সর্বশেষ আপডেট : ৫৪ মিনিট ৫৫ সেকেন্ড আগে
বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

অস্থায়ী আদালতে আগুন দিল কারা, কখন?

ডেইলি সিলেট ডেস্ক ::

পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতের এজলাস কক্ষটি কারা পুড়িয়ে দিয়েছে তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। আগুনের কারণ নিয়ে মুখ খুলতে চায় না ফায়ার সার্ভিস। পুলিশ বলছে, ৫ অগাস্টের পর সেই কক্ষে আগুন দেয়া হয়েছে বলে তারা শুনেছে। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, একদল ব্যক্তি বুধবার রাতে ওই আগুন দিয়েছে।

সাড়ে পনের বছর আগে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় বৃহস্পতিবার ওই আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ ও জামিন শুনানির কথা ছিল। তবে মাদ্রাসা মাঠে আদালত বসানোর প্রতিবাদে রাতভর আন্দোলনের পর বৃহস্পতিবার সকালে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের মধ্যেই রাতের বেলা আগুনে পুড়েছে অস্থায়ী আদালতের এজলাস কক্ষ।

দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পুড়ে যাওয়া এজলাস কক্ষ পরিদর্শন করেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়া। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউশন টিম, আইনজীবী ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। বিচারক রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে ১২টা ১০ মিনিটে চলে যান।

প্রসিকিউশন টিমের প্রধান বোরহান উদ্দিন বলেন, আজকের প্রেক্ষাপটে আদালত পরিচালনা করার মত পরিবেশ নাই। বিচারক এটা অবহিত হয়েছেন। মামলার পরবর্তী তারিখটা কবে হবে- আমাদের ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সাথে কথা বলে বিচারক ঠিক করবেন।

“তারিখটা আজকেই জানিয়ে দেয়া হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তারিখ নির্ধারণ করা হবে। জামিন শুনানির বিষয় নিষ্পত্তি হোক- এটা নিয়ে আমরা সবাই আন্তরিক ছিলাম। তা তো হলো না।”

ব্রিটিশ আমলে পিছিয়ে পড়া বাঙালি মুসলমানদের জন্য ১৭৮০ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা। সার্ধশত বছর বাদে দেশভাগ হলে মাদ্রাসাটির নতুন ঠিকানা হয় লক্ষ্মীবাজারের ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমান কবি নজরুল সরকারি কলেজ)। পরে ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে সরিয়ে নেওয়া হয় বকশীবাজারের বর্তমান স্থানে।

অস্থায়ী আদালত বসানো মাঠটি নিয়ে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের সঙ্গে আলিয়া মাদ্রাসার দ্বন্দ্ব বহু দিনের। ২০০৯ সালের শুরুতে তাদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর আসামিদের বিচারে মাঠটিতে অস্থায়ী আদালত বসানো হয়। সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও বিচার হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এজলাস কক্ষে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানকার সব আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। বিশাল কক্ষটিতে সারি সারি গ্রিলের খাচা বসানো, যেখানে একসঙ্গে হাজারখানেক আসামিকে বসানোর ব্যবস্থা ছিল।

আদালত কক্ষের তাপ নিরোধক আচ্ছাদন, এসি, এজলাসের চেয়ার-টেবিল কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। ঘুলঘুলির কাঁচগুলোও ভেঙেচুড়ে রাখা হয়েছে।

তবে কে করল এই কাজ, তার জবাবে সবাই লা জবাব। পুলিশ বলছে, তাদের কাছে আগুনের কোনো তথ্যই নেই।

পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের কাছে জানতে যাওয়া হয়েছিল, “অস্থায়ী আদালতে কে আগুন দিল?”

তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, “কখন আগুন দিয়েছে?”

তাকে বলা হয়, বুধবার ভোররাতে এখানে আগুন লাগার তথ্য সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

লালবাগের ডিসি বলেন, “এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। আমি জানি না, আপনারা কোথা থেকে তথ্য পেলেন।

“আমাকে আরো কয়েকজন সাংবাদিক ভাই ফোন দিয়েছিলেন। কারা আগুন দিল, কখন আগুন দিল- এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।”

ডিসি জসীম বলেন, “সেখানে ধোঁয়ার খবর পেয়ে আমাদের লোক গিয়েছিল। সেখানে আজকের প্রোগ্রামের কিছু আয়োজন চলছিল, মাটির কিছু ঘাসলতা পুড়ছিল। আমাদের লোক আদালত ভবনে কোনো আগুন পায়নি।”

এই পুলিশ কর্মকর্তা পাল্টা প্রশ্ন করেন, “আপনারা কি কাউকে জিজ্ঞেস করেছেন, ‘এখানে কখন আগুন লেগেছে’?”

ছাত্রদের উদ্ধৃত করে বলা হয়, বুধবার এখানে আগুন লাগার কথা তারা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে।

তখন ডিসি জসীম বলেন, “আমাদেরকে অনেকে বলেছে, ওখানে আগুন দেওয়া হয়েছিল ৫ (অগাস্ট) তারিখের ঘটনার পর।”

তবে আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্ররা বলছেন, বুধবার রাতে তারা সেখানে আগুন দেখেছেন।

দুপুরে এজলাস কক্ষটিতে ছবি তোলার সময় আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন, কাজ শেষ হয়েছে কি না। তিনি ওই কক্ষে তালা মেরে দেয়ার অপেক্ষায় আছেন বলে জানান। টিভি স্টেশনের সংবাদকর্মীরা তখন আশরাফুলকে জানান, ২টায় ‘লাইভ’ শেষ করে তারা চলে যাবেন।

তখন আলাপচারিতায় আশরাফুল বলেন, বুধবার মধ্যরাতে কয়েকজন লোক এসে ওই মাঠের ফটকে লাগানো তালা ভাঙা বা কাটার চেষ্টা করেন। ওই সময় ছাত্ররা মাঠে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণীর আয়োজনে ব্যস্ত ছিল, যে অনুষ্ঠান বৃহস্পতিবার দুপুরে হয়েছে।

এই শিক্ষার্থীর ভাষ্য, ফটকে তালা ভাঙা বা কাটার চেষ্টা দেখতে পেয়ে ওই লোকগুলোকে ধাওয়া দেয় ছাত্ররা। এরপর তারা নিজেদের মাঠ রক্ষার দাবিতে পাশের সড়কে ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ অবস্থান নেয়। স্থানীয় পুলিশের কর্মকর্তারাও সেখানেই ছিলেন।

মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত ছাত্ররা সেখানে ছিল বলে আশরাফুল দাবি করেন।

ওই লোকগুলো কারা, এ প্রশ্নের উত্তরে আশরাফুল বলেন, “আমরা মনে করি, তারা সরকারি কোনো সংস্থার লোক।”

তাহলে আগুন কে দিল, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “সেটা আমরা জানি না। আমরা যখন রাস্তায় ছিলাম, তখন হয়তো তৃতীয় কোনো পক্ষ এসে সুবিধা নিয়েছে।”

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে আলিয়া মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক আশরাফুল কবীরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

অস্থায়ী আদালতের আগুনের কারণ সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হননি লালবাগ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান।

তিনি বলেন, “ভোরে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। আগুনে এজলাস কক্ষের চেয়ার, টেবিল, এসিসহ সবকিছু পুড়ে গেছে।”

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম বলেন, “ভোর ৪টা ২২ মিনিটে বকশিবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে আগুনের খবর পেয়ে আমাদের দুইটি ইউনিট পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে লোকজনের বাধার মুখে আমাদের কর্মীরা ভেতরে ঢুকতে পারেনি।

“পরে ভোর ৫টার পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভেতরে গেলেও কাজ করতে হয়নি। ততোক্ষণে এজলাসকক্ষ পুড়ে গেছে।”

আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র মুক্তার হোসেনের সঙ্গে দেখা হল মাঠের কোণে। তিনিও বলছেন, ছাত্ররা রাস্তায় ছিল; এ সময় কে বা কারা এসে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে- তারা সেটা জানেন না।

পুড়ে যাওয়া স্থাপনাটির পাহারায় পুলিশ বা সরকারি কোনো সংস্থার সদস্যদের দুপুরে দেখা যায়নি। তখন মাঠে মাদ্রাসার ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান চলছিল। অনুষ্ঠানের পর একজন ছাত্র অস্থায়ী আদালত কক্ষটি তালা মেরে চলে যান।

মাঠের উল্টো পাশের চা দোকানি সবুজ মিয়া বলেন, “গেছে কাল রাইতে আগুন দিছিল বলে হুনছি। আমি আছিলাম না।”

পোড়া এজলাস কক্ষ দেখতে এসেছিলেন পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক মামলার আসামিপক্ষের এক আইনজীবী।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে তিনি বলেছেন, তার দুজন আসামির শুনানি হওয়ার কথা ছিল বৃহস্পতিবার। প্রথমে তাদের জানানো হয়েছিল, সেশন জজ আদালতে শুনানি হবে। পরে জানানো হয়, কেরাণীগঞ্জে অস্থায়ী আদালতে শুনানি হবে।

রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি জানতে পারেন, শুনানি হবে বকশীবাজারে। সকালে ঘুম থেকে উঠে জানতে পারেন, আদালত কক্ষটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি হান্নান ভূইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এর আগে আওয়ামী লীগ আমলে আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে বিডিআর মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।

“৫ অগাস্টের পর আজই প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ ও জামিন শুনানির দিন ধার্য করা ছিল। কিন্তু এজলাস আগুনে পুড়ে যাওয়ার কারণে তা হয়নি।”

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

 

এ বিভাগের অন্যান্য খবর

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম
নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
মোবাইল: ০১৭১২ ৮৮৬ ৫০৩
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: