সর্বশেষ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বদলির তালিকায় মৃত চিকিৎসকও

করো’নাভাই’রাস (কোভিড-১৯) মহামা’রিতে চিকিৎসা’সেবা নিশ্চিতে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতা’লে চিকিৎসকদের গণবদলি করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। সোমবার (৫ জুলাই) উপ-সচিব জাকিয়া পারভীন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বদলি করা হয় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জীবেশ কুমা’র প্রামাণিক স্বপনকেও।

আদেশে তাকে আগামী ৭ জুলাইয়ের মধ্যে বগুড়া ২৫০ শয্যা মোহাম্ম’দ আলী জে’লা হাসপাতা’লে যোগ দিতে বলা হয়। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডা. জীবেশ কুমা’র প্রামাণিক স্বপন গত ৬ জানুয়ারি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মা’রা যান। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ৩১তম ব্যাচের প্রাক্তন এ শিক্ষার্থী ২২তম স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মক’র্তা ছিলেন।

শুধু তিনিই নন, তার মতো ফেরদৌস আরা শেখ নামে রংপুর মেডিকেল কলেজের গাইনি অ্যান্ড অবস বিভাগের আরও এক মৃ’ত চিকিৎসককেও বদলি করা হয়েছে। এছাড়া চাকরি থেকে অবসরে যাওয়া রংপুর মেডিকেল কলেজের শি’শু বিশেষজ্ঞ ডা. মমতাজ বেগম ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. গিয়াসউদ্দিনকেও বদলি করা হয়েছে আদেশে।

জাকিয়া পারভীন স্বাক্ষরিত ২৬ পৃষ্ঠার পৃথক প্রজ্ঞাপনে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার মেডিকেল কলেজের শিক্ষককে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, সদর ও উপজে’লা হাসপাতা’লে সংযু’ক্তিতে বদলির তথ্য পাওয়া গেছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কোভিড-১৯ সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা ও জনসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার/স্বাস্থ্য সার্ভিসের কর্মক’র্তাদের তাদের নামের পাশে কর্মস্থলে সংযু’ক্তিতে বদলি করা হয়েছে।

করো’নাভাই’রাস মোকাবিলায় দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের করো’না রোগীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতা’লে গণবদলির ঘটনায় সাধারণ চিকিৎসকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবীণ শিক্ষকদের এ গণবদলির বি’রুদ্ধে বিক্ষুব্ধ মন্তব্য করতে দেখা গেছে চিকিৎসকদের।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) একাধিক শীর্ষ নেতা জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশের সরকারি সব মেডিকেল কলেজে অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা চলছে। করো’না রোগীর চিকিৎসার জন্য যাদের বদলি করা হয়েছে তারা মূলত মেডিকেল কলেজের মৌলিক বিভিন্ন বিষয়ের (এনাটমি, ফিজিওলজি, ফার্মাকোলজি, ফরেনসিক মেডিসিন) অধ্যাপক, সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক এবং লেকচারার হিসেবে শিক্ষকতা করেন। করো’না চিকিৎসার ব্যাপারে তারা অনভিজ্ঞ। তারা চলে গেলে ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণ নিয়ে জটিলতা দেখা দেবে। যে বদলির আদেশ হয়েছে সেখানে তাদের নামের পাশে পদবি দেয়া হয়নি, শুধু নাম আর রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেয়া হয়েছে, যা রীতিমতো অ’পমানজনক।’

স্বাচিপের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বলেন, ‘দেশের চিকিৎসকরা সম্মুখসারীর অগ্রজ যোদ্ধা হিসেবে কোভিড-১৯’র বি’রুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই করছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখনই চিকিৎসকদের যে নির্দেশনা দিয়েছেন দেশের আপাম’র চিকিৎসক সে নির্দেশনা শিরোধার্য জ্ঞানে যু’দ্ধক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। কিন্তু এই কোভিডকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কতিপয় আমলার চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ ও কর্মকা’ণ্ড পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকেই বারবার প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। গতকাল আকস্মিকভাবে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের কয়েকশ শিক্ষক-চিকিৎসকের গণবদলির আদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর বিরাজিত চিকিৎসাব্যবস্থাকে অস্থিরতার মুখে ঠেলে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয় তাদের খেয়ালখুশি মতো কোভিড চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার নাম করে শ’য়ে শ’য়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সদর হাসপাতাল, উপজে’লা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করেছে। কিন্তু বদলিকৃত হাসপাতা’লে এসব বিশেষজ্ঞের কাজ কী’ হবে, তা ন্যূনতম বিবেচনায় নেয়া হয়নি। বেসিক বিষয়ের শিক্ষকতায় যু’ক্ত চিকিৎসকরা উপজে’লা হেলথ কমপ্লেক্সে কোভিড রোগীদের কী’ সেবা দেবেন? এসব চিকিৎসক প্রায় প্রতিদিন দিনে এমনকি রাতেও অনলাইনে ক্লাস নিয়ে সিলেবাস শেষ করছেন কলেজগুলোতে, এ বদলি আদেশের ফলে ছাত্ররাও বঞ্চিত হবে শিক্ষকদের ক্লাস থেকে। বেসিক বিষয়ের অধ্যাপনার সঙ্গে যেসব চিকিৎসক সম্পৃক্ত তাদের প্রায় সবাই দীর্ঘসময় ধরে রোগীদের চিকিৎসা’সেবা থেকে দূরে, তারা হঠাৎ করে কোভিড রোগীদের কী’ চিকিৎসা’সেবা দেবেন সদর হাসপাতাল বা উপজে’লা হেলথ কমপ্লেক্সে?’

‘এ আদেশে বদলির আদেশাধীন চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ ৫০ পেরোনো, এ বয়সের চিকিৎসকদের কোভিড রোগীর চিকিৎসা দিতে বাধ্য করা কতোটা বৈজ্ঞানিক? এ সিদ্ধান্ত কি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম’র্থন করে?’

তিনি এ আদেশকে তুঘলকি মন্তব্য করে বলেন, ‘এ আদেশে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, শি’শুরোগ বিশেষজ্ঞ, চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ, নাক কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন, নিউরোসার্জন, জেনারেল সার্জন, ডেন্টাল সার্জন ইত্যাদি নানা বিশেষায়িত বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সদর হাসপাতাল ও উপজে’লায় বদলি করা হয়েছে। এসব চিকিৎসকের কোভিড রোগী চিকিৎসার ক্ষেত্র কোথায়? সদ্য বদলিকৃত কোভিড কর্মস্থলে তাদের করণীয়ই বা কী’ হবে?’

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘চ’মেক চট্টগ্রাম বিভাগের উন্নত চিকিৎসার একমাত্র হাসপাতাল। এখানে করো’না ছাড়াও নিয়মিত জটিল রোগ নিয়ে নানা রোগী আসেন। জটিল রোগের অনেক চিকিৎসক এই বদলির তালিকায় রয়েছেন। এতে হাসপাতা’লের জটিল রোগীরা মা’রাত্মক ভোগান্তিতে পড়বেন। যেমন- নিউরোসার্জন, কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের অধ্যাপক, পিসিআর ল্যাব প্রধান, দন্তচিকিৎসকক এ বদলির তালিকায় আছেন।

হাসপাতা’লে বর্তমানে প্রচুর ব্রেইন টিউমা’রের রোগী আছে। তাদের অ’পারেশনের কী’ হবে? তাছাড়া কলেজে সারা বছর যিনি অ্যানাটমি পড়িয়েছেন তাকে দিয়ে তো করো’নার চিকিৎসা করানো ঝুঁ’কিপূর্ণ হবে। আবার দাঁতের ডাক্তার করো’নার চিকিৎসায় কী’ করবেন? সবচেয়ে বড় কথা হাসপাতা’লের করো’না পরীক্ষার ল্যাব প্রধানকে বদলি করা হয়েছে। এতে করো’না ল্যাবটি অচল হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।’

জানতে চাইলে বিএমএ কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল  বলেন, ‘এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় ভৌতিক ও অগ্রহণযোগ্য আদেশ। আমি মনে করি এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বদলি আদেশের বিষয়ে স্বাস্থ্যের দুজন ডিজির কারও সঙ্গে কথা বলা হয়নি। এছাড়া একজন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গেও কথা বলা হয়নি। আমি মনে করি, এ আদেশ যারা দিয়েছেন তাদের মেডিকেল কলেজ স’ম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান নেই। একটি মেডিকেল কলেজ কী’ভাবে চলে, তার চিকিৎসা ব্যবস্থা কেমন, তা যদি জানতেন তবে তারা এ ধরনের ভৌতিক আদেশ দিতেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘মৃ’ত চিকিৎসকও তালিকায় আছেন। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, এটি কেমন অ’পরিক’ল্পিত আদেশ।’

মৃ’ত চিকিৎসকের নাম বদলির তালিকায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জাকিয়া পারভীন  বলেন, ‘বিষয়টি জানা ছিল না। তাছাড়া বড় বদলি আদেশ। হয়তো এজন্য ভুল হয়েছে। অ’সুবিধে নেই। আম’রা সংশোধন করে দেব।’

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সংযোগ স্থাপন করা যায়নি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: