সর্বশেষ আপডেট : ২০ ঘন্টা আগে
বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দ | ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

‘বাবা এবার আর বাঁচবো না দাবি ছেড়ে দিস, তোর বোন তো সাঁতার জানে না’

‘ঢাকা থেকে এমভি অ’ভিযান ১০ লঞ্চে করে বেতাগীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই আমি মা ও বোন। কেবিন না পেয়ে ডেকেই জায়গা করে নেই অন্য যাত্রীদের সঙ্গে। মধ্য রাতের দিকে ঘুমিয়ে পড়ি সবাই। হঠাৎ শরীর উষ্ণ হয়ে ওঠে, ভেঙে যায় ঘুম। চারদিকে কালো ধোয়া যাত্রীদের ছোটাছুটি, মা ও বোনকে নিয়ে বিবেক হারিয়ে ফেলি। পায়ের জুতো পুড়ে যাচ্ছিল।’

ঠিক এমনটাই বর্ণনা দিচ্ছিলেন পুড়ে যাওয়া অ’ভিযান-১০ লঞ্চের যাত্রী মো. রনি (১৬)।

তিনি আরও বলেন, কোথায় দাঁড়াবো! কি করবো। অ’সুস্থ মা ও ১৩ বছর বয়সের বোনকে নিয়ে লঞ্চের তিনতলার সামনে চলে যাই। এর মধ্যে আ’গুন ছড়িয়ে পরে পুরো লঞ্চে। শুধু চি’ৎকার আর চি’ৎকার উপায় না পেয়ে মাকে বলি মা লাফ দেও। মা বলে বাবা এবার আর বাঁচবো না দাবি ছেড়ে দিস, তোর বোন তো সাঁতার জানে না। তুই লাফ দে আম’রা নৌকা আসলে উঠবো। যদি বেঁচে থাকি আবার দেখা হবে। কি করবো এদিকে দ’গ্ধ হতে শুরু করে পুরো শরীর সহ্য করতে পারছিলাম না।

মো. রনি বলেন, হঠাৎ লোকজনের ধাক্কায় মা ও বোনকে তিন তলায় খুঁজে পাচ্ছি না। বাধ্য হয়ে হৃদয়ে পাথর বেধে স্বার্থপরের লঞ্চের তিন তলা থেকে লাফিয়ে পরি মাঝ নদীতে। অনেকক্ষণ ভেসে থেকে এলাকাবাসী উ’দ্ধারে আসলে তাদের ট্রলারে উঠি। তবে মা ও বোনকে এখনো খুঁজে পাইনি। মনে হয় আমা’র মা বোন আর নেই এই বলে চি’ৎকার দিয়ে ওঠে।

রনি বর্তমানে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতা’লের বার্ন ইউনিটে দ’গ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এছাড়াও লঞ্চে আ’গুন লাগার ঘটনায় অ’গ্নিদ’গ্ধ হয়ে বেতাগীতে এ পর্যন্ত কাজিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা রিয়াজ হোসেন (২৮) নি’হত হয়েছেন। নি’খোঁজ রয়েছেন আরও ৮জন। এরা হলেন- কাউনিয়া এলাকার সিকদার বাড়ির রিনা বেগম (৩৮), লিমা (১৪), মোকা’মিয়া এলাকার আব্দুল হাকিম (৫৮) তার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস (১৩), আরিফুর রহমান (৩৫), কুলসুম (৪), সেলিম (৪৮) ও সোবাহান খলিফা (৪০)।

এছাড়াও আ’হত যাত্রীরা হলেন- আবদুল হাই নেছারী, হালিমা বেগম, সফিউল্লাহ, কুশল কর্মকার, জাহানারা বেগম, ফরহাদ খলিফা, মুকুল খলিফা, রুবেল, শাহিন, মতিয়ার রহমান, শাবনূর, শাহেব আলী, সালাম, ফেরদৌস ও বুলবুল।

এছাড়াও আরও অনেক যাত্রী দ’গ্ধ হয়ে আ’হত হয়েছেন তাদের নাম ও সংখ্যা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে প্রায় চারশ যাত্রী নিয়ে বরগুনার উদ্দেশ্যে লঞ্চটি ঢাকা সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়। চাঁদপুর ও বরিশাল টার্মিনাল লঞ্চটি থামে এবং যাত্রী উঠা-নামা করে।ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে পৌঁছলে রাত ৩টার দিকে এতে আ’গুন ধরে যায়। পরে ঝালকাঠি সদর উপজে’লার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের দিয়াকুল এলাকায় নদীর তীরে লঞ্চটি ভেড়ানো হয়। লঞ্চ থেকে প্রা’ণ বাঁ’চাতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন যাত্রীদের অনেকে।

খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা নৌকা নিয়ে লঞ্চের আ’গুন নেভানোর চেষ্টা করেন তারা। ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিটের চেষ্টায় ভোর ৫টা ২০ মিনিটে আ’গুন নিয়ন্ত্রণে আসে এবং উ’দ্ধার অ’ভিযানে ৪০টি লা’শ উ’দ্ধার করা হয়েছে বলেও তথ্য নিশ্চিত করে ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস ইউনিট।

বরগুনা জে’লা প্রশাসক মো.হাবিবুর রহমান জানান, নি’হতদের মধ্যে ৭-৮ জনের লা’শ স্বাভাবিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব। বাকিদের শনাক্ত করার জন্য ল্যাব টেস্ট (ডিএনএ টেস্ট) প্রয়োজন হতে পারে। শনাক্ত না হওয়া বাকি লা’শের বরগুনা সার্কিট হাউজ মাঠে বেলা ১১টায় জানাজা হবে।

ভ’য়াবহ অ’গ্নিকা’ণ্ডে নি’হতদের প্রত্যেকের পরিবারকে দেড় লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। শুক্রবার বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতা’লে চিকিৎসাধীন দ’গ্ধ ব্যক্তিদের দেখার পর সাংবাদিকদের এ কথা জানান প্রতিমন্ত্রী।

এছাড়াও বরগুনা জে’লা প্রশাসন থেকে নি’হতদের লা’শ দাফনে প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে ও আ’হতদেরকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: