সর্বশেষ আপডেট : ১০ ঘন্টা আগে
বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরেকটি আফগানিস্তান হচ্ছে ইয়েমেন

ডেইলি সিলেট ডেস্ক ::

আফগানিস্তানে নিজের তৈরি দানবকে দিয়ে সোভিয়েতদের পরাজিত করতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সোভিয়েতদের আফগানিস্তান থেকে বিতাড়িত করতে সফল হলেও আমেরিকার তৈরি সেই দানব, ওয়াশিংটনের ঘাড়ে দাঁত বসিয়ে দেয়। আর সেই বিষদাঁত উপড়ে ফেলতে প্রায় দুই দশক আফগানিস্তানে নিজের অর্থ, অস্ত্র আর সেনার প্রাণহানি ঘটিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ফলাফল ছিল শূন্য।

আফগানিস্তান থেকে শেষ পর্যন্ত নিঃশব্দে পিছু হটতে বাধ্য হয় ওয়াশিংটন। তবে সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা না নিয়েই ফের একই ভুলের পথে পা বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র—এবার লক্ষ্য ইয়েমেন। তবে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বাহিনী আর সমরাস্ত্র নিয়েও ইয়েমেনের বিদ্রোহীদের নতি স্বীকার করাতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র।

মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে দরিদ্র ও দুর্বল রাষ্ট্র ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের দমন করতে গত মার্চ থেকে বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের ওপর হুথিদের হামলা ও চাপ বেড়ে যাওয়ায়, তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয় যুক্তরাষ্ট্র। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তখন ঘোষণা দেন, ইয়েমেনের বিদ্রোহীদের ‘শায়েস্তা’ করা হবে। এর পরপরই একের পর এক বিমান হামলা চালানো শুরু করে মার্কিনবাহিনী।

তবে কৌশলগতভাবে দুর্বল ভাবা হুথি বিদ্রোহীরা পাল্টা আঘাত হানতে শুরু করলে হিমশিম খায় বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তিসমৃদ্ধ মার্কিনবাহিনী। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, হুথিরা অন্তত ৭টি এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন ভূপাতিত করেছে, যার প্রতিটির মূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের গর্ব হিসেবে পরিচিত এফ-৩৫ এবং এফ-১৬ যুদ্ধবিমানও প্রায় গুলি খেয়ে বিধ্বস্ত হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।

এর পাশাপাশি ইয়েমেনের বিদ্রোহীদের ক্রমাগত মিসাইল হামলা থেকে বাঁচতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি এফ/এ-১৮ সুপার হর্নেট পানিতে পড়ে যায়। এসব ঘটনায় অনেক বড়ো ক্ষয়ক্ষতি ও সেনাদের ঝুঁকি বাড়ায় মার্কিন সেনাবাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড কৌশল পুনর্বিবেচনায় বাধ্য হয়। অবশেষে ৬ মে থেকে ইয়েমেনে বিমান হামলা বন্ধ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

এই পরিস্থিতিতে ওমানের মধ্যস্থতায় হুথি বিদ্রোহীদের সঙ্গে গোপন আলোচনায় বসে ওয়াশিংটন। ফলাফলস্বরূপ, বিদ্রোহীরা ঘোষণা দেয়—লোহিত সাগর, বাব আল মান্দেব প্রণালি ও এডেন উপসাগরে আর কোনো মার্কিন টার্গেটে হামলা চালাবে না তারা। মূলত হুথিদের শক্ত প্রতিরোধ, মার্কিন অস্ত্রের বিপুল ক্ষতি এবং সেনা হতাহতের আশঙ্কা থেকেই এই সমঝোতা করতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র।

এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আফগানিস্তানের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা না নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আবারও এক ভয়ানক জটিলতায় জড়িয়ে পড়েছে। ইয়েমেন এখন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরেকটি আফগানিস্তানে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা জোরালো হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বল্প উন্নত ও আর্থিকভাবে বিধ্বস্ত দেশ হওয়া সত্ত্বেও, স্থানীয় প্রতিরোধ এবং আঞ্চলিক ভূরাজনীতির কারণে ইয়েমেনে সহজ জয় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্রের সামনে এখন বড় প্রশ্ন—তারা কি এবার সত্যিই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেবে, নাকি ইয়েমেনই হবে তাদের আরেকটি দীর্ঘ ও ব্যর্থ যুদ্ধের মঞ্চ?

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

এ বিভাগের অন্যান্য খবর

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম
নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
মোবাইল: ০১৭১২ ৮৮৬ ৫০৩
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: