সর্বশেষ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

চোখে না দেখেও তারা কোরআনে হাফেজ

চোখে না দেখেও কোরআন মুখস্ত করে হাফেজ হয়েছেন মোহাম্ম’দ ইয়াছিন আরাফাত, ই’মাম হাসান, আশেকে এলাহী ও মোহাম্ম’দ সোহেল। তারা সবাই লক্ষ্মীপুর শহরের আবদুল গণি দৃষ্টি প্রতিব’ন্ধী ব্রেইল হাফিজিয়া ও ফোরকানিয়া মাদরাসার ছাত্র। লেখাপড়ার পাশাপাশি এ মাদরাসায় বিনা-খরচে থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসা সেবার সুযোগ পাচ্ছেন দৃষ্টিপ্রতিব’ন্ধীরা। মানুষের দান-অনুদানে প্রায় ৮ বছর ধরে চলছে মাদরাসাটি।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে দৃষ্টিপ্রতিব’ন্ধী হাফেজ মোহাম্ম’দ জাহিদুল ইস’লামের বাবা মা’রা যান। বাবার স্বপ্নপূরণে কোরআন মুখস্ত করেছেন জাহিদুল। এতে তার সময় লেগেছে তিন বছর। তিনি ওই মাদরাসার প্রথম ব্যাচের ছাত্র।

মাত্র আড়াই বছরে হাফেজ হয়েছেন এ মাদরাসার দৃষ্টিপ্রতিব’ন্ধী আশেকে এলাহী। আরেক ছাত্র মোহাম্ম’দ সোহেল কোরআন মুখস্ত করেছেন ৬ বছরে। তবে সবার আগে হিফজ শেষ করে কোরআনের তাফসীর ও হাদিসগ্রন্থগুলো নিয়ে গত ৪ বছর ধরে পড়ালেখা করছেন দৃষ্টিপ্রতিব’ন্ধী হাফেজ ই’মাম হাসান এবং ইয়াছিন আরাফাত। সব ঠিক থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই তারা হয়ে উঠবেন আল কুরআনের তাফসীরকারক।

দৃষ্টিপ্রতিব’ন্ধী হাফেজ ই’মাম হাসান বলেন, যাদের চোখ আছে তারা নিয়মিত কোরআন পড়ে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত। আর যারা কোরআন পড়তে পারেন না, তারা কোরআন পড়া শিক্ষা উচিত।

স্থানীয় বাসিন্দা দৃষ্টিপ্রতিব’ন্ধী জহিরুল ইস’লাম বলেন, অনেকেই মনে করেন দৃষ্টিপ্রতিব’ন্ধী অর্থাৎ অন্ধ’রা ভিক্ষা ছাড়া কিছু পারে না। কিন্তু রাসূল (সা:) বলেছেন, ‘কোরআন মাজীদ শিক্ষা করা সর্বোত্তম ইবাদত। আর যিনি কোরআন শিখে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয় তিনি সবচেয়ে উত্তম।’ নবীর কথা অনুসরণ করে আম’রা মাত্র তিনজন দৃষ্টিপ্রতিব’ন্ধী ছাত্রকে নিয়ে এ মাদরাসায় কোরআন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করি। প্রথমে শুনে শুনে কোরআন শিখলেও পরবর্তীতে ব্রেইল পদ্ধতিতে কোরআন শিখতে শুরু করে ছাত্ররা। এতে দৃষ্টিপ্রতিব’ন্ধী ব্রেইল ক্বারি আবদুল মোহাইমেন সাহেবের ভূমিকা ছিল মুখ্য।

মাদরাসার প্রধান শিক্ষক ব্রেইল ক্বারি আবদুল মোহাইমেন বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের মাদরাসায় পাঁচজন হাফেজ হয়েছেন। এর মধ্যে চারজন কিতাব শাখায় অধ্যয়ন করছেন।

তিনি বলেন, সমাজে আম’রা দৃষ্টিপ্রতিব’ন্ধীরাই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত এবং ঘৃণিত। তাই দৃষ্টি প্রতিব’ন্ধীদের পরনির্ভরশীলতা থেকে বের করে এনে শিক্ষার মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল করে তোলার জন্যই আমাদের এ প্রচেষ্টা।

জে’লা সমাজসেবা উপ-পরিচালক নুরুল ইস’লাম পাটওয়ারী বলেন, দৃষ্টিপ্রতিব’ন্ধী শিক্ষার্থীরা সমাজের অন্যসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মতোই। শুধু তারা চোখে দেখে না। তাদের ইচ্ছাশক্তিতে সমাজে আলোকিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এদের শিক্ষা গ্রহণের ভাষা আমাদের চাইতে আলাদা। শহরের এ মাদরাসার কয়েক শিক্ষার্থী কোরআন শিক্ষায় শিক্ষিত। প্রতিষ্ঠানের কেউ যদি সরকারি কোনো বরাদ্দ চায় কিংবা আবেদন করে তাহলে জে’লা প্রশাসকের মাধ্যমে তাদের জন্য সু-বিবেচনা করা হবে।

তিনি আরও বলেন, সরকার দৃষ্টি প্রতিব’ন্ধীদের নিয়ে কাজ করে। তাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থাও আছে। সমাজসেবার মাধ্যমে সকল দৃষ্টি প্রতিব’ন্ধী শিক্ষার্থীদের ভাতা ব্যবস্থা করা হবে।

২০১৪ সালে ব্রেইল পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে আবদুল গণি দৃষ্টিপ্রতিব’ন্ধী ব্রেইল হাফিজিয়া ও ফোরকানিয়া মাদরাসা। কোরআন শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি ও গাণিতিক বিষয়ে পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছেন দৃষ্টিপ্রতিব’ন্ধীরা। এ মাদরাসায় ভর্তি হতেও কোনো টাকা লাগে না। বর্তমানে এখানে ২০ জন ছাত্র পড়া-লেখা করলেও ৬০ থেকে ৭০ জনের আবাসিকে থেকে পড়া-লেখার সুযোগ রয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: