সর্বশেষ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

বড়লেখায় এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ

খলিলুর রহমান (বড়লেখা প্রতিনিধি) :

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার মহদিকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজয় কুমার দে’র বিরুদ্ধে উঠে আসছে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ। সীমাহীন এই সকল দুর্নীতিতে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।

বিজয় কুমার দে’র বিরুদ্ধে স্কুলের গাছ বিক্রি থেকে শুরু করে স্কুলের বিভিন্ন বরাদ্দ আত্মসাতের মতো গুরুতর অভিযোগের পাশাপাশি এবার নিলাম ছাড়াই গোপনে স্কুলের অর্ধলক্ষাধিক টাকার পুরাতন সীমানা প্রাচীর বিক্রির অভিযোগও উঠেছে। বিগত হাসিনা সরকারের সমর্থীত এই শিক্ষক দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রধান শিক্ষক বিজয় কুমার দে’র বিরুদ্ধে ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এলাকার বর্ষিয়ান মুরব্বীরা এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন।

মহদিকুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক এলাকার বিশিষ্ট মুরব্বী আব্দুল খালিক বর্তমান প্রধান শিক্ষক বিজয় কুমার দে’র দুর্নীতির বিষয়ে এ প্রতিবেদকের সাথে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করেন। তিনি বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থ বৎসরে উন্নয়ন বাবদ ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, রুটিন মেইনটেনেন্স বাবদ ৩৬ হাজার ৪শ টাকা, স্লিপ বাবদ ৫০ হাজার টাকা, প্রাক প্রথমিক বাবদ ১০ হাজার টাকাসহ মোট ২ লাখ ৬৬ হাজার ৪শ টাকা বরাদ্দ পান, যার একটি টাকাও তিনি স্কুলের উন্নয়ন কাজে খরচ করেনি। উল্লেখ করা দরকার প্রধান শিক্ষক বিজয় কুমার দে প্রতি বছর স্লিপের ৫০ হাজার ও প্রাক প্রাথমিকের ১০ হাজার এই মোট ৬০ হাজার টাকা প্রতি বছর নিয়মিত পেয়ে থাকেন।
আব্দুল খালিক আরো বলেন, বছর তিনেক আগে কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই স্কুলের প্রাচীন একটি বড় গাছ বিক্রি করে সেই টাকাও আত্মসাত করেন। বিভাগীয় তদন্ত হলে এই সত্যও বেরিয়ে আসবে বলে দাবি করেন সাবেক এই প্রধান শিক্ষক।

জানা গেছে, উপজেলার মহদিকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলিত বছরের শুরুতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সীমানা প্রাচীর ও গেট নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে। এলজিইডি স্কুলের পুরনো সীমানা প্রাচীর অপসারণের নির্দেশ দিলে প্রধান শিক্ষক বৈধ প্রক্রিয়া ছাড়াই অর্ধলক্ষাধিক টাকা মূল্যের পাকা সীমানা প্রাচীর বিক্রি করে দেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থী অভিভাবক আব্দুল খালিক, জসিম উদ্দিন, সুফিয়ান আহমদ, আব্দুর রহমান, মাহমুদুর রহমান প্রমুখ অভিযোগ করেন, স্কুলের নতুন বাউন্ডারি নির্মাণের জন্য পুরাতন বাউন্ডারি ভেঙ্গে ফেলার প্রয়োজন দেখা দেয়। যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ স্কুলফান্ডে জমা রাখার নিয়ম রয়েছে। প্রচারণা চালিয়ে প্রকাশ্যে বিক্রির ব্যবস্থা নিলে ৪০-৫০ ফুট এই পুরাতন সীমানা প্রাচীর অন্তত ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হতো। কিন্তু প্রধান শিক্ষক বৈধ প্রক্রিয়া ছাড়াই গোপনে মাত্র ১০ হাজার টাকায় স্কুলের সাবেক সহসভাপতির কাছে সীমানা প্রাচীর বিক্রি করে দেন। এই টাকাও স্কুল ফান্ডে জমা দেননি প্রধান শিক্ষক। এছাড়া বছর খানেক আগে স্কুলের মাঠ ভরাটের জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে ‘কাবিখা’ প্রকল্পে প্রায় ১ লাখ টাকার বরাদ্দ মিলে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক অর্ধেক টাকারও মাটি ভরাট করেননি।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার জোবায়ের আলম জানান, স্কুলের কোনো কিছুই বৈধ প্রক্রিয়া ছাড়া বিক্রির সুযোগ নেই। সীমানা প্রাচীর বিক্রির বিষয়টি তিনি জানেন না। প্রকাশ্যে নিলাম ও নিলামকৃত অর্থ স্কুল ফান্ডে জমা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। প্রধান শিক্ষক কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারেন না। এ ব্যাপারে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিবেন।

সরেজমিনে গেলে প্রধান শিক্ষক বিজয় কুমার দে স্কুলের পুরাতন সীমানা প্রাচীর বিক্রির বৈধ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গত এপ্রিলে স্কুল বন্ধ থাকাকালিন সহসভাপতি হাছান আলী বেবুল দেওয়াল ভেঙ্গে ইট, বালু, রড নিয়ে গেছেন। ১০ হাজার দিবেন বললেও দেননি। তার দাবি সরকারি বরাদ্দ যথাযথভাবে তিনি ব্যবহার করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, মহদিকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সরকারি হবার পর নতুন নকশায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। সেই ক্ষেত্রে পুরাতন সীমানা প্রাচীরটি ভেঙেফেলা হয়েছে। পুরাতন সীমানা প্রাচীরটি এলাকাবাসীর উদ্যোগে তৈরী করা হয়েছিলো ভেঙে ফেলার পর তারাই সেগুলো নিয়ে গেছেন। এইক্ষেত্রে আমাদের বলার কি থাকতে পারে?

প্রধান শিক্ষক বিজয় কুমার দে’র ক্ষমতার দাপট যে এতই, ইতিপূর্বে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্কুলের উন্নয়ন কাজের সরকারি বরাদ্দ আত্মসাতে জন্য তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করায় সাবেক এক মন্ত্রীকে দিয়ে তৎকালিন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. রফিজ মিয়াকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে খুলনা বিভাগের দ্বীপ উপজেলা শ্যামনগরে স্ট্যান্ডরিলিজ করিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তার (প্রধান শিক্ষক) বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা সেই চিঠি মৌলভীবাজার জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় থেকে গায়েব করে ফেলেন।

ওই চিঠির সূত্রমতে, বিগত তিন অর্থবছরে মহদিকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্লিপ বরাদ্দ দেওয়া হয় ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্কুলে সরেজমিন তদন্ত করে দেখতে পান ৩ অর্থবছরে প্রধান শিক্ষক বিজয় কুমার দে স্লিপ বাবদ ৪০ হাজার টাকার কাজ করে অবশিষ্ট ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা আত্মসাত করেন। ২০২০-২১ অর্থবছরে রুটিন মেইনটেনেন্স বাবদ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়ে তিনি ২৭ হাজার টাকার একটি স্লিপার কিনে বাকি ১৩ হাজার টাকা আত্মসাত করেছেন। প্রাক-প্রাথমিকের ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেলেও কোনো কাজই করেননি।

সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. রফিজ মিয়া জানান, মহদিকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজয় কুমার দে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতার ঘনিষ্ট আত্মীয়। আর ওই আওয়ামী লীগ নেতার খুবই ঘনিষ্ট ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের এক মন্ত্রী। বিজয় কুমার দে’র বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দ আত্মসাত, দায়িত্বে ফাঁকি, বিভাগীয় নির্দেশনা অমান্যসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির ব্যাপারে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়াই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সে ওই মন্ত্রীকে দিয়ে ২০২২ সালের ২ ডিসেম্বর ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমাকে বড়লেখা থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরবর্তী খুলনা বিভাগের শ্যামনগর উপজেলায় স্ট্যান্ড রিলিজ করায়। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে পাঠানো সেই চিঠিও গায়েব করে ফেলে। তিনি ওই অভিযোগের ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।

প্রায় আড়াই বছর আগে তার বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দ আত্মসাতের ব্যাপারে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার চিঠি জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় থেকে গায়েব করার অভিযোগ বিজয় কুমার দে অস্বীকার করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজরাতুন নাঈম জানান, লিখিত অভিযোগটি একজন কর্মকর্তাকে তদন্ত করতে দিয়েছেন। প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

এ বিভাগের অন্যান্য খবর

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম
নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
মোবাইল: ০১৭১২ ৮৮৬ ৫০৩
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: