সর্বশেষ আপডেট : ৬ ঘন্টা আগে
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

এমসি কলেজে গণধ`র্ষণ: বড়ভাইদের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয় রনি

সিলেটের প্রচীনতম বিদ্যাপিঠ এমসি কলেজে স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে ছিনিয়ে নিয়ে গণধ`র্ষণের ঘটনায় ইতোমধ্যে ৬ জন চিহ্নিত হয়েছে। তারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

এমসি কলেজের এই নেক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছে হবিগঞ্জের এক বখাটে। শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার বাগুনিপাড়া গ্রামের শাহ্ জাহাঙ্গীরের ছেলে শাহ্ মাহবুবুর রহমান রনি এ ঘটনায় জড়িত রয়েছে। এমন ঘটনায় রনি ও তার পরিবারের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করছেন এলাকার লোকজনসহ জেলাবাসী। পাশাপাশি রনিকে ধরিয়ে দিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার-প্রচারণা সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষ।

অনুসন্ধানে জানা যায়- শাহ্ মাহবুবুর রহমান রনি শায়েস্তাগঞ্জ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে এমসি কলেজে স্নাতকোত্তর অধ্যায়নরত রয়েছে। পড়ালেখায় মেধাবী রনি ছোটবেলায় অনেকটা শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিল। তবে কলেজে উঠার সাথে সাথে তার স্বভাব-চরিত্রে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। বিভিন্ন ধরণের নেশা, বখাটেপনা, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা ছিল তার নিত্যদিনের বিষয়। তবে এলাকায় থাকাকালীন সময় রাজনীতিতে সে ততোটা সক্রিয় ছিল না।

সিলেট যাওয়ার পর বড়ভাইদের ছত্র-ছায়ায় সেই রনি হয়ে উঠেন বেপরোয়া। ছাত্রলীগের সাথে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি গণধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি এম সাইফুর রহমানের নেতৃত্বে গড়ে ওঠেছে একটি গ্যাং। যে গ্যাংয়ের অন্যতম সদস্য শায়েস্তাগঞ্জের এই বখাটে রনি। এই গ্যাংটি ছিল এমসি কলেজ এলাকার আতঙ্ক। এমসি কলেজের ছাত্রবাস ভাঙচুর ও পুড়ানোর সাথেও এই গ্যাংটি জড়িত ছিল বলে জানান শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি ব্যবসায়িদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলতেন তারা। অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন সাংবাদিকদের হত্যার হুমকি দেয়ারও।

যারা এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে গেছে তারা জানেন বিকেলে ক্যাম্পাসের অন্যতম আতঙ্ক ছিনতাই। এমসি কলেজের ক্যাম্পাসটি অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় সেখানে প্রতিদিন বিকেলে অনেক মানুষ ঘুরতে যান। সেই পর্যটকদের টাকা, মোবাইল, মোটরসাইকেল, দামি হাতঘড়ি, নারীদের সোনা-গহনা ছিনতাইয়ের মূল চক্র ছিল সাইফুর গ্যাং। যার অন্যতম সহযোগি ছিলো শায়েস্তাগঞ্জের মাহবুবুর রহমান রনি।

এলাকাবাসীর দাবি- রনির উপর ভর করে তার পরিবার আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। সিলেটে চাঁদাবাজি-ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা বাড়িতে পাঠাত রনি। এলাকায় আসলে নিজেকে অনেক বড় ছাত্রলীগ নেতা দাবি করত সে। এলাকার বখাটেদের নিয়ে বেপরোয়া চলাফেরা ও রাতে নেশার আড্ডা বসাতো। কোমরে অস্ত্র নিয়ে চলাফেরাই ছিল তার লাইফস্টাইল।

এদিকে, এমন নেক্কারজন ঘটনার সাথে হবিগঞ্জের রনি জড়িত থাকায় লজ্জিত জেলাবাসী। রনি ও তার পরিবারের প্রতি ঘৃণা ও নিন্দার ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। পাশাপাশি রনিকে কুলাঙ্গার উপাধি দিয়ে ধরিয়ে দিতে ফেসবুকে তার ছবিসহ স্ট্যাটাস দিচ্ছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষ। নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন এলাকাবাসীও।

তবে রহস্যজনক কারণে রনির পক্ষে সাফাই গাইলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আব্দুল গফফুর। তিনি বলেন- শাহ্ মাহবুবুর রহমান রনির বাবা শাহ্ জাহাঙ্গীরের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। বলতে গেলে আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। আমার জানামতে রনি ভালো ছেলে। সে অনেক মেধাবী এবং এলাকায় আসলেও অনেক শান্ত স্বভাবের ছিল। সিলেটের ঘটনাটি শুনে আমি অভাক হয়েছি। সে এমন কাজ করতে পারে না।

এলাকার যুবসমাজের দাবি- রনি এলাকায় আসলে বখাটের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়ে যেত। ছাত্রলীগের ক্ষমতা দেখিয়ে সে নেশার আড্ডা বসানোসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালাতো। কেউ তার অপকর্মের প্রতিবাদ করলে অস্ত্র দিয়ে হুমকি দিত সে। এছাড়া তার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার সাহস পেত না।

অন্যদিকে, এমসি কলেজের গণধর্ষণের ঘটনা নিয়ে সারাদেশ এখন তোলপাড়। দেশের মূল আলোচ্য বিষয় এখন এই ঘটনাটি। বিভিন্ন স্থানে পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালালেও নীরব রয়েছে শায়েস্তাগঞ্জ থানা পুলিশ। ঘটনার পর ২৪ ঘন্টা অতিক্রম হলেও এখন পর্যন্ত রনিকে গ্রেপ্তার বা তার সম্পর্কে কোন খোঁজ-খবর নিতে তার বাড়ি বাগুনিপাড়ায় যায়নি পুলিশ।

এ ব্যাপারে শায়েস্তাগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মো. আল-মামুন বলেন- এখন পর্যন্ত সিলেট থেকে আমাদের কাছে কোন কাগজপত্র আসেনি। তবে যেহেতু এটি জাতীয় ইস্যু সেহেতু আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করব। তাকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালানো হবে।

উল্লেখ্য- শুক্রবার বিকেলে ২০ বছরের এক তরুণী তার স্বামীকে নিয়ে সিলেটের এমসি কলেজের ক্যাম্পাসে ঘুরতে যায়। এ সময় রাত সাড়ে ৮টার দিকে কয়েকজন বখাটে তার স্বামীকে ও তরুণীকে জোরপূর্বক কলেজ ছাত্রাবাসে তোলে নিয়ে যায়। পরে স্বামীকে একটি রুমে আটকিয়ে রেখে অপর রুমে ৫/৬ জন মিলে ওই তাকে ধর্ষণ করে। রাত ১০টার দিকে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদেরকে উদ্ধার করে। পরে গুরুত্বর আহত অবস্থায় ওই তরুণীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে ভর্তি করেন।

শুক্রবার রাতে ছাত্রলীগ ক্যাডার এম. সাইফুর রহমানের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের রুমে অভিযান চালিয়ে ১টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৪টি রামদা, ১টি ছোরা ও জিআই পাইপ উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় শনিবার সকালে শাহ্ পরান থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়া বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৭ কার্যদিবসের মধ্যে এই কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে ছাত্রাবাসের দুই নিরাপত্তা কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

এ বিভাগের অন্যান্য খবর

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: