ডেইলি সিলেট ডেস্ক ::

ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইহুদিবাদী দেশটি। এরইমধ্যে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

শনিবার (৭ অক্টোবর) ইসরায়েলে ভয়াবহ হামলা করে গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস। এই হামলায় এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহত হয়েছে ১২শ’র বেশি মানুষ। পঞ্চমদিন পর্যন্ত ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছে ২৬০ শিশুসহ কমপক্ষে ৯৫০ বাসিন্দা।

গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে হামাসের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ এবং সিরিয়ার হুথি বিদ্রোহীরা। এই তিন গোষ্ঠীই ইরানের মদদপুষ্ট বলে অভিযোগ করেছে তেলআবিব।

ইসরায়েলি বাহিনীর আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে লেবাননের রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। হামাসের হামলার ঠিক এক দিন পরেই হিজবুল্লাহর তরফে রকেট ছোড়া হয় ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে। ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার প্রতি সংহতি জানাতে এই হামলা বলে স্বীকার করে সশস্ত্র গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা। ইসরায়েলও তাদের আক্রমণের পাল্টা জবাব দিয়েছে। হিজবুল্লাহ ইরান সমর্থিত যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী গোষ্ঠী। হামাসের হামলায় তারাও সহযোগী হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে তাদের পাল্টা হামলায় হিজবুল্লাহর এক সদস্য নিহত হয়েছে।

সিরিয়া থেকে ছোড়া গোলা ইসরায়েলি ভূখণ্ডের উন্মুক্ত স্থানে আঘাত হানার তথ্য স্বীকার করেছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে বলেছে, উত্তরাঞ্চলীয় প্রতিবেশী সিরিয়া থেকে ছোড়া কামানের গোলা ইসরায়েলি ভূখণ্ডে আঘাত হেনেছে। এর জবাবে সামরিক বাহিনী সিরিয়ার ভূখণ্ড লক্ষ্য করে পাল্টা কামান ও মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করা হয়েছে। সিরিয়ার একটি সূত্র বলেছে, ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীগুলোর একটি শাখা ইসরায়েলে অন্তত তিনটি রকেট নিক্ষেপ করেছে।

লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাতে ইতিহাস বেশ পুরোনো। ইরানের বিপ্লবী দল ১৯৮২ সালে হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী গঠন করে। ইসরায়েলের যে বাহিনী লেবানন আক্রমণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে এই গোষ্ঠীর জন্ম। ইসলাম ধর্মকে ছড়িয়ে দেওয়াও গোষ্ঠীটি গঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। সেই থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় সংঘাতে জড়িয়েছে লেবাননের এই গোষ্ঠী।

মঙ্গলবার সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলে অনুপ্রবেশের চেষ্টার সময় ইসরায়েলি সৈন্যদের সাথে হিজবুল্লাহর প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় হিজবুল্লাহর তিন সদস্য ও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক ডেপুটি কমান্ডার নিহত হন। এছাড়া হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল সংঘাতে আরও দুই বেসামরিকের প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানিয়েছে লেবানন।

ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, তাদের সৈন্যরা সিরিয়ায় উৎক্ষেপণ উৎস লক্ষ্য করে কামান ও মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করেছে। তবে এই হামলা-পাল্টা হামলায় কোনও হতাহত হয়েছে কি না তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি।

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের আরেক ‘শত্রু’ সিরিয়ার হুথি বিদ্রোহী গোষ্ঠী। চলমান যুদ্ধে তারাও হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে। সিরিয়া থেকেও ইসরায়েলে গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে। ইসরায়েলি বাহিনী তার জবাব দিচ্ছে পাল্টা মর্টার শেল ছুড়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের মূল ভূখণ্ডে সিরিয়া থেকে একাধিক হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

ইয়েমেনের হুথি নেতা আবদেল-মালেক আল-হুথি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি গাজায় হস্তক্ষেপ করলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেবো আমরা। দেশটিতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হবে।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইদের সম্পূর্ণ সহায়তা করবো। তাদের জন্য সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করতে সর্বদা প্রস্তুত আছি। মার্কিন কর্তৃপক্ষ এতে প্রত্যক্ষভাবে জড়ালেই ঝাঁপিয়ে পড়বো। আমরাও সরাসরি ইসরায়েলে হামলা চালাবো।

হুথি নিয়ন্ত্রিত আল-মাসিরাহ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বিবৃতিতে এ হুঙ্কার ছুড়েন আবদেল-মালেক। তিনি বলেন, গাজার ক্ষেত্রে রেড লাইন আছে। অন্যান্য গ্রুপের সঙ্গে সমন্বয় করতেও আমরা প্রস্তুত।

হামাসের সাথে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের মাঝে দুই প্রতিবেশী লেবানন ও সিরিয়া থেকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে এই ধরনের হামলায় পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শনিবার হামাসের হামলা শুরুর পর থেকেই ইসরায়েলে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছে লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর সদস্যরা।

১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে নেয় ইসরায়েল। ৬ দিনের যুদ্ধে তারা জিতে নিয়েছিল সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এই ভূখণ্ড। মিশরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় গাজা উপত্যকা। সেই থেকে সিরিয়া-মিশর এবং ইসরায়েল সীমান্তে সংঘর্ষ লেগেই আছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন:

• ফেইসবুক
• টুইটার
• গুগল প্লাস
• ইমেইল