সর্বশেষ আপডেট : ৪ ঘন্টা আগে
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরোক্ষ পদ্ধতিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন


মোঃ কায়ছার আলী: ব্রিটিশদের শাসনের কখনো সূর্য অস্ত যেত না। চিরকাল কারও আধিপত্য থাকে না। ১৭৬৩ সালের পর ইংরেজ শাসকগণ উপনিবেশগুলোর উপর কঠোরভাবে নীতি অবলম্বন করেন। মানব ইতিহাসের গতিধারায় একটি জনগোষ্ঠী আরেকটি জনগোষ্ঠী কর্তৃক দীর্ঘদিন শাসিত হতে চান নি। ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই তৎকালীন ১৩টি (বর্তমানে ৫১টি) অঙ্গরাজ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় ইউনিয়ন বৃটেনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং কংগ্রেসে তা অনুমোদিত হয়। বৃটেন ছয় বছর যুদ্ধ করার পর অবশেষে ১৭৮৬ সালের ৩০ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা স্বীকার করে নেয়।

১৭৮৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয় এবং ১৭৮৪ সালে ১৪ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র তা অনুমোদন করে। ১৪৯২ সালে ক্রিস্টোফার কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করে। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম সেনাপতি ছিলেন জর্জ ওয়াশিংটন। তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কমিশন প্রাপ্ত ছিলেন এবং ফরাসিদের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের পক্ষে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন। তবে যথাযথ সম্মান না পাওয়ায় সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন। বাহ্যিক ভাবে আমেরিকা ও বৃটেনের মধ্যে যুদ্ধের সব রকম সুবিধাই ছিল বৃটেনের পক্ষে। হাতের মুঠোয় ছিল সাংগঠনিক ক্ষমতার পাশাপাশি গোটা সাম্রাজ্যের সম্পদ, বৃহত্তম নৌবাহিনী ও বিশ্বের সবচেয়ে সুসজ্জিত সেনাবাহিনী।

আমেরিকার পক্ষে আমাদের মত ছিল দেশের পবিত্র মাটি আর দেশপ্রেম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার। তিনি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, নির্বাহী সরকার প্রধান ও ফেডারেল সরকারের প্রধান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সবোর্চ্চ রাজনৈতিক আসনে সমাসীন। তিনি দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানও বটে। ১৭৮৭ সালে ফিলাডেলফিয়ায় সংবিধান রচিত হয়। সংবিধানে ১৫-১৬ পৃষ্টা এবং ৬ হাজার শব্দের বেশি নয়। ২৪৪ বছর সংবিধান সংশোধন হয়েছে মাত্র ২৭ বার। ৪ মার্চ ১৭৮৯ মার্কিন সংবিধান কার্যকর হওয়ার পর এ যাবৎ ৪৪ জন ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। শুরুতে মৌখিতভাবে প্রচলিত ছিল যে দুই বারের বা আট বছরের বেশি কেউ প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। ইতিহাসে ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা ঘটিয়েছিলেন ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। তিনি ৪ মেয়াদে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

১৯৫১ সালের সংবিধানের ২২তম সংশোধনী অনুযায়ী দুই বারের বেশি কোন মার্কিনী প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারবেন না। পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ৪ বছর মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে হলে কমপক্ষে তিনটি শর্ত থাকতে হবে। ১) যুক্তরাষ্ট্রীয় নাগরিক, ২) ৩৫ বছর বয়স, ৩) ন্যুনতম ১৪ বছর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে হবে। প্রতি ৪ বছর অন্তর নভেম্বর মাসের প্রথম সোমবারের পরের মঙ্গলবার এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শপথ অনুষ্ঠান হবে ২০ এ জানুয়ারি। মোট ৫৩৮টি (৪৩৮+১০০) আসন বা ইলেকট্ররাল কলেজ। কমপক্ষে ছোট রাজ্যে, ৩টি (ওয়াশিংটন ডিসি), বড় রাজ্যে ৫৫টি (ক্যালিফোর্নিয়া), নিউইয়র্কে ৩৩টি, ফ্লোরিডায় ২৫টি ইত্যাদি। নির্বাচনে জয়ী হতে হলে প্রেসিডেন্টকে কমপক্ষে (৫৩৮২+১) ২৭০ টি ইলেকট্রোরাল ভোট পেতে হবে।

একটু ক্লিয়ার করে লিখছি, ধরুন আমাদের দিনাজপুরে জাতীয় সংসদের ৬টি বা রংপুর বিভাগের ৩৩টি সংসদীয় আসন রয়েছে। যদি কোন দল দিনাজপুরে বা রংপুর বিভাগে বেশি পপুলার ভোট পায় তবে ওই আসনগুলো পুরোটাই বিজয়ী দলের। কিন্তু আমাদের দেশে প্রতিটি আসনে জয় পরাজয় নির্ধারিত হয়। আর তাদের হয় অঙ্গরাজ্যভিত্তিক। যে যেই অঙ্গরাজ্যে জিতবে ওই অঙ্গরাজ্যগুলোর সব নির্বাচক মন্ডলী বিজয়ী দলের। ৫৯ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হবে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ, প্রতিনিধি পরিষদও উচ্চকক্ষ সিলেট এবং গভর্নর পদে নির্বাচন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বির্তক সংস্কৃতি অনেক পুরোনো। যেটা ১৯৬০ সালের নির্বাচনের ঠিক পূর্ব মূহুর্তে অনুষ্ঠিত হয়েছিল রিচার্ড নিক্সন এবং জন এফ কেনেডির মধ্যে।

টিভিতে প্রচারিত প্রেসিডেন্সিয়াল বির্তক তাদের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিতর্কের উপস্থাপক প্রশ্ন করেন এবং প্রার্থীরা উত্তর দেন। বিতর্কের ফলাফল ভোটের উপর প্রভাব ফেলে। মেট তিন দফায় এ বিতর্ক হয়। প্রথম দফা ২৯ শে সেপ্টেম্বর ওহাইও, দ্বিতীয় দফা ১৫ অক্টোবর ফ্লোরিডা (আপাতত স্থগিত), তৃতীয় দফা ২২ অক্টোবর টেনিসিতে অনুষ্ঠিত হবে। রিপাবলিকান পার্টি ডোনাল্ড ট্রাম্প (৭৪) রানিং মেট মাইক পেন্স, ডেমোক্রেটিক পার্টি জো বাইডেন (৭৮) রানিং মেট কমলা হ্যারিস। কে বা কোন দলের প্রার্থী জয়ী হয়ে ৩ নভেম্বর হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন তা সারা বিশ্ববাসী দেখার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছেন।

আলোচনা সমালোচনা যাই যাই থাকুক না কেন, ভেটো প্রদানকারী কোন কোন দেশ তাদের সংবিধান অনুযায়ী তাদের রাষ্ট্রপ্রধানকে আজীবন ক্ষমতায় থাকার সুযোগ দিয়েছেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে কেউ কেউ চার/পাঁচ যুগের বেশি ক্ষমতায় আছেন। কোথাও কোথাও কিছু অরাজনৈতিক, রাজনৈতিক মহান ব্যক্তিত্ব রাজনীতি থেকে অবসরের পরেও পুনরায় ক্ষমতা বা পদ নিয়ে প্রায় শতাধিক বছর বয়সেও নেতৃত্ব ছাড়তে চান না। মার্কিন গণতন্ত্র যেন বিপন্ন না হয় বা নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হয় এজন্য দুই বারের বেশি প্রেসিডেন্ট না হওয়ার বিধানটি কি উত্তম নয়?

লেখকঃ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: