্ষায় গ্যাপ বা বিরতি ছিল না। তখন মাধ্যমিকে ভূগোল ছিল আবশ্যিক, এরপরে আবশ্যিক হলো কৃষি শিক্ষা বর্তমানে আইসিটি। বিজ্ঞানের সাথে মিলেমিশে একাকার তথ্য প্রযুক্তি। বাষ্পীয় ইঞ্জিন (বাষ্প + জল শক্তির ব্যবহার) আবিষ্কার, বিদ্যুৎ (পৃথিবী আলোকিত) এর ব্যবহার, ট্রানজিস্টার (জ্ঞানের বিপ্লব) আবিষ্কারের পথ ধরে ব্যাপক শিল্পায়নে মানব সভ্যতার গতিধারা বদলে দেয়। প্রথম তিনটি শিল্প বিপ্লবের পথ বেয়েই এসেছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বা ডিজিটাল বিপ্লব। এই যুগটি রোবোটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ন্যানোটেকনোলজি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, বায়েটেকনোলজি, ইন্টারনেট অব থিংস, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ইন্টারনেট অব থিংস ইত্যাদি নির্ভর। অবশ্য সকল বিপ্লবই মূলেই রয়েছে শিক্ষা। শিক্ষা একটা চলমান প্রক্রিয়া। সমকালীন জাতীয় ও বৈশ্বিক চাহিদা সাথে সংগতিপূর্ণ রেখে নতুন শিক্ষাক্রম পুরোপুরি চালু হবে ২০২৫ সালের মধ্যে। নতুন বিষয়গুলো হলোঃ ডিজিটাল প্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় চারটি ধারা রয়েছে। সাধারণ, মাদ্রাসা, ইংরেজি মাধ্যম ও কারিগরি শিক্ষা। বর্তমান সরকার চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে কর্মমুখী শিক্ষাকেও জোর দিচ্ছেন। প্রয়োজনে কারিকুলামেও পরিবর্তন হতে পারে। এই যুগে শিক্ষা কি মানবিক উৎকর্ষ সাধন না কর্মমুখী হবে? শিক্ষবিদ বা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষা এখন সুকুমার বৃত্তি নয়, এটা অনেকটা বাস্তবমুখী বা কর্মমুখী? বিশ্বায়নের এই যুগে বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই। প্রযুক্তি বিদ্যায় ছাত্রছাত্রীদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। নইলে দেশে শিক্ষিত বেকার বাড়বে। যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষকদেরও বাড়াতে হবে জ্ঞানের পরিধি। তাদেরও প্রযুক্তিগত শিক্ষায় প্রশিক্ষণ নিতে হবে। ভৌগলিক কারণে বা বঙ্গোপসাগরে সাথে মিলেমিশে আছে আমাদের দেশের মানচিত্র। সমুদ্র বিজয়ের দশ বছর হলেও সমুদ্র বিজ্ঞানকে প্রযুক্তির মাধ্যমে এগিয়ে নিতে হবে। ব্লু ইকোনমি সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনাময় আমাদের বাংলাদেশ। দেশের স্থল সীমানার প্রায় সমভাগ এখন সমুদ্রসীমায় এখন মূল্যবান খনিজ ও প্রাণিজ সম্পদের ভান্ডার। নীল জলরাশির মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা রকম সামুদ্রিক সম্পদ। তেল, গ্যাস, মূল্যবান বালু, ইউরোনিয়াম, মোনাজাইট, জিরাকন, অক্টোপাস, হাঙর, টুনা মাছ ইত্যাদি। ২৬ টি ব্লক, ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, ৪৭৫ প্রজাতির মাছ, ৩৬০ প্রজাতির শামুক ঝিনুক, ২০ জাতের কাঁকড়া, ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি দিয়ে আড়াই লক্ষ কোটি ডলার আয় সম্ভব। জরুরী ভিত্তিতে সামুদ্রিক জ্ঞান কাজে লাগাতে হবে। মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে আজ বাণিজ্য ও সামাজিক বিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলোতে পড়ার আগ্রহ অনেকাংশেই কম। তারা বিজ্ঞান, কৃষি, চিকিৎসা, ফার্মেসী, প্রকৌশলী ও তথ্য প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করছে। ভবিষৎতের দিনগুলোর কথা বিবেচনায় নিলে এই প্রবণতা ইতিবাচক। নিকট ভবিষ্যতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কে মোকাবেলা করতে হলে বা পুরোপুরি কাজে লাগাতে হলে তথ্য ও প্রযুক্তিকে মূল পুঁিজ করে বাস্তবতার আলোকে বিশ্বমানের মেধা সম্পন্ন সু- নাগরিক তৈরির লক্ষ্যে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরো যুগোপযোগী বা আধুনিক করতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার একমাত্র মাপকাঠি মান সম্মত শিক্ষা। আগামী জীবন ব্যবস্থা প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষ, প্রকৃতি এবং সমাজের সম্পর্ক বৃহত্তর রুপান্তর হবে এতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই।

লেখকঃ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট, ০১৭১৭-৯৭৭৬৩৪, kaisardinajpur@yahoo.com
সদস্য, দিনাজপুর কলামিস্ট এসেসিয়েশন, দিনাজপুর । ০১৮১৮-২৩০৯৭০

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: