cialis fiyat cialis sipariş http://umraniyetip.org/
Fapperman.com DoEscortscialis viagra viagra cialis cialis viagra cialis20mgsite.com geciktirici sprey azdırıcı damla
ডেইলি সিলেট ডেস্ক ::
সোনালি ধানের গান ঝরিতেছে ঝরঝর উঠোনের পরে…।’ হাওরে, কৃষকের উঠানে এখন চোখ রাখলেই কবিতার এই পঙ্ক্তি মনে পড়বে আপনার। হাওরের হাওয়ায় পাকা ধানের ম–ম গন্ধ। সেই গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে পুবালি বাতাসে। পাকা ধানের ঘ্রাণ আশা জাগিয়েছে কৃষকের প্রাণে। এখানে বৈশাখ আসে নতুন ফসলের ঘ্রাণে, কিষান-কিষানির নির্মল হাসিতে। এবারও তা-ই হয়েছে। হাওরে ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। ঈদ আর নতুন বর্ষবরণের উৎসবের পর এবার আরেক উৎসব শুরু হলো হাওরে—বোরো ধান কাটার উৎসব। এই ধানই হাওরপাড়ের লাখো কৃষকের ‘ধন’। এই ধানেই মিশে আছে তাঁদের ‘মান’।
সুনামগঞ্জের হাওরের প্রধান ফসল এই বোরো ধান। শ্রমে-ঘামে ফলানো সোনার ধান নির্বিঘ্নে গোলায় তুলতে পারলেই হাওরের কৃষক ‘ধনী’। অকালবন্যা, অতিবৃষ্টি কিংবা অন্য কোনো কারণে ফসলের ক্ষতি হলে কৃষক পরিবারে দুঃখের সীমা থাকে না। সারা বছরের খাবার তো বটেই, এই ধান ঘিরে কত স্বপ্ন, কত আশা থাকে মানুষের। সন্তানের লেখাপড়া, বিয়েশাদি, উৎসব-আনন্দ— সবকিছুর জন্যই এই ধানের ওপর নির্ভর করেন হাওরবাসী। সারা বছর যে কৃষক হাড়ভাঙা খাটুনি খাটেন, তিনিও মনে মনে ঠিক করে রাখেন—ধান উঠলে সেই ধান বিক্রির টাকায় স্ত্রীর জন্য একখানা নতুন শাড়ি কিংবা মা-বাবাকে একটা নতুন শাড়ি-লুঙ্গি কিনে দেবেন। তাই নতুন বছরে, নতুন আশা নিয়ে সেই ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকেরা।
হাওরের এই বৈশাখী উৎসবে কৃষক পরিবারের নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-শিশু সবাই যোগ দেন। এমনকি গ্রামের বাইরে থাকা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীও ছুটে আসেন পরিবারের অন্যদের সহযোগিতা করতে। দিন–রাত হাওরে কাটে তাঁদের। কালবৈশাখী কিংবা বৈশাখের তপ্ত রোদ তাঁদের কাছে নস্যি। জেলার দেখার হাওরপাড়ের ইসলামপুর গ্রামের কিষানি সমলা বেগমের কথায় সেটি যেন স্পষ্ট হলো। তিনি বলেন, ‘এই এক মাস কষ্ট করলে সারা বছর যে সুখে থাকমু। ইতা রইদ, মেঘ আমরার কাছে কোনো কষ্ট না। আমরা খুশিমনে সহ্য করি।’
কৃষকেরা জানান, সব সময় যে তাঁরা এই ধান গোলায় তুলতে পারেন এমনটা না। ২০১৭ সালের হাওর-বিপর্যয়ের সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো তাঁদের তাড়িয়ে বেড়ায়। সে বছর হাওর থেকে একেবারে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল তাঁদের। গত বছর নির্বিঘ্নে ধান গোলায় তুলেছেন। এর আগের বছর অন্তত ২০টি হাওরে ফসলহানি হয়েছে।
গত সপ্তাহের ঝড়বৃষ্টিতে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, সেটি অবশ্য কেটে গেছে। এখন আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সবার মধ্যেই একটা স্বস্তির ভাব আছে। তবে ‘শঙ্কামুক্ত’ নয়। বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের কেন্দ্রীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাতের আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাদিক বিষয়টি তুললেন। তিনি বলেন, ‘সুনামগঞ্জের জন্য এই সময়টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। হাওরে আমাদের সোনার ফসল। সৃষ্টিকর্তার কাছে করজোড়ে প্রার্থনা—আমরা যেন নিরাপদে আমাদের ফসল গোলায় তুলতে পারি।’
সুনামগঞ্জের হাওর বোরো ধানের ভান্ডার। জেলার চাহিদা মিটিয়ে এই ধান যোগ হয় কেন্দ্রীয় খাদ্যভান্ডারে। তাই এ সময় হাওরে সবার বিশেষ দৃষ্টি থাকে।
আশার মধ্যেও যেটি শঙ্কার, তা হলো—এই সময়টায় সুনামগঞ্জ ও জেলার উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে অতিবৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। উজানে ভারী বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢল নেমে আগাম বন্যা দেখা দেয় হাওরে। ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে কিংবা বাঁধ উপচে হাওরের ফসল তলিয়ে দেয়।
এবারও মার্চের শেষ সপ্তাহ এবং এপ্রিলের শুরুতে ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি হওয়ায় সবার মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল। বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কয়েকটি হাওরে বেশ কিছু ধান নিমজ্জিত হয়েছে। এতে ওই সব জমির কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কিন্তু গত চার দিন বৃষ্টি না হওয়ায় তাঁদের মনে স্বস্তি ফিরেছে। এখন রোদ ওঠায় সবাই খুশি। এভাবে ১৫ থেকে ২০টি দিন পেলেই হবে, বলছিলেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার করচার হাওরপাড়ের কৃষক স্বপন কুমার বর্মণ।
জেলার ছোট-বড় ১৩৭টি হাওরে এবার ২ লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ ৭০ হাজার ২০০ মেট্রিক টন।
সুনামগঞ্জে আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢল থেকে বিস্তীর্ণ হাওরের ফসল রক্ষায় প্রতিবছর প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ৪০টি হাওরে বেড়িবাঁধ সংস্কার ও নির্মাণ করে। এবার ১৩০ কোটি টাকা ব্যয় করে জেলার ১২টি উপজেলায় ৭৩৫টি প্রকল্পে ৫৯১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে, ধানের ফলনও ভালো। তাই আশায় বুকে বেঁধে মাঠে নেমেছেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জেঠার হাওরপারের মাহিনুর ইসলামের মতো কৃষকেরা।