সর্বশেষ আপডেট : ৭ ঘন্টা আগে
বুধবার, ৭ জুন ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দ | ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

গত ১৬ বছরে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে তিনশ’রও বেশি মৃত্যু

ডেইলি সিলেট ডেস্ক ::

পাহাড়ের ঢাল কেটে তৈরি হয়েছে বাড়িঘর। দূর থেকে দেখলে পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের বদলে জনবসতিই যেন চোখে পড়ে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া পাহাড় ধসের অনেক কারণের মধ্যে এমন জনবসতিও একটি। বৃষ্টি একটু বেশি হলেও গণমাধ্যমে পাহাড় ধসের খবর যেন নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর পাহাড় ধসের ঘটনা কম বেশি ঘটেই চলছে। যার কোনো প্রতিকার মেলেনি এখনো। প্রাণ দিতে হচ্ছে অনেক মানুষকে। গেল ১৬ বছরে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে মারা গেছে, তিনশ’রও বেশি মানুষ। তারপরও থেমে নেই পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস ও পাহাড় কাটার কাজ।

পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির তথ্যমতে, চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় রয়েছে ২৫টি। এসব পাহাড়ে কম ও বেশি ঝুঁকিতে বসবাসকারী লোকজনের সংখ্যা লাখের ওপরে। বেশির ভাগ নিম্ন আয়ের। এর মধ্যে ১৮টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের তালিকা করেছে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি। বাকি পাহাড়গুলোর তালিকা এখনও শেষ হয়নি।

পাহাড় ধসে গত ১৬ বছরে তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের প্রায় সবাই ছিলেন পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী হতদরিদ্র লোকজন।

২০০৭ সালের ১১ জুন স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় ধসে চট্টগ্রামে ১২৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট লালখানবাজারের মতিঝর্ণা এলাকায় পাহাড় ধসে মারা যান ১১ জন, ২০০৯ ও ২০১০ সালে নগরীর পাহাড়তলী, সিআরবি, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে মারা যান আরো ১৫ জন।

২০১১ সালের ১ জুলাই পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৮ জনসহ বাটালি পাহাড়ের রিটেইনিং দেয়াল ধসে ১৭ জন মারা যান। ২০১২ সালে ১৭ জুন নগরীর ফিরোজ শাহ কলোনিসহ বিভিন্ন এলাকায় ২৩ জন মারা গেছেন। ২০১৩ সালে পাহাড় ও দেয়াল ধসে মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। ২০১৪ সালে ১ জন। ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই বায়েজিদ এলাকার আমিন কলোনিতে ৩ জন এবং ২১ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ থানার মাঝিরঘোনা এলাকায় মা-মেয়ে মারা যান। ২০১৬ সালে নগরীতে কেউ মারা না গেলেও সে বছরের ১৩ জুন রাঙ্গুনিয়া ও চন্দনাইশে ২৫ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৭ সালের ১২-১৩ জুন রাঙামাটিসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৫ জেলায় প্রাণ হারান ১৫৮ জন। ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের আকবরশাহের ফিরোজশাহ কলোনিতে ৪ জন মারা যান। ২০২২ সালে ১৭ জুন পাহাড়ধসে নিহত হয় আরও চার জন।

বসবাসকারীদের মতে, শহর অঞ্চলে পাহাড়ের পাদদেশে তৈরি করা ঝুঁকিপূর্ণ বস্তি ঘরে কম টাকায় থাকতে পারে শ্রমজীবী লোকজন। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগও সহজে মেলে।

মতিঝর্ণা এলাকায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী রুবেল মিয়া বলেন, পাহাড়ে ঘরভাড়া কম। এজন্য এখানে থাকি। কিন্তু বর্ষায় এখানে আর থাকা যাবে না। প্রশাসনের লোকজন এখান থেকে সরিয়ে দিবে আমাদেরকে।

বাটালি হিল পাহাড় ধস ট্র্র্যাজেডি: ২০১১ সালের ১ জুলাই নগরীর টাইগারপাস এলাকায় বাটালি হিলে পাহাড় ধসে ১৭ জনের মৃত্যু হয়। বাটালি হিলের ঢালে পাহাড় ও প্রতিরক্ষা দেয়াল ধসে এ প্রাণহাণির ঘটনা ঘটে। নিহতের মধ্যে অধিকাংশই ছিল নারী। ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসের মধ্যে নিয়ম ভেঙে পাহাড় কাটা এবং ভারি বর্ষণের কারণে এ পাহাড় ধস সৃষ্টি হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত হয় যারা: দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অভাবের তাড়নায় ছুটে আসা উদ্বাস্তু ও নিম্ন আয়ের লোকেরা সাধারণত এসব ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাস করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বল্প আয়ের এসব লোক না পারে ভালো কিছু খেতে, না পারে কিছু করতে। মাথা গোজার ঠাঁইটুকুও করতে পারে না। অভাবের কারণে তাদের অনেক স্বাদ-আহ্লাদ থেকে যায়। যার ফলে তাদেরকে বসবাস করতে হয় পাহাড়ের চূড়ায় নয়তো রেল লাইনের পাশে।

পাহাড় ধস কেন হয়: প্রতি বর্ষায় উজান থেকে নেমে আসা বৃষ্টির পানি এবং ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড় ধস হয়। যত্রতত্রভাবে পাহাড়ে বসবাস এবং অতিরিক্ত পাহাড় কাটার কারণে পাহাড় ধস হয়। পাহাড়ি বনাঞ্চল ধ্বংস করার কারণেও পাহাড় ধস হয়ে থাকে।

পাহাড় ধসের কারণে জলাবদ্ধতা: অতিরিক্ত পাহাড় কাটার কারণে বৃষ্টির সময় পাহাড়ের বালিগুলো ড্রেনে নেমে আসে এবং পলি জমাতে ড্রেনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। যার ফলে নগরীতে জলাবদ্ধতা চরম আকারে দেখা দেয়। পাহাড় কাটার ফলে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন।

নগরীর মতিঝর্ণা পাহাড় ও বাটালি হিলে দেখা যায়, দুটি পাহাড় কেটে নির্মাণ করা হয়েছে কাঁচা-পাকা বসতঘর। এ পাহাড়ে নির্মাণ করা হয়েছে চারতলা পাকা ভবনও। এসব ঘরে রয়েছে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ। একটি মিটার থেকে ১০-১২ ঘরে দেওয়া হয়েছে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলোর অসাধু কর্মচারীদের সহযোগিতায় এ কাজটি চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় পাহাড়ের পাদদেশে খুপরি ঘর ভাড়া দেয় এলাকার কিছু চিহ্নিত লোক। তাদের কারণেই মূলত লোকজনের ঝুঁকি বাড়ছে। ঝুঁকিতে বসবাসকারী লোকজনদের সরিয়ে নিতে নির্দেশ কোনোভাবে মানা হচ্ছে না। পাহাড়ের পাদশে খুপরি ঘর বানিয়ে ভাড়া প্রদানকারী প্রভাবশালী দুর্বৃত্তদের নিয়ে নানা তথ্য মিলছে। পাহাড় বিক্রি করে এদের অনেকে বিপুল অর্থের মালিক।

চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদফতরের চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস বলেন, ২০২২ সালে পাহাড় কাটার অভিযোগে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ২০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ২০২১ সালেও ছয়টি মামলা করা হয়েছে। এখনো পাহাড় কাটার অভিযোগ পাওয়া গেলেই অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হচ্ছে অথবা মামলা দায়ের করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, সারা বছরই পাহাড় কাটা এবং পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদের বিষয়ে অভিযান চালানো হয়। পাহাড় কাটা বন্ধের পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ বসতিদের উচ্ছেদের অভিযান জোরদার করা হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামাল হোসেন বলেন, বর্ষা এলেই পাহাড়ের বাসিন্দাদের সরানোর তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু এই পদ্ধতি কার্যকর নয়। বর্ষায় কেন সরাতে হবে? দরকার স্থায়ীভাবে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। নয়তো পাহাড় রক্ষা সম্ভব নয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: