সর্বশেষ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

হাওরে হাওরে সোনার ধান গোলায় তোলার উৎসবে মাতুয়ারা কৃষক

ডেইলি সিলেট ডেস্ক ::

জেলার মাটিয়ান হাওরের কৃষক সাদেক আলীসহ অনেকেই বলেন,একটা সময় হাওরে ধান কাটার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শ্রমিক আসতেন। এখন এটা একবারে কমে গেছে। স্থানীয় ভাবেও শ্রমিক মেলে না। তাই এখন ধান কাটার যন্ত্রের ওপরই ভরসা। কিন্তু হাওরে পানি থাকলে মেশিনে ধান কাটায় সমস্যা হয়।

সুনামগঞ্জে জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলার ছোট বড় ১৩৭টি হাওরে বোরো ধানের আবাদ হয়। এবার জেলার হাওরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ ৭০ হাজার ২০০মেট্রিক টন। জেলায় ধান কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য ৮৫০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টর আছে। মেশিনে ৫৫ ভাগ এবং শ্রমিকেরা ৪৫ ভাগ জমির ধান কাটবেন।

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন,সার্বিক পরিস্থিতি এখনও ভাল রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমরা কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করছি আগা ৫ মে এর মধ্যে সম্পূর্ণ ধান কাটা শেষ হবে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন,

ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস নেই আগামী ২০শে এপ্রিল পর্যন্ত। তবে এই সময় সুনামগঞ্জে ও উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে কিন্তু এ কারনে বন্যার পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান,কিছু দিন পূর্বে

ঝড় বৃষ্টিতে কিছুটা আতঙ্ক দেখা দিলেও তা কেটে গেছে। নির্বিঘ্নে কষ্টে ফলানো সোনার ধান কৃষকগন সহজে গোলায় তুলতে পার তার জন্য সব কিছুই করা হবে। ধান পাকছে আশা জাগছে হাওরের কৃষকের মনে। হাওরের যে দিকে চোখ যায় সে দিকেই এখন কৃষকের শ্রমে ঘামে জমিতে ফলানো সোনার ধান গোলায় তোলার উৎসবে মাতুয়ারা কৃষক ও তাদের পরিবার। বাতাসে নতুন ধানের গন্ধে চারদিকে এক ভিন্ন রকম পরিবেশ বিরাজ করছে হাওর জুড়ে। হাওরে এখন পুরে ধান কাটা শুরু হয়েছে।

ভাল ফলনে কিষান কিষানির নির্মল হাসিতে চোখে মুখে আগামী দিন গুলো আনন্দে কাটানোর তৃপ্তির হাসিঁ। মনের আনন্দে নতুন বছরে নতুন আশা নিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ধান কাটা,মাড়াই আর শুকানো শুরু করেছেন তারা।

সুনামগঞ্জের হাওরে বৈশাখ জুড়ে এ উৎসবে গ্রামের বাইরে থাকা স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও ছুটে আসেন পরিবারের অন্যদের সহযোগিতা করতে।

কারন এই ধানের উপর নির্ভর করে তাদের পুরো বছরের খরচ,ছেলে মেয়ে লেখা পড়া,বিয়ে শাদিসহ নানান খরচ। এই ধান তুলতে পারলেই তারা ধনী। আর এই ধানে কোনো কারনে ক্ষতি গ্রস্থ হলে অভাব জড়িয়ে সীমাহীন কষ্টের শেষ থাকেনা।

তবে কিছু দিন পূর্বেও ঝড়বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ায় সোনার ফসল হারানোর আতংক কেটে গেছে রৌদ্রময় আবহাওয়ায়। সকাল থেকেই হাওরে পাকা সোনালী ধান কাটে খলায় এনে মাড়াই করতে ব্যস্থ সময় পার করছে।

কৃষি বিভাগের জানিয়েছেন,এবার ধানের ফলন ভাল হয়েছে আর নির্বিঘ্নে হাওরের ফসল গোলায় তুলতে পারলে সুনামগঞ্জে ৪ হাজার ১১০ কোটি টাকার ধান উৎপাদিত হবে।

আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢল থেকে বিস্তীর্ণ হাওরের ফসল রক্ষায় প্রতি বছর সুনামগঞ্জের প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) ছোট বড় ৪০টি হাওরে ফসল রক্ষায় বেড়িবাঁধ সংস্কার ও নির্মাণ করে। জেলার ১২টি উপজেলায় ৭৩৫টি প্রকল্পে ৫৯১কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার হয়েছে। এতে প্রাক্কলন ধরা আছে ১৩০কোটি টাকা। ২৮শে ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেটি হয়নি। পরে সময় আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,প্রতি বছরেই কৃষকরা তাদের কষ্টে ফলানো ধান গোলায় তুলতে পারেন এমন টা হয় না। ২০১৭সালের হাওর বিপর্যয়ের সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো তাঁদের তাড়িয়ে বেড়ায়। কোনো ভাবেই ফসল রক্ষা করা যায় নি বাঁধ ভেঙে পানিতে হাওর ডুবে যাওয়ায় সে বছর হাওর থেকে একেবারে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল কৃষকদের। ২০২২ সালে বছর অন্তত ২০টি হাওরে ফসলহানি হয়েছিল। ২০২৩ সালে নির্বিঘ্নে ধান গোলায় তুলেছেন কৃষকরা।

আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢল থেকে বিস্তীর্ণ হাওরের ফসল রক্ষায় প্রতি বছর সুনামগঞ্জের প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ছোট বড় ৪০টি হাওরে ফসল রক্ষায় বেড়িবাঁধ সংস্কার ও নির্মাণ করে। জেলার ১২টি উপজেলায় ৭৩৫টি প্রকল্পে ৫৯১কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার হয়েছে। এতে প্রাক্কলন ধরা আছে ১৩০কোটি টাকা। ২৮শে ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেটি হয়নি। পরে সময় আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়।

টাংগুয়ার হাওর পাড়ে কৃষক হাদিউজ্জামান সহ

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই সময় টায় সুনামগঞ্জ জেলার উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে অতিবৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। আর উজানে ভারী বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢল নেমে আগাম বন্যা দেখা দেয় জেলার হাওরে। ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে কিংবা বাঁধ উপচে হাওরের ফসল তলিয়ে ফেলে।

জেলার দেখার হাওর পাড়ে কৃষক হাবিবুর রহমান জানান,মার্চের শেষ সপ্তাহ এবং এপ্রিলের শুরুতে ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি হওয়ায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল হাওরের কৃষকদের মধ্যে। ইতিমধ্যে জেলার করেকটি হাওরে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়া বেশ কিছু ধান নিমজ্জিত হয়েছে। এতে ওই সব জমির কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কিন্তু গত তিন দিন বৃষ্টি না হওয়ায় মনে স্বস্তি ফিরেছে। এবার হাওরে বৃষ্টির পানি থাকায় মেশিন দিয়ে ধান কাটাতে সমস্যা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: