সর্বশেষ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ২১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

সিলেট-আখাউড়া রেলপথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন যাত্রীরা

তামিম মজিদ ::

সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনের ১৮০ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ১৭০ কিলোমিটারই জরাজীর্ণ। অর্থাৎ শতকরা ৯০ ভাগ রেলপথ দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, এ পথের ৮০ ভাগ সেতুর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৩টি সেতু অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে প্রতিদিন সিলেট-ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলো যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলছে।

এ পথেই চলে দেশের সবচেয়ে পুরাতন ইঞ্জিন ও কোচ। ২৯ সিরিয়ালের পুরনো ইঞ্জিন দিয়ে পরিচালিত হয় সিলেটগামী ট্রেন। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। দেশের অন্য অঞ্চলে যেখানে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা আধুনিক ইঞ্জিন-বগি ব্যবহার হচ্ছে, সেখানে সিলেটবাসী এখনো জরাজীর্ণ ট্রেনে যাতায়াত করতে বাধ্য। রেলওয়ের নিজস্ব তথ্য অনুযায়ী, এ রুটেই দেশের সবচেয়ে বেশি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। সেতু ভেঙে বগি খালে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার। এছাড়া লেভেলক্রসিংয়ের ৮৮ শতাংশই অবৈধ। সব মিলিয়ে সিলেট রেলপথ এখন আতঙ্কের অন্য নাম।

উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত সিলেট

১৮৯৬ সালে আসাম-কুলাউড়া-চট্টগ্রাম রেলপথ চালু হয়। ১৯১৫ সালে চালু হয় কুলাউড়া-সিলেট অংশ। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ১২৯ বছরেও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি এই রেলপথে। রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এসেছে বহুবার, কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। সিলেটবাসীর অভিযোগ, অন্যান্য অঞ্চলে রেলের উন্নয়ন হলেও সিলেটকে বরাবরই অবহেলা করা হয়েছে।

২০১৮ সালে সিলেট-আখাউড়া মিটারগেজ লাইনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু প্রতি কিলোমিটারে খরচ দাঁড়ায় ৫৮ কোটি টাকা, যা ঢাকার নারায়ণগঞ্জ অংশের তুলনায় ছয় গুণ বেশি। অতিরিক্ত ব্যয় ও অর্থায়ন জটিলতার কারণে ২০২০ সালে প্রকল্পটি বাতিল হয়ে যায়। এতে আবারও ভেঙে পড়ে সিলেটবাসীর আশা।

আন্দোলনে সোচ্চার জনপদ

২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সিলেট রেলপথের উন্নয়নে নতুন করে আন্দোলনে নামে স্থানীয়রা। কুলাউড়া, শ্রীমঙ্গল, ভাটেরা, টিলাগাঁওসহ বিভিন্ন স্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি ও ধর্মঘট পালন করা হয়। সর্বশেষ গত ২৭ সেপ্টেম্বর কুলাউড়া রেলস্টেশনে এক ঘণ্টাব্যাপী ট্রেন অবরোধ করে স্থানীয়রা। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবরোধ উঠে যায়।

৮ দফা দাবিতে আন্দোলনকারীরা বলছেন, অবিলম্বে সংস্কার কাজ শুরু না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  • সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-কক্সবাজার রুটে দুটি স্পেশাল ট্রেন চালু
  • আখাউড়া-সিলেট রেলপথ সংস্কার ও ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ
  • অন্তত একটি লোকাল ট্রেন চালু
  • সব বন্ধ স্টেশন পুনরায় চালু
  • কুলাউড়া জংশনে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি
  • আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি সংশোধন
  • সিডিউল বিপর্যয় রোধে উন্নত ইঞ্জিন ব্যবহার
  • যাত্রীচাহিদা অনুযায়ী প্রতিটি ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোজন

কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম এবং পরিচালনা করেন আতিকুর রহমান আখইর। এতে বক্তৃতা করেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকরা।

রেলওয়ের নীরবতা

বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের প্রশ্ন— এত উন্নয়নের ভিড়ে সিলেট-আখাউড়া রেলপথ কেন এখনো অবহেলিত?

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

এ বিভাগের অন্যান্য খবর

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম
নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
মোবাইল: ০১৭১২ ৮৮৬ ৫০৩
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: