সর্বশেষ আপডেট : ১১ ঘন্টা আগে
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

মরছে সুরমা দেখছে না কেউ

 বিশাল মাঠে খেলায় মত্ত কিশোর-যুবকরা। কোথাও চলছে ফুটবল, আবার কোথাও ক্রিকেট। আর এই খেলার আয়োজন কোনো স্টেডিয়াম বা নির্ধারিত মাঠে নয়। সিলেটে সুরমা নদীতেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে খেলাধুলার নানা আয়োজন। বিভিন্ন স্থানে সুরমার বুকে জেগে ওঠা চরে আয়োজন করা হয়েছে টুর্নামেন্টেরও। এ ছাড়া দুই পাড়ের মানুষ ইচ্ছামতো বর্জ্য ফেলছেন নদীতে। কেউ বুক চিরে তুলছেন বালু। সবাই মিলে তিলে তিলে মেরে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছেন একসময়ের স্রোতস্বিনী সুরমাকে। বোবা সুরমার আর্তনাদ শোনারও যেন কেউ নেই।

ভারতের বরাক নদী সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার আমলসীদ সীমান্ত দিয়ে সুরমা ও কুশিয়ারা হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। একসময় এই নদী দিয়ে সিলেটের ব্যবসায়ীরা সারা বছর পণ্য পরিবহন করতেন। এখনো বর্ষা মৌসুমে সুরমা নদী দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধান, পাথর, চুনাপাথর, বালু, কয়লা ও সিমেন্ট পরিবহন করা হয়ে থাকে। তবে শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে বন্ধ হয়ে পড়ে নৌ চলাচল। সরেজমিন সিলেট নগরীর কুশিঘাট, মাছুদিঘির পাড়, চাঁদনীঘাট, কানিশাইল ও কাজিরবাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে চলা সুরমা নদী এখন পুরোটাই শুকিয়ে গেছে। পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে নদীর বুক। জেগে উঠেছে বিশাল বিশাল চর। প্রয়োজনে হেঁটে নদী পার হচ্ছেন লোকজন। কয়েকটি স্থানে নদীর বুকে শিশু-কিশোরদের ফুটবল ও ক্রিকেট খেলতেও দেখা যায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ভারতের বরাক নদী দিয়ে আসা পানি সুরমা ও কুশিয়ারা দিয়ে প্রবাহিত হয়। শুষ্ক মৌসুমে বরাক থেকে আসা পানির ৭০ ভাগ চলে যায় কুশিয়ারা নদী দিয়ে। উৎসমুখ ভরাট হয়ে যাওয়ায় মাত্র ৩০ ভাগ পানি আসে সুরমা নদীতে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে সুরমা নদীতে দেখা দেয় পানি সংকট। এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে পানির সঙ্গে উজান থেকে আসা পলিমাটি এবং বিভিন্ন স্থানে দখল ও দূষণের কারণে দিন দিন নদী ভরাট হয়ে গেছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নদী খনন না হওয়ায় ধীরে ধীরে স্রোতস্বিনী সুরমা হারিয়েছে তার যৌবন। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বর্ষা মৌসুমে সুরমা নদীর ওয়াটার লেভেল থাকে ১১-১২ মিটার। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে এই লেভেল ১ মিটারের নিচেও নেমে আসে।

পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের প্রধান নির্বাহী মো. আবদুল হাই আল হাদী বলেন, অপরিকল্পিতভাবে নদীশাসন, পরিকল্পনাহীনভাবে সেতু নির্মাণ ও খননের উদ্যোগ না নেওয়ায় সুরমা নদীর প্রায় পুরোটাই ভরাট হয়ে পড়েছে। নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় প্রতিবছর বন্যা ও ভাঙনের শিকার হচ্ছেন লোকজন। এতে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এদিকে আশার কথা হচ্ছে, সুরমা নদীর বিভিন্ন অংশ খননে ১২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে পাস হয়েছে। তবে এ বছরই শুরু হচ্ছে না খননকাজ।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ শহীদুজ্জামান সরকার জানান, সিলেট সদরের দশগ্রাম, বিশ্বনাথের লামাকাজির রাজাপুর ও মাহতাবপুর এলাকায় সুরমা নদীর খননকাজের জন্য একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল। ওই প্রকল্পটি একনেকে পাস হয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) এই প্রকল্প নিয়ে কিছু সম্ভাব্যতা যাচাই করবে। কোন স্থানে কতটুকু খনন করা প্রয়োজন এবং খননের পর এর স্থায়িত্ব কী হবে এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তারা প্রতিবেদন দাখিল করবে। এই প্রতিবেদন পাওয়ার পরই প্রকল্পের খননকাজ শুরু হবে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সুরমার তীরবর্তী বিভিন্ন কারখানা তাদের বর্জ্য পানিতে ফেলে দেয়। কালিঘাটের ব্যবসায়ীরাও একইভাবে বর্জ্য ফেলে পানিদূষণ করছেন। সুরমাকে বাঁচাতে হলে তীরবর্তী এলাকা থেকে সব ধরনের কল-কারখানা সরিয়ে নিতে হবে। সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া কোনোভাবেই সুরমা নদীকে বাঁচানো সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন মেয়র আরিফ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: