সর্বশেষ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

সিলেটে অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা ‘প্যাকিং হাউজ’

ডেইলি সিলেট ডেস্ক ::

সিলেট থেকে সরাসরি পণ্য রপ্তানির ব্যাপক চাহিদা থাকলেও তা যেন অনেকটা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে। ওসমানী বিমানবন্দরে কার্গো কমপ্লেক্স প্রস্তুত থাকলেও প্যাকিংয়ের অনুমতি না থাকায় তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। যে অনুমতি কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে আসতে হবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সিলেটে কোন অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা পড়ে আছে রপ্তানির অপরিহার্য প্যাকিং হাউজ। তারা বলেছেন, সিলেটে প্যাকিং হাউজের দাবি অনেকদিন থেকে। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে বারবার আশ্বাস দিয়ে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। এতে সরকার এবং ব্যবসায়ী উভয়েরই আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। তাই বিষয়টি আশ্বাস নয় সকল আমলাতান্ত্রিক জটিলতা মুক্ত হয়ে দ্রুত বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তাদের। ইতিমধ্যে কৃষমন্ত্রীর সাথে সিলেট চেম্বার সভাপতি দেখা করে এটির দাবি জানিয়েছেন। কৃষিমন্ত্রীও ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছেন।

সিলেট অঞ্চলের যেসব পণ্যের বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে তারমধ্যে আছে শিম, সাতকরা, শুঁটকি, জারা লেবু, বোম্বাই মরিচ বা নাগা মরিচ। শুঁটকি ও নাগা মরিচ দেশের অন্য অঞ্চলে পাওয়া গেলেও সাতকরা কেবল সিলেট অঞ্চলেই হয়। বছরের পর বছর রপ্তানি হচ্ছে সাতকরা, শুঁটকি ও জারা লেবু। কয়েক বছর ধরে নাগা মরিচ ও গোয়ালগাদ্দা শিম যাচ্ছে বিদেশে।

প্রতিবছর এসব পণ্য রপ্তানি হয় ৬শ থেকে ৭শ টন। তবে সিলেটে এসব পণ্যের বাণিজ্যিক উৎপাদন বাড়লেও প্যাকিং হাউজ না থাকায় ছন্দপতন ঘটছে রপ্তানিতে। কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহের পর ঢাকায় প্যাকিং হয়ে সেই পণ্য যাচ্ছে বিদেশে। এতে সময় লাগছে বেশি। পাশাপাশি পণ্যের সতেজ ভাব নষ্ট হচ্ছে। রপ্তানিকারকরা তাই সিলেটে দ্রুত প্যাকিং হাউস চালুর দাবি জানান। তারা বলেন, ওসমানী বিমানবন্দরে কার্গো ভিলেজ নির্মাণ শেষ হয়েছে। এতে প্যাকেজিং হাউস করা সহজ হয়েছে।

ওসমানী বিমানবন্দর পরিচালক হাফিজ আহমদ জানান, কার্গো কমপ্লেক্স সম্পন্ন হয়ে গেছে। প্যাকিং হাউসের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিলে আমাদের দিক থেকে সবধরনের সহযোগিতা থাকবে।

সুবিধা : ব্যবসায়ীরা জানান, যুক্তরাজ্যের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের ব্যাপক চাহিদা আছে। তাছাড়া ফ্রান্স, পর্তুগাল, বেলজিয়াম ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, কাতার, দুবাই, ওমানসহ কয়েকটি দেশে সিলেটে উৎপাদিত সাতকরা, শুঁটকি, জারা লেবু ও নাগা মরিচের বিশাল বাজার রয়েছে। তাই সিলেট অঞ্চলের অনেক কৃষক এসব পণ্য উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এতে ব্যবসার পরিধি আরও বিস্তৃত হওয়ার সুযোগ আছে। এরফলে আরও দ্রুত সময়ে পণ্য সরবরাহ করা যাবে। এতে পণ্য নষ্ট কম হবে। পরিবহণ ও সংরক্ষণ খরচ কমে যাবে। ব্যবসা বাড়লে সরকার ব্যবসায়ী উভয়েরই লাভ হবে। সিলেট অঞ্চলে ব্যবসা আরও প্রসারিত হবে।

অন্যদিকে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্যাকিং হাউস ব্যবস্থা চালু হলে সিলেট বিভাগে উৎপাদিত পণ্যের বাইরেও নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জেলার রফতানিকারক এ বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবেন। এখান থেকে তারা পণ্য রফতানি করতে পারবেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

অসুবিধা: সিলেটে প্যাকিং হাউস না থাকায় শাকসবজি ও ফলমূল রফতানির জন্য এখনো ঢাকার শ্যামপুরে যেতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। কারণ যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অনুমোদিত প্যাকিং হাউজের মাধ্যমে প্যাকেজিং করে কোয়ারেন্টিন সার্টিফিকেট নিতে হয়। এ সুবিধা একমাত্র শ্যামপুরেই আছে। ফলে সিলেট থেকে উৎপাদিত এসব পণ্য ঢাকায় নিয়ে যেতে বাড়তি খরচের প্রয়োজন পড়ছে। দীর্ঘ সময়ের কারণে অনেক পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে সিলেট চেম্বারের সাবেক সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদ বলেন, প্যাকিং হাউজের বিষয়টি অনেকদিন থেকে দেবো, দিচ্ছির মধ্যে আটকে আছে। এটি দ্রুত করা উচিত। এতে সরকার এবং ব্যবসায়ী উভয় লাভবান হবেন। ব্যবসার পিরিধি বাড়বে। সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদের সাথে সিলেট চেম্বার সভাপতি তাহমিন আহমেদ দেখা করে এ বিষয়ে দাবি জানিয়েছেন। মন্ত্রী এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ^স্ত করেছেন। আমরা চাই শুধু আশ্বাস নয়, দ্রুত এর বাস্তবায়ন হোক।

সিলেট থেকে পণ্য রফতানিতে ‘ প্যাকিং হাউজ ব্যবস্থা’ না থাকায় ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে পণ্য রফতানি করতে পারছেন না এখানকার রফতানিকারকরা। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অত্যাধুনিক কার্গো টার্মিনাল নির্মিত হলেও সেটি কোনো কাজে লাগছে না। ফলে বছরে অন্তত ১০০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবল অ্যান্ড এলাইড প্রডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা মঞ্জুর আহমদ জানান, সিলেট থেকে পণ্য রপ্তানি বাড়ছে। গত বছর রপ্তানি হয় সবচেয়ে বেশি ৭শ টন, যা ২০২২ সালে ছিল ৫শ ৫০ টন এবং ২০২১ সালে ৪শ টন।

ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি কেজি সাতকরা ৩-৪ পাউন্ড, নাগা মরিচ প্রতি পিস ৭ পেনি, জারা লেবু প্রতি কেজি ৫ পাউন্ড, গোয়ালগাদ্দা শিম ৪ পাউন্ড, বিভিন্ন জাতের শুঁটকি (সিঁদল, গজার, শোল, টাকি) প্রতি কেজি ৫ থেকে ২০ পাউন্ড দরে রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শুধু গোয়ালগাদ্দা শিম বছরে তিন মাস এবং বাকিগুলো প্রায় সারাবছর রপ্তানি হয়। সিলেট থেকে প্রতিদিন লেবু ১ হাজার পিস, নাগা মরিচ ১০ হাজার পিস, শিম ৫ হাজার কেজি ও শুঁটকি ৫ হাজার কেজি রপ্তানি হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

রপ্তানি প্রসঙ্গে জালালাবাদ ভেজিটেবল অ্যান্ড ফ্রোজেন ফিশ এক্সপোর্টার গ্রুপের সভাপতি মো. মুস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, ১০ বছর আগে সিলেট থেকে দু-একটি পণ্য রপ্তানি হতো। এখন আটটি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। দিন দিন বাজার সম্প্রসারণ হলেও এলাকায় প্যাকিং হাউস না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। এজন্য ওই সব পণ্য সিলেট থেকে ঢাকায় নিতে হচ্ছে। এতে অনেক সময় চলে যায়, পণ্য নষ্টও হয়। তিনি বলেন, ‘সিলেটে কার্গো টার্মিনাল হয়েছে। এখন পথ অনেক সোজা। অনায়াসে সেখানে প্যাকিং হাউস করা যায়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: