সর্বশেষ আপডেট : ১৩ ঘন্টা আগে
শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দ | ১০ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

শাবি উপাচার্যকে সরানো হচ্ছে

সিলেটের শাহ’জালাল বিজ্ঞান ও প্রযু’ক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) চলমান সংকটের অবসান হতে যাচ্ছে। মেনে নেওয়া হচ্ছে আ’ন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবি। সরানো হচ্ছে বর্তমান উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে। শাবিপ্রবি থেকেই কোনো শিক্ষককে নতুন উপাচার্য হিসেবে বেছে নেওয়ার চিন্তা করছে সরকার। কয়েকজনের নাম এরই মধ্যে আলোচনায়ও রয়েছে। সিদ্ধান্তে নাট’কী’য় কোনো পরিবর্তন না হলে দু-চার দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে গতকাল বুধবার এমন আভাস মিলেছে।

গত ১৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আ’ন্দোলন শুরু হয় বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের বি’রুদ্ধে অসদাচরণসহ বিভিন্ন অ’ভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে। শুরুতে কয়েকশ ছা’ত্রী ওই আ’ন্দোলনে নামেন। এরপর আ’ন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হা’মলা চালায় ছাত্রলীগ। পরে পু’লিশ শিক্ষার্থীদের লা’ঠিপে’টা করে। এ সময় শটগানের গু’লি ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহারও করা হয়। এই প্রেক্ষাপটে আ’ন্দোলনের গতি বদলে যায়। উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয় আ’ন্দোলন। এক সপ্তাহের মা’থায় আ’ন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অনশন শুরু করে। অনশনের সাত দিনের মা’থায় গতকাল বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক ড. মুহম্ম’দ জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান। তবে অনশন ভাঙার পরও মূল দাবিতে আ’ন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।

সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মক’র্তা জানান, শাবিপ্রবির আ’ন্দোলন পরিস্থিতি ও সার্বিক বিষয় নিয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার গো’পন প্রতিবেদনে নানা তথ্য উঠে আসে। এসব প্রতিবেদন নীতিনির্ধারণী দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। সমকালের হাতে এসেছে এমন দুটি প্রতিবেদন। সেখানে বলা হয়েছে, শুধু শাবিপ্রবি নয়, ভবিষ্যতে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে একই ব্যক্তিকে ভিসি নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি নিরুৎসাহিত করা বাঞ্ছনীয়। এ ছাড়া শাবিপ্রবির ভিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংবা বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের কোনো উপযু’ক্ত শিক্ষককে মনোনীত করা যেতে পারে।

একজন উচ্চপদস্থ কর্মক’র্তা জানান, নতুন উপাচার্য হিসেবে বর্তমানে শাহ’জালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দু’জন শিক্ষকের নাম জো’রেশোরে আলোচনায় রয়েছে তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসী কুমা’র দাস ও বর্তমান কোষাধ্যক্ষ ড. আনোয়ারুল ইস’লাম।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইস’লাম চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে ওই ক্যাম্পাসের বাইরে, না ভেতর থেকে কোন শিক্ষককে বেছে নেওয়া হলো- এটা বড় বিষয় নয়। সবার আগে দেখতে হবে তিনি যোগ্য কিনা। অবশ্যই উপাচার্য একজন ভালো একডেমিশিয়ান হতে হবে। তার মধ্যে অ’ভিভাবকসুলভ গুণও থাকা জরুরি। এটা একজন উপাচার্যকে মনে রাখতে হবে, তিনি প্রশাসক নন। শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে তাকে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী হতে হবে।

শাবিতে বর্তমান আ’ন্দোলন কর্মসূচির সমন্বয়ক মোহাইমিনুল বাশার বলেন, ‘আ’ন্দোলনকারীদের মূল দাবি ভিসির অ’পসারণ। এ ছাড়া অ’জ্ঞাত মা’মলা প্রত্যাহার, গ্রে’প্তার সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীর দ্রুত মুক্তি, পু’লিশের হা’মলায় আ’হত ও অনশনকারীদের চিকিৎসার ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে। ভিসির পদত্যাগসহ সব দাবি সরকার মেনে নিচ্ছে- এমন আশ্বা’স ড. জাফর ইকবাল আমাদের জানিয়েছেন। আম’রা তার কথায় আস্থা রাখছি। এ কারণে অনশন ভাঙা হয়েছে।’

শাবিপ্রবির শিক্ষক সমিতির প্রধান অধ্যাপক ড. তুলসী কুমা’র দাস বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সবাই চায়। ছাত্রছা’ত্রীদের জন্য শিক্ষার উপযু’ক্ত পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। শিক্ষার্থীরা অনশন ভেঙেছে, এটা খুব ভালো খবর। তবে উপাচার্য বদলের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তুলসী দাস।

প্রতিবেদনে উঠে আসে, শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আ’ন্দোলনে নামলেও শুরু থেকে তা আমলে নেননি উপাচার্য। তিনি আ’ন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসেননি, এমনকি কোনো বিবৃতিও দেননি। বর্তমান ভিসির এমন একরোখা মনোভাব আ’ন্দোলনের গতিকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।

গো’পন প্রতিবেদনে এও বলা হয়, ভিসিবিরোধী আ’ন্দোলনে সিলেটের আওয়ামী লীগের রাজনীতির ছায়া রয়েছে। সিলেটের বাসিন্দা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের সঙ্গে বর্তমান উপাচার্যের সখ্য আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের টেন্ডারসহ অন্যান্য কার্যক্রমে তাকে প্রাধান্য দিয়ে আসছেন উপাচার্য। তবে সিলেট জে’লা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানের সঙ্গে ভিসির দূরত্ব রয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শাবিপ্রবির বর্তমান আ’ন্দোলনে ছাত্রদল, ছাত্রশি’বির, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের ছাত্র অধিকার পরিষদ ও বাম সংগঠনগুলো নানাভাবে উস্কানি-ম’দদ দিয়ে ভিন্ন খাতে নেওয়ার অ’পচেষ্টা চালাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে একে রাজনৈতিক আ’ন্দোলনে রূপ দেওয়ার অ’পতৎপরতা রয়েছে।

সরকারের কাছে দেওয়া প্রতিবেদনে আগামীতে শিক্ষার্থীদের যে কোনো যৌক্তিক আ’ন্দোলনে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি মনিটরিং সেল গঠন করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের যে কোনো সমস্যার নিয়ে শুরুতেই আলোচনা করে তা সমাধান করা সম্ভব। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত হওয়ায় নিজস্ব আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। ছাত্র কল্যাণ, শিক্ষকদের সমস্যা, হলের আবাসিক সুযোগ-সুবিধাসহ প্রক্টরিয়াল বডির কার্যক্রম তদারকির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশন বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় তেমন কোনো ভূমিকা পালন করতে পারে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোটখাটো সমস্যা সমাধানে তৃতীয় পক্ষের অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকায় সামান্য আ’ন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে।

শাবির শিক্ষক রাজনীতি :বর্তমানে শাহ’জালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের দুটি ধারা রয়েছে। একটি হলো ‘মহান মুক্তিযু’দ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’ ও ‘মহান মুক্তিযু’দ্ধের চেতনা ও মুক্তচিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’। বর্তমান শিক্ষক সমিতিসহ সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মূল গ্রুপ মুক্তিযু’দ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। সরকারের কাছে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের সদ্য পদত্যাগী প্রভোস্ট অধ্যাপক জাফরিন আহমেদ লিজা শিক্ষক পরিষদে আছেন। প্রভোস্ট কমিটির একজন সিন্ডিকেট সদস্যও তিনি। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট কমিটির নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। শিক্ষার্থীরা অধ্যাপক জাফরিনের পদত্যাগ দাবি করলেও শুরুতে শিক্ষক পরিষদ তাদের প্যানেলের সিন্ডিকে’টের একজন সদস্যের প্রত্যাহারে রাজি ছিল না। অন্যদিকে মুক্তচিন্তায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষক প্যানেল প্রভোস্ট সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে ছিল। যদিও আ’ন্দোলনের মুখে জাফরিনকে সরিয়ে অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরীকে প্রভোস্ট করা হয়। নাজিয়া মুক্তচিন্তায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষক প্যানেলের সম’র্থক। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শাবিপ্রবিতে বর্তমানে সিন্ডিকেট কমিটির নির্বাচন স্থগিত আছে।

শাবিপ্রবিতে একজন ছিলেন ব্যতিক্রম :বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯১ সাল থেকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর পর অদ্যাবধি ১১ জন উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। তার মধ্যে মাত্র একজন উপাচার্য ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তিনি হলেন অধ্যাপক হাবিবুর রহমান। বাকি ৯ জনের মধ্যে দু’জন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। শাহ’জালালের বাকি সাতজন উপাচার্যকে বিভিন্ন সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে বেছে নেওয়া হয়েছে। বর্তমান উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক। শাহ’জালালের একাধিক শিক্ষক বলেন, নিজ ক্যাম্পাস থেকে যোগ্য শিক্ষককে উপাচার্য হিসেবে বেছে নেওয়া সবচেয়ে উত্তম। কারণ, বাইরে থেকে কোনো উপাচার্য গেলে ওই ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনন, সেখানকার পরিবেশ স’ম্পর্কে খুব সহ’জেই বুঝে উঠতে পারা কঠিন। তখন ছোটখাটো সমস্যাও বড় আকার ধারণ করে। সৌজন্যে; সমকাল

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: