সর্বশেষ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

দেশের অন্যতম দীর্ঘ সুরমা নদী এখন শীর্ণ খাল

ডেইলি সিলেট ডেস্ক ::

কোথাও খেলা হচ্ছে ক্রিকেট, কোথাও ফুটবল। শিশু-কিশোরদের হইহুল্লোড়ে চর এলাকা প্রাণবন্ত। তবে প্রাণহীন দেশের অন্যতম দীর্ঘ নদী সুরমা। এর বুকে কোথাও জন্ম নিয়েছে সবুজ ঘাস। কোথাও তলদেশ ভরাট হয়ে পরিণত হয়েছে শীর্ণ খালে। আর উৎসমুখ ভরাট হয়েছে বহু আগেই।

সিলেট নগরীর পানি নিষ্কাশনে সুরমায় খননকাজ চললেও বন্যা থেকে নগরীকে বাঁচাতে নেই পরিকল্পিত উদ্যোগ। তাই ২০২২ সালের মতো আবারও প্রবল বন্যার আতঙ্ক বিরাজ করছে সিলেটবাসীর মধ্যে।

নগরীর শাহজালাল সেতু থেকে দক্ষিণ সুরমার কুচাই পর্যন্ত দীর্ঘ এলাকাজুড়ে জেগেছে বিশাল চর। চরের ওপর কোথাও গজিয়েছে সবুজ ঘাস। দেখে মনে হবে খেলার মাঠ। নদীর দু’পাশ দিয়ে বইছে সরু পানির ধারা। শুধু নগরীর আশপাশের এই এলাকাতেই এই অবস্থা নয়, এই নদীর পুরোটাজুড়েই এখন এমন করুণ দশা।

নদীর উৎসমুখ জকিগঞ্জের অমলসীদ থেকে কানাইঘাট উপজেলার লোভাছড়ার সংযোগস্থল পর্যন্ত অসংখ্য স্থানে চর জেগেছে। তলদেশ ভরাট হওয়ার ফলে শুষ্ক মৌসুমে পুরো নদী ভরাট হয়ে যায়। অন্যদিকে বর্ষাকালে অল্প বৃষ্টিতেই দেখা দেয় বন্যা। আর নদীর দুই তীরে সৃষ্টি হয় তীব্র ভাঙন। সিলেট অঞ্চলের প্রধান এই নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের নদীকেন্দ্রিক পণ্য পরিবহন। ফলে বাড়ছে পরিবহন ব্যয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, নদীর অন্তত ২৫-৩০ কিলোমিটার অংশ বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের সীমান্ত এলাকায়।

গত এক যুগে চার দফায় নদীটি খননের উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবে কাজ হয়েছে কম। ২০১৯ ও ২০২১ সালে দুটি সমীক্ষা চালানো হয়। সর্বশেষ বছর দেড়েক আগে ভয়াবহ বন্যায় সিলেটের ১১টি উপজেলা আক্রান্ত হয়। ডুবে যায় নগরীর অর্ধেকের বেশি এলাকা। এরপর ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সুরমা নদীর ১৮ কিলোমিটার অংশে খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু এখনও কাজ শেষ হয়নি।

সুরমা সিলেটের কানাইঘাট, গোলাপগঞ্জ ও সিলেট সদর হয়ে সুনামগঞ্জে গিয়ে মিশেছে। প্রায় ২৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ সুরমা নদীর ১১০ কিলোমিটারই পড়েছে সিলেটে। গত দুই দশকে এর ৪০-৪৫ শতাংশ অংশে চর পড়েছে। অন্য এলাকায় নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে।

দক্ষিণ সুরমার কুশিঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুরো নদী শুকিয়ে শীর্ণ খালে পরিণত হয়েছে। নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে খেলা করছে শিশু-কিশোররা। সিলেট ক্যান্টনমেন্ট পাবালিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদাত পারভেজ জানায়, তারা ৪-৫ বছর ধরে নদীর চরে খেলা করছে। তবে তার বাবা বলেছেন, আগে এ সময়ও নদীতে বেশ পানি থাকত।

কুশীঘাট এলাকার বয়োবৃদ্ধ আবুল কালাম আজাদ বলেন, গেল কয়েক বছর ধরে দেখছেন চর জেগে উঠছে। তিনি নিজেও নদীর চর বেয়ে ওই পাড়ে গেছেন। অথচ বর্ষায় ওই পাড়ে যাওয়া ছিল অনেকটা কঠিন। এমনকি এই মৌসুমে তাদের সাঁতরে নদী পাড়ি দিতে হতো।

মীরেরচক এলাকার আব্দুল জলিল বলেন, দীর্ঘ দিন প্রবাসে ছিলাম। দেশে আসার পর দেখলাম সুরমার ব্যাপক পরিবর্তন। বাড়ির লোকজন তীর থেকে নদীর মধ্যভাগ পর্যন্ত সবজি চাষ করেছেন। এই নদী দিয়ে আমরা জাহাজ চলাচল করতে দেখেছি। এখন তো শুষ্ক মৌসুমে নৌকাও চলে না।

নদীরক্ষা বিষয়ক সংগঠন ওয়াটারকিপার অ্যালায়েন্সের সদস্য আব্দুল করিম কিম বলেন, আসামের বরাক ও সুরমার মিলনস্থল অমলসীদে পলি পড়ে সুরমার উৎসমুখ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে শুষ্ক

মৌসুমে মূল উৎস বরাক থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকে সুরমা। তখন লোভা, ডোনা নদীর মতো ছোট ছোট নদীর পানিই ভরসা সুরমার। তিনি জানান, সুরমা ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি এখন দ্রুত অপসারণ হয় না। ফলে বর্ষা মৌসুমে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, প্রতি ৫ বছর পর পর নদী খনন না করলে সুফল পাওয়া যায় না। ২০১৫ সালে নগরীর কানিশাইল এলাকায় খনন হয়েছিল। আর ২০২৩ সালে সিলেট নগরীর কুশিঘাট এলাকা থেকে সদর উপজেলার জাঙ্গাইল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে পাঁচটি প্যাকেজে কাজ শুরু হয়। প্রায় ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। জুনের মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ হবে বলে আশা এই কর্মকর্তার।

তিনি বলেন, সুরমায় পলির চেয়ে বেশি জমেছে পলিথিন। খনন করতে গিয়ে দেখা যায়, পলিথিনের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এত পলিথিন জমেছে যে, ড্রেজিং মেশিন ১০ মিনিট পর পর বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে খননকাজে বিলম্ব হচ্ছে। তিনি আরও জানান, সুরমার উৎসমুখ জকিগঞ্জের অমলসীদে খনন দরকার। কিন্তু এটি দুই দেশের যৌথ সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: