সর্বশেষ আপডেট : ২০ ঘন্টা আগে
বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দ | ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

নদী তীরের ঐতিহ্য কানাইঘাটের সবজি বাজার

মুনশী ইকবাল : ভোরের আলো তখনো ভালো’ভাবে ফুটেনি। মাঘের কনকনে শীতে কাঁপছে চারদিক। চাদর মুড়ি দেয়া লোকজনের আনাগোনা আস্তে আস্তে বাড়ছে। কানাইঘাট বাজারের নদীর ঘাটে একসময় সূর্যের দেখা মিললেও কুয়াশায় ঢেকে আছে চারদিক। ঘাট থেকে একটু পূর্বদিকে বিশাল চরের কাছে একে একে ভিড়তে শুরু করেছে মাঝারি থেকে ছোটো ছোটো নৌকা। উপজে’লার মুলাগুল, চাপনগর, ভাড়ারিমাটি, উত্তর লক্ষ্মীপ্রসাদ, লক্ষ্মীপুর, গরিপুর, মেছা, কান্দলা, ঢালাইরচর ইত্যাদি এলাকাসহ দূর দারাজ থেকে আসা এসব নৌকায় বোঝাই নানান পদের মৌসুমি সবজি।

এখানে বিক্রেতা সবাই নিজেরাই চাষী। তারা নিজেদের ক্ষেতে চাষ করা সবজি পাইকারি বিক্রি করতে নিয়ে আসেন এই বাজারে। এ যেন নদীর তীরে বাজারে সেই আবহমান বাংলার ঐতিহ্যকেই ধারণ করে আছে, যার বৈশিষ্ট্য বহন করে নদীমাতৃক বাংলাদেশ। একসময় যেখানে প্রতিটি নদীর তীরেই এমন বাজার বসতো।

সিলেট অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী পাইকারি সবজি বাজারগুলোর মধ্যে এই বাজারের নামডাক অনেক। কয়েকযুগ ধরে চলে আসা নদীর তীরে প্রায় এক আধা কিলোমিটারের মত বিস্তৃত এই বাজার প্রতিবছর অগ্রহায়ণ থেকে ফা’ল্গুন মাস অব্দি নদীর তীরে পানি না হওয়া পর্যন্ত বসে। সপ্তাহে প্রতিদিন বসলেও শনি ও মঙ্গলবার বাজার বার। বাজার বারেই হয় মূল ব্যবসা। ভোর ছয়টা থেকে সকাল নয়টা পর্যন্ত বাজারের মূল সময়সীমা। তবে সাধারণত আটটার মধ্যেই বেশিরভাগ পণ্য বিক্রি হয়ে যায়। বিক্রেতারা বেশিরভাগ সনাতন পদ্ধতিতে কেমিক্যাল ছাড়া এসব সবজি চাষ করে থাকেন বলে তারা জানান। এই বাজার কেন্দ্র করে অনেকেই বাণিজ্যিকভাবেও সবজির চাষ করে থাকেন।

স্থানীয় ক্ষেতে ফলা এসব সবজির চাহিদা অনেক। প্রতি বাজার বারে এখানে পনেরো থেকে বিশ লাখ টাকার সবজি কেনা বেচা হয় বলে স্থানীয়রা জানান। অনেক দূর থেকে ব্যাপারীরা এখানে আসেন সবজি নিতে। তারা পাইকারি সবজি ট্রাকে বোঝাই করে নিয়ে যান সিলেটের আশপাশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রির জন্য। এগুলোই অন্যান্য বাজারে লোকাল সবজি হিসেবে বিক্রি হয়ে থাকে। তবে কোন হিমাগার না থাকায় অনেক পণ্যই দ্রুত এবং কম’দামে বিক্রি করে দিতে হয় বলে জানান বিক্রেতারা। তারা দাবি করেন, যদি সরকারি উদ্যোগে এখানে একটা হিমাগার করা যেত তাহলে তারা দুইদিন রেখে এসব সবজি বিক্রি করতে পারতেন।

মঙ্গলবার ভোরে সরেজমিন বাজার ঘুরে দেখা গেল ক্রেতা বিক্রেতার উৎসবমুখর আ’মেজে জমেছে সবজির মেলা। এসব সবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল টমেটো। এছাড়া ছিল বড়ো বড়ো মুলা, শিম, ফরাস, ফরাসের বিচি, বেগুন, ফুলকপি, বাঁ’ধাকপি, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ধনে পাতা, কাঁচা ম’রিচ প্রভৃতি। ছে’লে বুড়ো সবাই সবজি কেনা বেচা করছেন। দরদামে হলে ঝাঁকে ঝাঁকে ঝাপিতে করে এসব সবজি শ্রমিকরা নিয়ে অ’পেক্ষমান ট্রাকে তুলছেন। কেউ কেউ খুচরা বিক্রির জন্য স্থানীয় বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন। আর আশপাশের বাজার থেকে যারা এসেছেন তারা রিকশা কিংবা ঠেলাগাড়ি করে সবজি নিয়ে যাচ্ছেন।

এখানে কথা হয় মুলাগুলের আফজাল হোসেনের সাথে। তিনি আট বছর ধরে এই বাজারে সবজি বিক্রি করতে আসেন। আফজাল জানান, বিক্রির জন্য নিয়ে আসা এসব সবজি তার নিজস্ব ক্ষেতের সবজি। বাজার বারের আগেরদিন সবজি সংগ্রহ করে নৌকা তৈরি রাখেন। বাজারের দিন ভোর ছয়টায় নৌকা নিয়ে বাজারে আসেন। সকাল নয়টার মধ্যেই সাধারণত তার সব পণ্য বিক্রি হয়ে যায়। আজও তার সব সবজি বিক্রি হয়ে গিয়েছে। এখন তিনি অন্যদের বিক্রিতে সাহায্য করছেন আর গল্প করছেন। তিনি বলেন এটি কেবল একটা বাজার নয় তাদের এক মিলনমেলাও। এখানে প্রতি মৌসুমে তিনি প্রায় আড়াই থেকে তিনলাখ টাকার সবজি বিক্রি করতে পারেন। যা থেকে প্রায় লাখের উপরে লাভ বের হয়।

বাজারেই দেখা হয় কানাইঘাটের সাংবাদিক শাহিন আহম’দের সাথে। তিনি জানান, এই বাজার এলাকার একটি ঐতিহ্য। এটি যেন নদীমাতৃক বাংলার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যেখানে নদীর তীরে বাজারের ঐতিহ্য বলা হয়ে থাকে। তারা ছোটোবেলা থেকে এখানে বাজার দেখে আসছেন। এখানে বিক্রেতারা স্বাধীনভাবে নিজেদের ফলানো পণ্য এনে বিক্রি করতে পারেন। এতে কোন বাধা ধ’রা নিয়ম নেই।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের অন্যান্য খবর

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: