cialis fiyat cialis sipariş http://umraniyetip.org/
Fapperman.com DoEscortscialis viagra viagra cialis cialis viagra cialis20mgsite.com geciktirici sprey azdırıcı damla
ভাষা আন্দোলনের অসাম্প্রদায়িক চেতনা এখনও পরিপূর্ণতা পায়নি বলে মন্তব্য করেছেন রাজশাহীর ভাষাসৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জী। রাজশাহী থেকে ভাষার দাবিতে আন্দোলনের সংগঠক ও নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে যে কয়েকজন ভাষাসৈনিক জীবিত আছেন, তাদের মধ্যে তিনি একজন।
ছেলেবেলা থেকেই মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জী ছিলেন রাজনীতি ও সমাজ সচেতন। অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়তে তখন থেকেই কাজ করেন তিনি। সমাজের নানা অসঙ্গতিতে ছিলেন সোচ্চার। দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ভাষা আন্দোলনে যুক্ত হন তিনি। সে সময় রাজশাহী নগরের লোকনাথ স্কুলে পড়তেন আখুঞ্জী। এখন বয়সের ভারে স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা ঘিরে ধরেছে তাকে। কিন্তু তার স্মৃতিতে ভাষা আন্দোলনের সেই উত্তাল দিনগুলো এখনো জলজ্যান্ত।
যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জী ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন, সেই চেতনা এখনো পূর্ণতা পায়নি বলে আক্ষেপ তার। তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য যে সংগ্রাম গড়ে ওঠে, এতে একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনা ছিল। রাষ্ট্রের মানুষ কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ে বিভক্ত থাকবে না। সে নাগরিক হিসেবেই চিহ্নিত হবে। তার পরিচয় হবে বাঙালি। অথচ ভাষা আন্দোলনের অসাম্প্রদায়িক চেতনা এখনও পরিপূর্ণতা পায়নি। আমরা এখনও সম্পূর্ণভাবে অসাম্প্রদায়িক হতে পারিনি।
ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালির জাতীয় সম্ভ্রম বোধ লাভ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতিসত্তার জাগরণ ঘটে। বাঙালির স্বাধীনতার চেতনা গড়ে ওঠে। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালিরা জাতীয় সম্ভ্রম বোধ ফিরে পায়।
মাধ্যমিকের গণ্ডি না পেরোতেই ভাষা আন্দোলনে যুক্ত হন মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জী। নগরীর লোকনাথ স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করার পর ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে। পরে ভর্তি হন নীলফামারি ডিগ্রি কলেজে। সেখান থেকে শিক্ষাজীবন শেষ হয় তার। মাধ্যমিকের পর থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। শিক্ষাজীবনে ন্যাপের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। কমিউনিস্ট পার্টির সব কার্যক্রমে ছিলেন সামনের সারিতে।
ভাষা আন্দোলনে রাজশাহীর সর্বস্তরের পেশাজীবী ছাত্র-জনতার গৌরবময় ভূমিকা ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে এখনো। ভাষা আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোর স্মৃতিচারণায় এই অশীতিপর বলেন, দশম শ্রেণিতে রাজশাহী নগরীর লোকনাথ স্কুলে পড়া অবস্থায় দেশব্যাপী ভাষা আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজশাহী থেকে সোচ্চার হই। সে সময় স্কুলে স্কুলে গিয়ে ছাত্রদের বাংলা ভাষার দাবিতে সচেতন করা, সংগঠিত করতে অন্যদের সঙ্গে কাজ করেছিলাম। পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে মানুষকে সচেতন করা, উর্দু রাষ্ট্র ভাষা হলে কী পরিণতি হবে তার কুফল সম্পর্কে জানিয়েছিলাম তখন।
ঢাকার পরেই ভাষা আন্দোলনের পুরো সময়টা রাজশাহী উত্তাল ছিল ছাত্র-জনতার আন্দোলনে। ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে রাজশাহীতে গঠিত হয়েছিল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ওই পরিষদের সভাপতি ছিলেন এসএম গাফ্ফার এবং যুগ্ম-আহ্বায়ক ছিলেন রাজশাহী কলেজের জ্যেষ্ঠ ছাত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোলাম আরিফ টিপু (বর্তমানে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর) ও নাটোরের হাবিবুর রহমান। এছাড়াও ভাষা আন্দোলনে আরও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন—মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জী, আব্দুর রাজ্জাক, মনোয়ারা বেগম, আবুল হোসেন ও সাইদউদ্দিন আহমেদসহ অনেকেই।
রাজশাহীতে ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গে মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জী বলেন, ভাষা আন্দোলনের সময় রাজশাহীর সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা ১৯৪৮ সাল থেকেই আন্দোলনে সক্রিয় ছিল। ওই সময় থেকেই যে কোনো আন্দোলনের সূতিকাগার ছিল রাজশাহী কলেজ। আমরা ভাষা আন্দোলনে ঢাকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে তাল রেখে রাজশাহীতে আন্দোলন-সংগ্রাম কর্মসূচি পালন করতাম। ১৯৪৮ সালে রাজশাহী নগরীর ফায়ার বিগ্রেড মোড়ে ছাত্র জনতার মিছিলে তৎকালীন মুসলিম লীগের ক্যাডার ও পুলিশ হামলা করে। এতে একজনের রক্তপাত হয়। এর পর থেকেই রাজশাহীর ছাত্রজনতা আন্দোলন অব্যাহত রাখে।
১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি স্মরণ করে মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জী বলেন, ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় ভাষার দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন তখন তুঙ্গে। আমরাও রাজশাহীতে ভাষার দাবিতে আন্দোলন করছি। ২১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীতে আমরা দিনভর ঢাকার খবর জানার জন্য গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে সন্ধ্যার দিকে রাজশাহীতে খবর এলো, ঢাকায় ছাত্রদের ওপর গুলি হয়েছে। অনেক ছাত্র আহত ও নিহত হয়েছেন। এই খবর পেয়ে আমরা রাজশাহী কলেজের তৎকালীন নিউ হোস্টেল (মুসলিম ছাত্রাবাস) চত্বরে সমাবেত হলাম। একপর্যায়ে কয়েকশ ছাত্র জমায়েত হলো হোস্টেল প্রাঙ্গণে। সবার চোখে-মুখে ভীষণ উৎকণ্ঠা, কিন্তু দৃঢ় প্রত্যয়ে সবার কণ্ঠেই উচ্চারিত হচ্ছে, ‘ছাত্র হত্যার বিচার চাই, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। ’
ডা. এসএম গাফ্ফারের সভাপতিত্বে ওই জমায়েত থেকে গঠিত হয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। সেখানে ভাষা শহীদদের স্মৃতি অমর করে রাখতে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত কাজ করে ইট ও কাদামাটি দিয়ে শহীদদের স্মরণে একটি শহীদ মিনার তৈরি করা হলো। তার মধ্যে লিখে দেওয়া হয়, ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই। নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই। ’ সেটি রাত জেগে পাহারাও দেওয়া হলো। কিন্তু সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুসলিম লীগের সন্ত্রাসীরা ও পুলিশ এসে শহীদ মিনারটি ভেঙে দিল।
ভাষাসৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জীর শরীর এখন তার শরীর আর সায় দিচ্ছে না। নানাবিধ অসুস্থতা ঘিরে ধরেছে তাকে। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। পেশাগত জীবনে কিছুদিন রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে চাকরি করেন তিনি। ছেলের সঙ্গে বসছেন বাপ-দাদার দেয়া নগরীর সাহেব বাজারের আরডিএ মার্কেটের ঐতিহ্যবাহী ‘মেসার্স ১ নম্বর গদী’ নামের একটি মুদির দোকানে। সবমিলিয়ে বেশ ভালোই কাটছে তার বর্তমান জীবন। দেশকে নিয়ে ভাবছেন প্রতিনিয়ত। পাশাপাশি বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন।
ভাষা আন্দোলনের এত বছর পরও বাংলা ভাষা পরিপূর্ণ সমাদর পায়নি বলে আক্ষেপে তার। তিনি বলেন, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে আমরা যে বাঙালি জাতিসত্ত্বার উন্মেষ ঘটিয়েছিলাম, সেটা এখন অনেকটাই নিস্তব্ধ। বাঙালি সংস্কৃতির লালন হচ্ছে না। হাইকোর্ট-সুপ্রিমকোর্টে ইংরেজি ভাষা ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। সারাদেশে বিলবোর্ড-ব্যানারে ইংরেজিতে ভর্তি। এগুলো যখন বাংলা হবে তখন পূর্ণতা পাবে। তবে ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে বাংলার নিচে থাকতেই পারে।
জীবন্ত এ ভাষাসৈনিক চান বাংলা ভাষাকে যেন কোনোভাবেই অবহেলা করা না হয়। যে ভাষার জন্য তারা সংগ্রাম করেছেন তার প্রতি হেলাফেলা না করে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হোক। যেন বাংলা ভাষার মাধ্যমে বাঙালি একটি স্বতন্ত্র জাতি সেই হিসবেই পরিচিত হয়। সূত্র: বাংলানিউজ