সর্বশেষ আপডেট : ৭ ঘন্টা আগে
রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৬ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

আলোচিত ‘জল্লাদ’ শাহজাহান মারা গেছেন

ডেইলি সিলেট ডেস্ক ::

দেশজুড়ে আলোচিত ‘জল্লাদ’ শাহজাহান ভূঁইয়া মারা গেছেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৬ আসামিসহ ৬০ জনের ফাঁসির দড়ি টেনেছেন।

সোমবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

‘জল্লাদ’ শাহজাহানের বোন ফিরোজা বেগম মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ভাই বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকার অদূরে হেমায়েতপুরে থাকতেন। রোববার রাতে তার বুকে ব্যথা শুরু হলে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।

এর আগে ১৯৯১ সালে আটক হওয়ার আগে ও পরে শাহজাহানের নামে মোট ৩৬টি মামলা হয়। এরমধ্যে একটি অস্ত্র মামলা, একটি ডাকাতি মামলা এবং বাকি ৩৪টি হত্যা মামলা।

বিচারকাজে দেরি হওয়ার কারণে সাজা ছাড়াই তিনি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত চার বছর হাজতি হিসেবে কারাগারে থাকেন। ১৯৯৫ সালে তার সাজা হয় ১৪৩ বছরের। পরে ৮৭ বছরের সাজা মাফ করে তাকে ৫৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ফাঁসি কার্যকর ও সশ্রম কারাদণ্ডের সুবিধার কারণে সেই সাজা ৪৩ বছরে এসে নামে।

দুটি মামলায় পাঁচ হাজার টাকা করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাস করে অতিরিক্ত এক বছর জেল খেটে ৩২ বছর পর অবশেষে মুক্ত আকাশের নিচে শ্বাস ফেলার সুযোগ পান জল্লাদ শাহজাহান।

জানা যায়, সাজার মেয়াদ কমানোর বাসনায় কয়েদি থেকে জল্লাদ বনে যান শাহজাহান। একের পর এক অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন চার দেওয়ালের বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পেতে।

তৎকালীন সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ জানান, জল্লাদ শাহজাহান ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৬ জনের ফাঁসি দিয়েছেন। এরমধ্যে ছয়জন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, চারজন যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গি নেতা বাংলাভাইসহ দুজন জেএমবি সদস্য এবং আরও ১৪ জন অন্যান্য আলোচিত মামলার আসামির ফাঁসি কার্যকর করেছেন তিনি।

যেভাবে আটক হন-

নারীঘটিত একটি ঘটনার পরে শাহজাহান বাংলাদেশের একজন বহুল পরিচিত সন্ত্রাসীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। তাছাড়া কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করার পর থেকে যেকোনো ‘অপারেশনে’ তার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরমধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অপারেশন করেছিলেন ১৯৯১ সালে মাদারীপুর জেলায় এবং এটাই ছিল তার জীবনের সবশেষ অপারেশন। অপারেশন শেষে মানিকগঞ্জ হয়ে ঢাকায় ফেরার চেষ্টা করছিলেন শাহজাহান। তবে গোপন সূত্রে পুলিশের কাছে পৌঁছে যায় সেই খবর।

মানিকগঞ্জে পুলিশ চেকপোস্ট বসালে শাহজাহান তার ওই এলাকার বাহিনীর মাধ্যমে তা জানতে পারেন। কিন্তু সব জেনেও ঐ এলাকা দিয়েই ঢাকায় ফেরার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। মানিকগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিও হয়। কিন্তু পুলিশ তাকে ধরতে পারেনি। এরপর ঢাকায় পৌঁছে যখন নরসিংদীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন, পথিমধ্যে পুলিশ তাকে আটক করে। সেদিনই তার গতিময় জীবনের সমাপ্তি এবং এরপর থেকে বন্দিজীবন শুরু হয়।

জল্লাদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ-

জীবনের সোনালী সময়গুলো কারাগারেই কাটাতে হবে- এমন ভাবনা থেকে শাহজাহান চিন্তা করলেন, জল্লাদ হিসেবে সময় দিলে তার সাজা কিছুদিনের জন্যে হলেও কমবে। তাই নিজেকে অন্যভাবে প্রস্তুত করার জন্য জেল সুপারের কাছে গিয়ে জল্লাদের খাতায় নাম লেখানোর আগ্রহপ্রকাশ করেন।

তিনি সহযোগী জল্লাদ হিসেবে গফরগাঁওয়ের নূরুল ইসলামকে ফাঁসি দিয়ে তার জল্লাদ জীবনের সূচনা করেন। এটাই তার জীবনে প্রথম কারাগারে কাউকে ফাঁসি দেওয়ার ঘটনা। এই কাজে শাহজাহানের যোগ্যতা দেখে আট বছর পর কারা কর্তৃপক্ষ তাকে প্রধান জল্লাদের স্বীকৃতি দেয়।

প্রধান জল্লাদ হওয়ার পর আলোচিত ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানকে প্রথম ফাঁসি দেন শাহজাহান। তিনি জানান, একটি ফাঁসি দিতে প্রধান জল্লাদের সঙ্গে ছয়জন সহযোগী লাগে এবং ফাঁসির রায় কার্যকর করলে প্রত্যেক জল্লাদের দুই মাস চার দিন করে কারাদণ্ড মওকুফ হয়। এছাড়া, কারাগারে যারা জল্লাদ হওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করে, কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শাহজাহান তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: