সর্বশেষ আপডেট : ১১ ঘন্টা আগে
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

‘বেফাঁস’ মন্তব্যে তোপের মুখে মেয়র আরিফ

‘বেফাঁ’স’ মন্তব্য করে সিলেটে আওয়ামী লীগ নেতাদের তোপের মুখে পড়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

টানা দুই মেয়াদে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে এবারই প্রথম ক্ষমতাসীন দলের তোপের মুখে পড়েছেন বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির এই সদস্য।

টানা মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে সিলেটে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং আওয়ামী লীগ দলীয় মন্ত্রীদের সাথে আরিফুল হক চৌধুরীর সখ্যতার বিষয়টি বিভিন্ন সময় আলোচিত হয়েছে।

ক্ষমতাসীনদের সাথে সখ্যতার কারণে তরান্বিত হয়েছে সিলেট নগরের উন্নয়ন কর্মকা’ন্ড। সরকার থেকে এসেছে বড় বরাদ্ধ। তবে বিরোধী দলীয় মেয়রের সাথে সরকারদলীয় মন্ত্রী-নেতাদের এই ঘনিষ্টতায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রথম থেকেই ক্ষোভ ছিলো।

এমন ক্ষোভ সত্ত্বেও সিলেট আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব আর সিলেট-১ আসনের সাবেক সাংসদ, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং বর্তমান সাংসদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবুল মোমেনের সাথে মেয়রের আরিফের স’ম্পর্কে ভাটা পড়েনি। বরং মুহিত পরিবারের ঘনিষ্ট হয়ে উঠেছেন আরিফ। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদেরকেও কখনো বিরোধী দলীয় মেয়রের সমালোচনায় দেখা যায়নি। আবার ক্ষমতাসীন দলের নেতা-মন্ত্রীদের সাথে সখ্যতার কারণে নিজ দলেই বিভিন্ন সময়ে সমালোচিত হয়েছেন আরিফ।

তবে মেয়র পদে টানা দ্বিতীয় মেয়াদের মাঝামাঝি সময়ে এসে ক্ষমতাসীন দলের তোপের মুখে পড়েছেন আরিফুল হক চৌধুরী। সম্প্রতি আরিফের এক বক্তব্যকে ঘিরে আওয়ামী লীগের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।

একটি অনুষ্ঠানে মেয়র আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ‘গণ্ডারের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন এমন অ’ভিযোগ তুলে এর প্রতিবাদে সরব হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। অন্যদিকে, মেয়র অনুসারীরা একে ‘সত্য বয়ান’ বলে প্রচার করছে।

বিএনপির আরফিল হক ও আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন পাল্টাপাল্টি বক্তব্যকে অনেকেই আগামী সিটি নির্বাচনের আগাম ল’ড়াই হিসেবে দেখছেন।

ঘটনার শুরু গত ৫ সেপ্টেম্বর সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ১২তম মৃ’ত্যুবার্ষিকী’র দিন। মৌলভীবাজারে সাইফুর রহমানের এক স্ম’রণসভায় সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী অ’তিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।

ওই বক্তব্যের এক পর্যায়ে মেয়র কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘এই (সিলেট) অঞ্চলে সাইফুর রহমানের যে স্মৃ’তিগুলো থেকে সাইফুর রহমানের নাম মুছে ফেলে দেয়া হয়েছে; তেমনি আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার নামও মুছে ফেলা হয়েছে। আমাদের নেতা শহীদ জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলছে। কিন্তু মুছে ফেললেও মানুষের মুখ থেকে নতুন নাম কিন্তু উচ্চারণ করাতে পারছে না। মানুষ এখনো জানে সেই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সেই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, আজকে যেটা গর্ব করে বলেন—বিভাগীয় স্টেডিয়াম, যা-ই বলেন না কেন এই অঞ্চলে বলতে গেলে অনেক বলতে হবে। আমি শুধু বলবো, এদের স’ম্পর্কে কিছু বলে লাভ নেই। এদেরকে ধিক্কার দেয়া ছাড়া কোনো বক্তব্য আমা’র মুখেও আসতেছে না। এদের চামড়া এতো শক্ত হয়েছে; যে গন্ডারের চামড়া থেকে আরও বেশি। এদের গায়েও কিছু লাগে না।’

আরিফুল হক বক্তৃতায় আরও বলেন, ‘আর ঘুম থেকে উঠে তারা বিএনপি পরিবারের ওপর, শহীদ জিয়া থেকে শুরু করে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান পর্যন্ত শেষ হয়। তসবির মতো জপতে থাকে। তাদের আর কোনো কাজ নেই। তারা সরকারে বসে ঘুমিয়ে আছে, ঘুম থেকে ওঠে, কী’ বলব, ভাষায় বলার মতো নেই। তারা শেষ পর্যন্ত সবধ্বং,স করে দিয়ে এখন লাগছে পদকটা নিয়ে টানাটানি। এদের যে কী’ দশা হবে আল্লাহ জানে। আসলে তারা ভীত।’

মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর এই বক্তব্যে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। প্রথমে মধ্যমসারির নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও পরে এতে যু’ক্ত হন শীর্ষ নেতারাও।

তারা মেয়রের বক্তব্যকে ‘উসকানিমূলক’ ও ‘কটূক্তিমূলক’ দাবি করে তা প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছেন।

মেয়রের আরিফের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে শুক্রবার সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহম’দ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এসব অসৌজন্যমূলক, অশালীন বক্তব্য প্রত্যাহার করার আহ্বান জানাচ্ছি। মেয়র সাহেব, আপনি ভুলে যাবেন না, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়রের চেয়ারে বসে আছেন এবং ইচ্ছামতো সরকারের টাকার অ’পচয় করছেন।’

‘কার হগদায় খাওগো বান্দি, ঠাকুর চিনো না’- সিলেট অঞ্চলের প্রচলিত এই প্রবাদের উল্লেখ করে এই আওয়ামী লীগ নেতা সিলেটের উন্নয়নে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় সিটি করপোরেশনে শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ এসেছে উল্লেখ করে আসাদ উদ্দিন লিখেছেন, ‘আপনি (মেয়র) সেই টাকায় পছন্দের ঠিকাদারকে দিয়ে অ’পরিক’ল্পিতভাবে যা ইচ্ছা তা করে যাচ্ছেন। এত গাফিলতি এবং অনিয়মের পরেও সরকার উন্নয়নের স্বার্থে দেশের একসময়ের শীর্ষ তালিকাভুক্ত দু’র্নীতিবাজ হওয়া সত্ত্বেও আপনার বরাদ্দ বন্ধ করেনি, কিংবা সিলেটের আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীরাও কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেনি। কারণ, আওয়ামী লীগ প্রতিহিং’সার রাজনীতি করে না; বরং সম্প্রীতির রাজনীতিতে বিশ্বা’সী। দুঃখ হয়, এত সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পরও আপনি আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের গন্ডারের চামড়ার সঙ্গে তুলনা করলেন। আর কী’ পেলে আপনার মধ্যে সামান্যতম কৃতজ্ঞতাবোধ জন্ম নেবে?’

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক জাকির হোসেনও শনিবার ফেসবুকে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান। কারো নাম উল্লেখ না করেই জাকির হোসেন ফেসবুকে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘উত্তম ও অধম’ কবিতাটি উল্লেখ করে লেখেন- কুকুর পা কা’মড়ালেই, কুকুড়ের পায়ে কা’মড় দিতে হয় না।

সিলেট আওয়ামী লীগের মধ্যমসারির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, গত জোট সরকারের আমলে আরিফুল হক চৌধুরী ছিলেন মহানগর বিএনপির সভাপতি ও নগরের একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। সে সময়কার অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের আশীর্বাদপুষ্ঠ হওয়ার কারণে সিলেটজুড়ে ছিলো তার দুর্দ’ন্ড প্রতাপ। তৎকালীন আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রয়াত বদরউদ্দিন আহম’দকে পাশ কাটিয়ে আরিফের মাধ্যমেই সিলেটের উন্নয়ন কর্মকা’ন্ড পরিচালিত করতেন সাইফুর। এসময় ব্যাপক দু’র্নীতি ও ক্ষমতার অ’পব্যবহার করেন আরিফ। পরবর্তীতে সে’না সম’র্থিত সরকার ক্ষমতায় এলে দেশে শীর্ষ ৫০ দু’র্নীতিবাজদের তালিকায় আরিফের নাম ছিলো।

তারা অ’ভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের অর্ন্তকোন্দলের সুযোগে আরিফুল হক বারবার মেয়র নির্বাচিত হচ্ছেন। তিনি এখন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও শীর্ষ নেতাদের প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেছেন। তাদের প্রশ্রয়েই সরকারের টাকায় উন্নয়ন করে নিজের নামে প্রচার করছেন। আর সরকার ও আওয়ামী লীগের নামে বদনাম করে বেড়াচ্ছেন।

মেয়র আরিফের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে সিলেট জে’লা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান শনিবার বলেন, আরিফুল হকের বক্তব্য শিষ্ঠাচার বর্হিভূত। সিলেটের রাজনৈতািক সংস্কৃতির সাথে এমন বক্তব্য বেমানান। আম’রা রাজনৈতিকভাবে তার বক্তব্যের জবাব দেবো।

আরিফুল হক যখন যাকে খুশি করে চললে নিজের সুবিধা হয় তখন তাকে তোষামোদ করে চলেন, এমন মন্তব্য করে নাসির বলেন, এখন হয়তো তার দলকে খুশি করার প্রয়োজন তাই এমন বক্তব্য দিচ্ছেন। আবার মন্ত্রীকে খুশি করার প্রয়োজন হলে বক্তব্য উল্টে দেবেন।

নাসির বলেন, আমাদের দলের মধ্যে যারা আরিফকে প্রশ্রয় দেন আশা করি তারা এখন সতর্ক হবেন। এবং তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: