সর্বশেষ আপডেট : ১৩ ঘন্টা আগে
শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখছে অদম্য প্রতিবন্ধী মরিয়ম ও বেবি

‘আম’রা করব জয়, আম’রা করব জয় একদিন’—গানের এ কথাগুলো একদিন বাস্তবে পরিণত করার ইচ্ছেশক্তি নিয়ে এগিয়ে চলেছেন অদম্য প্রতিব’ন্ধী দুই বোন। শারীরিকভাবে বড় না হলেও তারা স্বপ্ন দেখছেন লেখাপড়া করে বড় হওয়ার।

তারা দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজে’লার দক্ষিণ বাসুদেবপুর গ্রামের মহিলা কলেজপাড়ার পিতৃহারা দুই প্রতিব’ন্ধী বোন ম’রিয়ম ও বেবি।

জানা গেছে, ওই গ্রামের মৃ’ত মুন্নাফ হোসেনের মে’য়ে ম’রিয়ম বেগম (২০) গত বছর এইচএসসি পাস করেছেন এবং বেবি খাতুন (১৭) এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছা’ত্রী। তারা দুই বোনই হাকিমপুর মহিলা কলেজের ছা’ত্রী। তাদের বাবাও এমন প্রতিব’ন্ধী ছিলেন।

স্থানীয়রা জানায়, প্রায় ১০ বছর আগে তাদের বাবা মা’রা গেছেন। এরপর সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে মা সাইদা বেগমের পক্ষে। দুই প্রতিব’ন্ধী মে’য়েকে নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটন। তবুও থেমে যাননি তিনি। খেয়ে না খেয়ে দুই মে’য়েকে নিয়ে শুরু করেন সংগ্রামী জীবন। শত ক’ষ্টের মধ্যেও চালিয়ে গেছেন দুই প্রতিব’ন্ধী মে’য়ের লেখাপড়া। মানুষের সহযোগিতায় লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছেন তিনি। আজ মে’য়েরা দেহের দিক থেকে বড় না হলেও বড় ইচ্ছেশক্তি নিয়ে বেড়ে উঠছেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে উঠছে তাদের নিয়ে মায়ের ভাবনাও। সমাজের ১০ জন স্বাভাবিক মে’য়েদের মতো জীবন সাজানোর ইচ্ছে তাদের। একটি সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে তারা। তাই অন্য স্বাভাবিক মে’য়েদের মতো লেখাপড়া করে নিজেদের স্বাবলম্বী করতে চায় ম’রিয়ম ও বেবি।

দক্ষিণ বাসুদেবপুর গ্রামের দোকানদার আমিনুল ইস’লাম বলেন, মুন্নাফ ভাইয়ের দুই প্রতিব’ন্ধী মে’য়ে মহিলা কলেজে পড়ে। ওদের বাবা মা’রা যাওয়ার পরে তারা অনেক ক’ষ্টে মানুষ হচ্ছে। মানুষের সাহায্য নিয়ে তারা আজও লেখাপড়া করছে। তারা দেখতে ছোট হলেও বড়দের মতো নিজেদের বড় করতে চায়।

প্রতিবেশী রফিকুল ইস’লাম বলেন, সবই আল্লাহর সৃষ্টি। মে’য়ে দুটো শারীরিক দিক থেকে বেড়ে উঠেনি। কিন্তু আম’রা কখনও তাদের অবহেলা করি না। তারা ছোট থেকেই খুব ভদ্র, অমায়িক ও শান্ত মনের। কারো সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বলে না। সবাইকে সম্মান দিয়ে চলে। গ্রামের সবাই তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে। ওরা লেখাপড়া করছে—এটা দেখে আমাদের অনেক ভালো লাগে। তবে সরকারিভাবে যদি তারা সাহায্য-সহযোগিতা পেত তাহলে হয়তো দুই বোন আরও এগিয়ে যেত।

প্রতিব’ন্ধী ম’রিয়ম বলেন, আম’রা অসহায় গরিব মানুষ। বাবা তো বেঁচে নেই। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি। যদি তিনি বেঁচে থাকতেন তাহলে আমাদের এত ক’ষ্ট করতে হতো না। শত ক’ষ্টেও আম’রা দুই বোন লেখাপড়া ছাড়িনি। টাকার অভাবে হয়তো আর লেখাপড়া করতে পারব না।

প্রতিব’ন্ধী বেবি বলে, আমা’র অনেক বড় হওয়ার ইচ্ছে জাগে। শরীরের দিক থেকে হয়তো বড় হতে পারব না জানি, তাই ইচ্ছেটাকে বড় করতে চাই। প্রতিব’ন্ধী ভাতার টাকা দিয়ে কি আর ইচ্ছে শক্তিটাকে বড় করা যায়? তবুও বসে থাকছি না। চলছি আপন মনে। শত বাধাবিঘ্ন অ’তিক্রম করে আজ আমি কলেজে পড়ছি। তবে যদি সরকার এবং দেশের হৃদয়বান মানুষরা আমাদের দুই প্রতিব’ন্ধী বোনকে একটু সাহায্য-সহযোগিতা করত, তাহলে আম’রা আমাদের ইচ্ছেশক্তিটাকে কাজে লাগাতে পারতাম।

তাদের মা সাইদা বেগম বলেন, ১০ বছর হলো স্বামী মা’রা গেছে। অনেক ক’ষ্ট করে দুই প্রতিব’ন্ধী মে’য়েকে মানুষ করছি। আজ ওদের বয়স হয়েছে। কিন্তু শরীরের দিকে বড় না হলেও মনের দিক থেকে ওরা অনেক বড়। তারা আমাকে সংসারের সব কাজে সহযোগিতা করে। সংসারের কাজের পাশাপাশি লেখাপড়া করছে। আবার কলেজেও যায়। তাদের অনেক ইচ্ছে আরও লেখাপড়া করবে। কিন্তু আমি তো আর পারছি না? কেউ যদি মে’য়েদের একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিত, তাহলে হয়তো তারা আরও একটু এগিয়ে যেতে পারত? দুই বছর ধরে প্রতিব’ন্ধী ভাতার কার্ড হয়েছে তাদের। আর সেই কার্ডের টাকা দিয়ে কোনো রকম চলছে ম’রিয়ম ও বেবির লেখাপড়া। এতে জীবন চলে না।

এ বিষয়ে হাকিমপুর পৌর মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত বলেন, মহিলা কলেজপাড়ার প্রতিব’ন্ধী দুই বোনকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তাদের প্রতিব’ন্ধী ভাতার কার্ড করে দিয়েছি। তা ছাড়া আমি পৌরসভা’র পক্ষ থেকে সব সহযোগিতা করে আসছি। নিজেদের বড় করতে ওদের ভেতর একটা ইচ্ছে শক্তি কাজ করছে—এটা দেখে ভালো লাগে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

 

এ বিভাগের অন্যান্য খবর

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম
নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
মোবাইল: ০১৭১২ ৮৮৬ ৫০৩
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: