সর্বশেষ আপডেট : ১৯ মিনিট ৬ সেকেন্ড আগে
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

স্বদেশে ফেরার দাবিতে ৩০ হাজার রোহিঙ্গার সমাবেশ

ডেইলি সিলেট ডেস্ক ::
মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা দমন-পীড়নের ছয় বছর আজ। দিনটিকে ‘কালো দিবস’ আখ্যা দিয়ে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন কক্সবাজারের ৩৩টি ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গারা।

শুক্রবার সকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে উখিয়া-টেকনাফের ১২টি ক্যাম্পে পৃথক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এসব ক্যাম্পে শিশুসহ প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা সমাবেশে অংশ নেন। তারা স্বদেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন সমাবেশ থেকে।

উখিয়ার ৯, ১৪, ১৩, ১৭, ২ ওয়েস্ট, ১ ইস্ট, ৪ ও ১৮, ২০ এক্সটেনশন ও ১৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং টেকনাফের ২২ ও ২৬ নম্বর ক্যাম্পের নির্ধারিত স্থানে সকাল ৭টার পর থেকে সমাবেশে অংশ নিতে জড়ো হতে থাকে রোহিঙ্গারা। ৩৩টি ক্যাম্পের লক্ষাধিক রোহিঙ্গা এসব সমাবেশে যোগ দেয়। সবচেয়ে বড় আয়োজনটি ছিল উখিয়ার ১ ইস্ট লম্বাশিয়া ক্যাম্পের খেলার মাঠে। রোহিঙ্গা এফডিএমএন রিপ্রেজেনটেটিভ কমিটির ব্যানারে আয়োজিত লম্বাশিয়ার সমাবেশে উপস্থিত ছিল ১২ হাজারের বেশি লোক। সমাবেশের শুরুতে রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরেরা মিয়ানমারের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে।

সকাল ১০টায় উখিয়া কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে বৃষ্টি উপেক্ষা করে রোহিঙ্গা নেতা হাফেজ মো. হারুন মিয়ানমারের নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরেন। এ সময় তাদের নিজস্ব ভাষার তারানা (গানের) মাধ্যমে দ্রুত স্বদেশে ফিরে যেতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এছাড়াও পরিবারের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের বর্ণনা দেন মোহাম্মদ রফিক (৫৫)। তিনি বলেন, আমার পরিবার ও আত্মীয়স্বজন মিলিয়ে ১৬ জনকে হত্যা করেছে মিয়ানমারের মিলিটারিরা। তারা আমার মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছে। আমরা এসব হত্যা-নির্যাতনের বিচার চাই।

সমাবেশে রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গা বলেই ডাকা, দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রত্যেক রোহিঙ্গাকে আরাকানে প্রত্যাবাসন, প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত প্রত্যেক চুক্তি ও প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ওআইসি, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, বাংলাদেশ, এনজিও ও সংশ্লিষ্টদের অন্তর্ভুক্ত করা, বার্মার ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন বাতিল, সম্পত্তি ফেরত, স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকারসহ নানা দাবি উত্থাপন করা হয়।

সমাবেশে ইংরেজিতে লেখা একটি লিফলেট প্রচার করা হয়। সেখানে তারা উল্লেখ করেছেন, ‘আজ যখন আমরা রোহিঙ্গা গণহত্যা স্মরণ দিবসের ৬ষ্ঠ বার্ষিকীকে জড়ো হয়েছি, তখন আমাদের সেই ট্র্যাজেডির ক্ষণগুলো খুব বেশি তাড়িত করে চলেছে। এই দিনটি রোহিঙ্গাদের দ্বারা সহ্য করা ক্ষতি, দুর্ভোগ এবং অকল্পনীয় নৃশংসতার বেদনা স্মরণ করিয়ে দেয়। আমরা নতমস্তকে বাংলাদেশের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, এমন কঠিন সময়ে আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায়।’

লিফলেটে আরও বলা হয়েছে, ‘এই দিনে আমাদের মনে পড়ে সেই বর্বরতার ভয়ঙ্কর দৃশ্য যেখানে আমাদের সন্তানদের পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। ঘরবাড়িতে অগণিত রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছিল, আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ করা হয়েছিল, বাড়িঘর এবং আমাদের গ্রামে আগুন দেওয়া হয়েছিল, নিরপরাধের জীবন ও ভবিষ্যৎ কেড়ে নেয়া হয়েছিল।’

রোহিঙ্গা শরনার্থীরা আরও বলেন, ‘আমরা দাঁড়িয়ে আছি বেঁচে থাকা, সাক্ষী এবং গণহত্যার শিকার হিসেবে। সেই মর্মান্তিক দিনের পর ছয় বছর পার হয়ে গেছে, তবুও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ন্যায় বিচারের সন্ধান অধরা। আমরা নিজেদের প্রশ্ন করি, ন্যায়বিচারের পথ এত কঠিন কেন? যত দিন যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি আমাদের আস্থা কমছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আমাদের আবেদন, সবার প্রচেষ্টাকে একত্রিত করে রোহিঙ্গা সংকটের একটি সমাধান করুন। কার্যকর পদক্ষেপের সময় এখন। আমাদের আশা বাংলাদেশের অবিচল অংশীদারিত্বের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, জাতিসংঘ, আসিয়ান এবং বিশেষ করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা হবে। আমরা আসন্ন গ্রীষ্মের মধ্যে নিরাপত্তা এবং মর্যাদার নিশ্চয়তাসহ আমাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করতে চাই।

তারা বলেন, অগ্রগতি এমন মন্থর থাকলে আমাদের আরাকানের দিকে রোডমার্চ এবং সীমান্ত অতিক্রম করে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রোহিঙ্গা নেতা ডাক্তার মো. জোবায়ের, মাস্টার মোহাম্মদ মাস্টার কামাল, সৈয়দ উল্লাহ, মোহাম্মদ মুছা, মো. রফিক, মো. সোয়েব ও রোহিঙ্গা নারী সামিদা উয়েন প্রমুখ। বক্তারা দ্রুত প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য মিয়ানমার সরকারকে চাপ প্রয়োগ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান।

রোহিঙ্গা নেতা ডা. জুবায়ের বলেন, সম্মানজনক প্রক্রিয়ায় আমরা নিরাপদ প্রত্যাবাসন চাই। আমাদের প্রত্যাশা সমাবেশে উত্থাপিত রোহিঙ্গাদের যৌক্তিক দাবিগুলো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গুরুত্ব পাবে।

টেকনাফের মুচনি ক্যাম্পের মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের মূল দাবি সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরতে চাই। বাংলাদেশ সরকার আমাদের আশ্র‍য় দিয়ে মানবিক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে, আমরা কৃতজ্ঞ।

রোহিঙ্গা যুবনেতা মোহাম্মদ মুসা বলেন, আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটা নিরাপদ দেশ গড়তে চাই। বাংলাদেশে শরণার্থী জীবনের ছয় বছর কেটেছে, ভাসমান এ জীবন থেকে মুক্তি চাই।

সমাবেশে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, মিয়ানমারের জান্তারা রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। আমরা আরকানে নিজ ভিটায় ফিরতে চাই।

সমাবেশে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এপিবিএন পুলিশ টহল জোরদার করে। ক্যাম্পে আইন শৃঙ্খলায় নিয়োজিত এপিবিএন অধিনায়করা জানান, রোহিঙ্গারা নিজেদের দাবি নিয়ে সুশৃঙ্খল সমাবেশ করেছে। ক্যাম্প এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও সবদিকে সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন অঞ্চলের মংডু, বুচিডং ও রাসেডং জেলার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন শুরু করে। সে সময় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নামে।

জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে ৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৪১ জন রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা জনসংখ্যা ৯ লাখ ৬২ হাজার ৪১৬ জন। কক্সবাজারের ৩৩টি ক্যাম্পে ৯ লাখ ৩১ হাজার ৯৬০ জন রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। ভাসানচরে অবস্থান করছে আরও ৩০ হাজার ৪৫৬ জন।

জেলা পুলিশের সূত্র বলছে, ২০১৭ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ১১৮টি হত্যাকাণ্ডে মারা গেছে দেড় শতাধিক রোহিঙ্গা। আর অপহরণ, ধর্ষণ, ডাকাতি ও মানবপাচার মিলে মোট মামলার সংখ্যা ৩ হাজার ২০০টি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: