ইউপি নির্বাচন- কাজলসার ইউপির সকল কেন্দ্রের ভোট স্থগিত. সাংবাদিকদের ওপর হামলা্। থানায় অভিযোগ দায়ের। সুনামগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতার হাতে পুলিশ লাঞ্ছিত।

বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো সিলেট জেলার ১৮ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ। বুধবার (০৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলে। ভোট গ্রহণ চলাকালে সিলেটের কানাইঘাটে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলেও বিশৃঙ্খলা হয়েছে জকিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে।

সীলামারা ব্যালটসহ দুই রিটানিং কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন কাজলসারও বারোহালের দুই ইউনিয়নের রিটানিং কর্মকর্তা আরিফুল হক এবং জকিগঞ্জ সদর, সুলতানপুর ও বারো ঠাকুরী ইউপি রিটানিং কর্মকর্তা এবং উপজেলার সব কটি ইউপির সমন্বয়কারী সাদমান সাকিব।

জানা গেছে, এক হাজার ৬৫৫টি ব্যালটসহ ওই দুই কর্মকর্তা কাজলশার ইউনিয়নের দিকে কৃষি অধিদপ্তরের একটি গাড়ি যোগে যাচ্ছিলেন। এমন সময় সরকারের দু’টি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তাদের চ্যালেঞ্জ করে সীল মারা ব্যালট পেপার তাদের গাড়ি থেকে জব্দ করে। এ ঘটনায় তাদের দু’জনকে আটক করে থাকা হেফাজতে নেওয়া হয়। ঘটনাটি জানতে পেরে জেলা প্রশাসকসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকতা, নির্বাচনী কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে কাজলশার পুরো ইউনিয়নের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়।

সিলেটের পুলিশ সুপার (এসপি) ফরিদ উদ্দিন বলেন, নির্বাচনে রিটানিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা দুইজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের হেফাজতে থাকা এক হাজার ৬৫৫টি ব্যালট জব্দ করা হয়। এরমধ্যে ৪শতাধিক ব্যালটে সীলমারা ছিল। এ বিষয়ে জেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা বাদি হয়ে মামলা দায়ের করবেন। এ ঘটনায় কাজলশার পুরো ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পুলিশের উচ্চ পদস্থ আরেক কর্মকর্তা বলেন, ব্যালটের মধ্যে নৌকা, সংরক্ষিত ও সাধারণ সদস্য পদে প্রার্থীদের সীল মারা ছিল। জব্দকৃত ব্যালটগুলো কৃষি কর্মকর্তার ব্যবহৃত সরকারি গাড়িতে পাওয়া যায়। ওই গাড়ি নিয়ে দুই রিটানিং কর্মকর্তা ভোট শেষ হওয়ার আগে কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছিলেন।

সিলেটের সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার শুক্কুর মাহমুদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আটক দুই রিটানিং কর্মকর্তার ব্যবহৃত একটি গাড়ি থেকে লুজ ব্যালটসহ বেশ কিছু ব্যালট জব্দ করা হয়েছে। তিনি ৮শ’ ব্যালটের বিষয়ে জানতে পেরেছেন। এরমধ্যে ৪শ’ লুজ ব্যালট রয়েছে। তবে উদ্ধারকৃত পুরো ব্যালটের সংখ্যাটা তার জানা নেই। এ ঘটনায় কাজলসার পুরো ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। আটককৃতদের থানা হাজতে রাখা হয়েছে।

এদিকে, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, সাংবাদিক ও পুলিশকে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে এই উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে। সাংবাদিক লাঞ্ছিতের ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।

যদিও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমী আক্তার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হওয়ার দাবি করেছেন। আর জেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা শুকুর মাহমুদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, কেন্দ্রে পর্যাপ্ত ব্যালট না দেওয়ায় কয়েকটি কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এ জন্য দুই রিটাণিং কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের একজন কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল হক ও অপরজন নির্বাচনী কর্মকর্তা সাদমান সাকিব।

জানা গেছে, বুধবার (৫ জানুয়ারি) বিকাল সোয়া ৩টার দিকে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের গনিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে বাক্স ভেঙে ব্যালট পেপার পুকুরে ফেলে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরে ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ সাময়িক স্থগিত করা হয়।বিকাল পৌনে ৪টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়, জানান সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টাকালে দেখে ফেলায় সাংবাদিকদের পেঠালেন নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা। বুধবার (০৫ জানুয়ারি) বিকেলে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভরম সুলতানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন স্থানীয় একটি দৈনিকের স্টাফ রিপোর্টার এটিএম তোরাব ও সাংবাদিক আজমল আলী।

নৌকার প্রার্থী মাওলানা আফজল হোসেন পক্ষে সমর্থক ওই কেন্দ্রে জাল দেওয়ার চেষ্টাকালে সাংবাদিকদের বের হয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। এসময় সাংবাদিকরা কেন্দ্রে অবস্থান করায় নৌকার প্রার্থীর সমর্থক জুয়েল আহমদ ও সুহেল আহমদসহ কয়েকজন হামলা করেন। এসময় এটিএম তোরাবকে কিলঘুষি মেরে রক্তাক্ত করেন এবং আজমল আলীও আহত হন।

জকিগঞ্জ থানায় কর্তব্যরত কর্মকর্তা (ডিউটি অফিসার) উপ পরিদর্শক (এসআই) আমির খসরু বলেন, আক্রান্ত সাংবাদিক এটিএম তোরাব থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. লুৎফর রহমান বলেন, সিলেটের জকিগঞ্জ বিশৃঙ্খলার খবর মিললেও কানাইঘাটের সব কটি ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

অপরদিকে, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার দক্ষিণ বংশিকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল আখলাকুর ইসলামকে (৫০) লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে। নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট ছাত্রলীগ কর্মী আনিসুল ইসলাম স্থানীয় গড়াকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মহিলা ভোট কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটান। পরে স্কুলে থাকা প্রিসাইটিং অফিসার তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি মিমাংসা করে দেন।

গড়াকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইটিং অফিসার দেবব্রত চক্রবর্তী বলেন, নৌকার এজেন্ট ও দায়িত্বরত পুলিশের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছিল, আমি তাৎক্ষণিক বিষয়টি মিমাংসা করে দিয়েছি।

বুধববার (৫ জানুয়ারি) সিলেট জেলার ১৮টিসহ বিভাগের ৭৫টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার বারহাল, বীরশ্রী, কাজলসার, খলাছড়া, জকিগঞ্জ, সুলতানপুর, বারঠাকুরী, কসকনকপুর ও মানিকপুর ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব, লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম, দিঘীরপাড়, সাতবাক, বড়চতুল, কানাইঘাট সদর, দক্ষিণ বানিগ্রাম, ঝিংগাবাড়ি, রাজাগঞ্জ ইউপি রয়েছে।

এছাড়া সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার আটগাঁও, হবিবপুর, বাহারা, শাল্লা, জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলি, ছাছনা বাজার, ভিমখালি ও ফেনারবাক ইউপি। ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ, পাইকুরহাটি, সুখার রাজাপুর উত্তর, মধ্যনগর, চামরদানী, বংশীকুন্ডা উত্তর, বংশিকুন্ডা দক্ষিণ, সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ, ধর্মপাশা জয়শ্রী, ধর্মপাশা ইউপিতে।মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর, পতনউষার, মুন্সিবাজার, শমসেরনগর, কমলগঞ্জ, আলীনগর, আদমপুর, মাধবপুর, ইসলামপুর ইউপি। শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউপি, ভুনবির, শ্রীমঙ্গল, সিন্দুরখান, কালাপুর, আশিদ্রোণ, রাজঘাট, কালিঘাট, সাতগাঁও ইউপিতে। তাছাড়া হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার গাজিপুর, আহম্মদাবাদ, দেওরগাছ, পাইকপাড়া, শানখলা, চুনারুঘাট সদর, উবাহাটা, সাটিয়াজুড়ি, রানিগাঁও, মিরাশী, মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর, চৌমুহনী, বহরা, আন্দিউড়া, (ইভিএম’এ ভোট), শাহজাহানপুর, জগদিশ পুর, বুলস্না, নোয়াপাপড়া, ছাতিয়াইন, বাঘাসুরা, আদাঐর ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন:

• ফেইসবুক
• টুইটার
• গুগল প্লাস
• ইমেইল