সর্বশেষ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

কবি মুহিত চৌধুরীর বিরুদ্ধে একটি রিপোর্ট ও মিথ্যাচারের বেসাতি

ফকির ইলিয়াস: বর্তমান সময়ের একজন শক্তিমান কবি,লেখক,নাট্যকার,গীতিকার,বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সম্মানিত সভাপতি মুহিত চৌধুরীর বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা বানোয়াট রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। গেল ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক যুগান্তর’-এ এই রিপোর্টটি ছাপা হয়েছে ‘সিলেট ব্যুরো’ এর নামে। প্রতিবেদনটির শিরোনাম হচ্ছে- ‘সিলেটের বিতর্কিত মুহিত চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী’।

আমার জানামতে যুগান্তরের সিলেট ব্যুরোতে দুজন সাংবাদিক কাজ করেন। তাদের একজনকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। অন্যজনকে চিনি না। যেহেতু এটি ‘সিলেট ব্যুরো’- এর নামে প্রকাশিত হয়েছে, তাই এই রিপোর্টের সকল দায় ও দায়িত্ব দুজনের উপরই বর্তায়। নিউজটি যে কত ঢাহা মিথ্যাচার তার কিছু বিশ্লেষণ আমি করতে চাই। শিরোনামটি বলছে, মুহিত চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন। বিষয়টি কি আদৌ সত্য ? ৭৭তম জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে আসেন লন্ডন হয়ে। তাঁর সাথে প্রতিনিধিদল ছিলেন।

মন্ত্রী আমলা সাংবাদিকরা ছিলেন। মুহিত চৌধুরী কি তাঁদের সাথে এসেছেন ? না- আসেন নি। তাহলে এমন বানোয়াট রিপোর্ট করে একজন সম্মানিত কবি-সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের আসল উদ্দেশ্য কি ? ‘সিলেট ব্যুরো’- কোন দায়িত্বজ্ঞান থেকে এই রিপোর্ট টি পাঠালো ?

এবার রিপোর্টের ভেতরে প্রবেশ করা যাক। বলা হয়েছে ‘নানাভাবে বিতর্কিত’! কীসের বিতর্কিত? কি নিয়ে বিতর্কিত তিনি ? তিনি এমন কী কাজটি করেছেন যা বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল বা দিচ্ছে ? প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি একটি ‘রাজনৈতিক ঘরানার’! এই তথ্য রিপোর্টার’রা কোথায় পেলেন ? মুহিত চৌধুরী কি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য ? তিনি কি সক্রিয় রাজনীতি করেন? তার কোথাও কোনো সদস্যপদ আছে, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার ? না – নেই। যদি না থেকে থাকে, তবে প্রতিবেদকরা তা কেন লিখলেন ? তাদের নেপথ্য হীন উদ্দেশ্য কি ?

এটা তো সাংবাদিকতার নীতিমালায় চরম গর্হিত কাজ। রিপোর্টে মুহিত চৌধুরী সম্পাদিত ‘বিশ্ববাংলা’র কথা বলা হয়েছে। ‘বিশ্ববাংলা’ একটি মাসিক ম্যাগাজিন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। এই ম্যাগাজিন সিলেটের কৃতি ব্যক্তিদের নিয়ে বড় বড় প্রতিবেদন করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত,মেয়র বদর উদ্দীন আহমদ কামরান, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান, বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ এ কে এ মোমেন- এমন অনেক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। ‘বিশ্ববাংলায়’ বর্তমানে দণ্ড ভোগ করছেন এমন একজন যুদ্ধাপরাধী দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর ছোট্ট একটি সাক্ষাতকার ছাপা হয়েছিল। সেই সাক্ষাতকারে মূলত সাঈদীর যুদ্ধাপরাধে সংশ্লিষ্টতার অন্বেষণই করা হয়েছিল। এমন অনেক প্রশ্ন মওলানা সাঈদীকে বাংলাদেশের শত শত মিডিয়া বিভিন্ন সময়ে করেছে। এটা তো ‘বিশ্ববাংলা’র কোনো অপরাধ হতে পারে না ? নাকি পারে ? সাংকাদিকতার অন্তর্জাতিক নীতিমালা এ বিষয়ে কি বলে ? ‘সিলেট ব্যুরো’ কি তা জানে না ? নাকি জেনেই একজন বিশিষ্ট সাংবাদিকের মানহানি করার অপচেষ্টা করছে ? কেন করছে?

মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কিছু সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে কিছু মিডিয়া ঘোলা জলে মাছ শিকার করার অপপ্রয়াস চালিয়েছে। তিনি যা বুঝাতে চাননি- সেটাকেই তিল থেকে তাল করা হয়েছে। এ বিষয় নিয়ে সাংবাদিক মুহিত চৌধুরী কলাম লিখেছেন। বলে রাখতে চাই, এই বিষয় নিয়ে আমিও কলাম লিখেছি। যা ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক মানবকন্ঠ’, নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন- উত্তর আমেরিকা সংস্করণ’ এবং ‘দৈনিকসিলেট ডট কম’ -সহ বিভিন্ন মিডিয়ায় ছাপা ও প্রচারিত হয়েছে। আমি সেসব লেখায় খুব স্পষ্ট করেই বলেছি, ডঃ একে এ মোমেন রাষ্ট্রতন্ত্রের কল্যাণের পক্ষেই কথা বলেছেন। তিনি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় শান্তির পক্ষেই শক্তিশালী ভূমিকায় থেকে কথা বলেছেন। হ্যাঁ- তা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা কথা বলেছেন। অভিমত ব্যক্ত করেছেন পক্ষে কেউ, ভিন্নমতে কেউ। তা তারা করতেই পারেন। এটা তাঁদের দলীয় অবস্থানের পক্ষে অধিকার। কিন্তু এটা তো মিথ্যে নয়, এখনও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে আছে অনেক খন্দকারীয় প্রেতাত্মা। যারা সেই কুখ্যাত মোশতাকের মতোই সুযোগ পেলে তাদের ফণা দেখাবে। হ্যাঁ, এরাই তো আজ বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার সুনামকে ক্ষুন্ন করছে- লুটপাট করে। এরা কারা, তা কমবেশি সকলেই জানেন। তবে কি আজ মিডিয়ায়ও সেই প্রেতাত্মারা ভর করেছে? এরাই মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিশিষ্ট সাংবাদিকদের চরিত্র হননে মিশন নিয়ে পাঠে নেমেছে?

সিলেটের রাজনীতিতে ডঃ এ কে এ মোমেনের অবস্থান গোটা দেশবাসীই জানেন। জানেন, তাঁর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ধ্যানী পরিকল্পনার কথাও। বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ মোমেন, এই সময়ে বিশ্বের সেরা দশজন পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একজন। এটা বিশ্বের আলোকিত নেতৃবৃন্দই বলছেন। তাই তাঁকে যারা নেপথ্যে ছুরি মারার স্বপ্ন দেখছেন, তারা তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্ধী হওয়া তো দূরের কথা, তাঁর ভাবনার ধারে কাছে যাওয়ার যোগ্যতা রাখেন কী না, সেই প্রশ্ন সিলেট বিভাগের সাধারণ জনগণই করছেন। বলতে দ্বিধা নেই পঁচাত্তরের খুনীদের প্রেতাত্মারা এভাবেই মানুষকে ভুল বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। এবং মন্ত্রীদের ডিও লেটার নিয়ে ‘গবেষণা’ করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। একজন মন্ত্রী তাঁর সফরসঙ্গী হিসেবে কোন সাাংবাদিকের জন্য সুপারিশ করবেন, সেটা তাঁর দাপ্তরিক সিদ্ধান্ত। এখানে উটকো’দের মাথা ঘামানোর কি নেপথ্য কারণ থাকতে পারে?

এখানে প্রাঙ্গিকভাবে বলতে চাই, কবি মুহিত চৌধুরী সেই নব্বই দশকেই জাতির পিতাকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন। যা তার গ্রন্থভুক্ত আছে। সেই এরশাদীয় স্বৈরশাসনের সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে মহান মুক্তিযুদ্ধ,ইনডেমনিটি বিল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে মিছিল মিঠিং করেছেন। বাংলাদেশে স্বৈরশাসনের অবসান ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। এগুলো আমার নিজের দেখা বিষয়। তিনি দীর্ঘদিন মার্কিন মুলুকে ছিলেন। তাই আমেরিকা’কে নতুন করে দেখার তার কিছু নাই।

সর্বশেষ, গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন-উত্তর আমেরিকা সংস্করণের’ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ এ কে এ মোমেন। সেখানে তাঁর সাথে আমার অন্তরঙ্গ কথা হয়েছে। সেদিনও তিনি বলেছেন, ”আমি বাংলাদেশের মানুষের সেবা করার জন্যেই কাজ করছি। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃেত্বে তাঁর টীম এবারের জাতিসংঘ অধিবেশনেও শির উঁচু করে কথা বলেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই- এই বাণীই পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বনেতাদের কাছে। আমরা বৈশ্বিক শান্তি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার বাহুকে শক্ত করেই এগোচ্ছি।”

আমি জানি, ডঃ এ কে এ মোমেন ভূমিপুত্র। তিনি সুরমা অববাহিকা থেকে উৎসারিত পলিমাটির সন্তান। প্রজ্ঞাবান এই রাজনীতিক, রাজনীতিতে এসেছেন কূটনীতির আলোকিত পথ মাড়িয়ে। তাই বিশ্বরাজনীতির মাঠ-ঘাট তাঁর খুব চেনা। সিলেট বাসীর উচিত, তাঁর হাতকে শক্ত করেই সিলেট বিভাগের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা। ভিন্নমত থাকতে পারে। কিন্তু সেই ভিন্নমত যেন মিথ্যের বেসাতি না হয়। সেই ভিন্নমত দেখে সাধারণ মানুষ যেন গোটা মিডিয়াজগতের উপরই বীতশ্রদ্ধ না হন।

যে কথাটি বলে লেখাটি শেষ করতে চাই, তা হলো ‘দৈনিক যুগান্তর সিলেট ব্যুরো’র উচিত- এই বানোয়াট, মিথ্যা, দুরভিসন্ধিমূলক রিপোর্টের জন্য মবি মুহিত চৌধুরীর কাছে নিঃস্বর্থ ক্ষমা চাওয়া। একই সাথে দৈনিক যুগান্তরে ঘোষণা দিয়ে রিপোর্ট টি উইথড্র করা।এই রিপোর্ট আগামী প্রজন্মের জন্য কলংক হয়েই থেকে যাবে, মিথ্যার মরা কংকাল হয়েই থেকে যাবে- যদি তা সংশোধিত না হয়। ‘সিলেট ব্যুরো’র সেই বোধোদয় হবে, এবং তারা এই কাজটি করবেন বলেই আমি আশাবাদী। পরিশুদ্ধ সাংবাদিকতাই হোক সকলের পাথেয় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: