সর্বশেষ আপডেট : ১৪ ঘন্টা আগে
রবিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দ | ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

নিজেদের বিমানবন্দরে আর কত অপমানিত হবেন প্রবাসীরা

গেলো নভেম্বরেই ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসী কর্মীরা। রেমিট্যান্সে দেশের অর্থনীতি যারা সচল রাখছেন তাদেরকে পদে পদে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্বদেশের বিমানবন্দরেই।

‘শতবর্ষে জাতির পিতা, সুবর্ণে স্বাধীনতা, অ’ভিবাসনে আনবো ম’র্যাদা ও নৈতিকতা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশে পালিত হবে আন্তর্জাতিক অ’ভিবাসী দিবস। থাকবে নানা কর্মসূচি। প্রবাসী কর্মীদের প্রশ্ন—এসব পালন করলে কি আদৌ আমাদের হয়’রানি কমবে?

গত একমাস ধরেই হ’জরত শাহ’জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহারকারী শতাধিক প্রবাসী কর্মীর অ’ভিজ্ঞতা শুনেছে বাংলা ট্রিবিউন। বিমানবন্দরে প্রবেশ থেকে শুরু করে ফ্লাইটে ওঠা পর্যন্ত কিংবা বিদেশ থেকে আসতে বিমানবন্দর ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত পদে পদে ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন তারা। বলেছেন, বিমানবন্দরের বিভিন্ন সংস্থার কর্মীদের খা’রাপ আচরণের কথাও।

২৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বলেছিলেন, প্রবাসীরা এতদিন আমাদের দিয়েছেন, এখন তাদেরকে দিতে হবে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়’রানি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রবাসীদের অ’ভিজ্ঞতা বলছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এখনও পুরোপুরি উপেক্ষিত বিমানবন্দরে। সবচেয়ে বেশি অ’ভিযোগ ইমিগ্রেশন, কাস্টমস এবং বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মীদের আচরণ নিয়ে।

ইমিগ্রেশন পু’লিশ, আর্মড পু’লিশ ব্যাটালিয়ন ও আনসার সদস্য ছাড়া আর কোনও সংস্থার কর্মীরাই নির্ধারিত পোশাক পরেন না বলে জানান যাত্রীরা। সাদা পোশাকে ডিউটি করায় তাদের পরিচয়ও জানা যায় না। যে কারণে সুনির্দিষ্টভাবে অ’ভিযোগও করতে পারেন না তারা।

বিদেশযাত্রায় যত ভোগান্তি

পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গত ৫ ডিসেম্বর শাহ’জালাল বিমানবন্দরে এসেছিলেন সৌদি আরব প্রবাসী মো. শাহ’জাহান। বহির্গমন টার্মিনালের ড্রাইভওয়েতে প্রবেশের মুখেই নিরাপত্তাকর্মীরা শাহ’জাহানের স্ত্রী’, মা ও বোনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন। শুধু বাবাকে নিয়ে টার্মিনালে উঠতে পারেন তিনি। শাহ’জাহানের স্ত্রী’, মা ও বোন পড়েন বিপত্তিতে। অচেনা বিমানবন্দরে কোথায় দাঁড়াবেন, কী’ করবেন বুঝতে পারেন না। ওদিকে, উপরে উঠলেও বেশি সময় থাকতে পারেননি শাহ’জাহানের বাবা। তাকেও ১০ মিনিট পর নেমে যেতে বলেন আর্মড পু’লিশ সদস্যরা। নিচে নেমে তিনিও পড়লেন বিপদে। কোথায় তাদের গাড়ি পার্ক করলো, কোথায় খুঁজবেন স্বজনদের বুঝতে পারেন না। এসব নিয়ম-কানুন নিয়ে প্রচারণার অভাব ও পরিস্থিতি সা’পেক্ষে ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা রয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

বিমানবন্দরে প্রবেশের গেটগুলোতে ফ্লাইট শিডিউল অনুযায়ী বিদেশগামী কর্মীদের প্রবেশ করতে হয়। তবে যাত্রীদের নজরে আসার মতো কোথাও শিডিউল টানানো থাকে না। ফলে অনেকেই ভুল লাইনে দাঁড়িয়ে ফ্লাইট মিস করেন। ভেতরে হেল্প ডেস্ক থাকলেও বেশিরভাগ সময় সেখানে কেউ থাকেন না বলে অ’ভিযোগ যাত্রীদের।

সিঙ্গাপুর প্রবাসী কাফি সানি বলেন, ৭ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৮টায় সিঙ্গাপুরের ফ্লাইট। আমি সহযোগিতার জন্য হেল্প ডেস্কে গিয়েছিলাম, প্রথমে কাউকে পেলাম না। পরে দুজন নারী আসলেন। তাদের বললাম ফরম পূরণে সহায়তা করতে। তারা বললেন, ওই দিকে বুকিং কাউন্টারে যান। সেখানে গিয়ে দেখি দুজন লোক ফরম পূরণ করে দিচ্ছেন, আর চুপিসারে যাত্রীপ্রতি ২০০ টাকা করে নিচ্ছেন।

প্রবাসীদের বেশি বাজে অ’ভিজ্ঞতা ইমিগ্রেশন নিয়ে। ‘তুই’ বলেই সেখানে প্রবাসী কর্মীদের বেশিরভাগ সময় সম্বোধন করেন ইমিগ্রেশন পু’লিশ সদস্যরা।

প্রবাসী কর্মী সাখাওয়াত হোসেন নিজের অ’ভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘ইমিগ্রেশন অফিসারকে পাসপোর্ট দেওয়ার পর আমি রীতিমতো হা করে তার কা’ণ্ড দেখছিলাম। তিনি কলম দিয়ে উদাস হয়ে কান চুলকাচ্ছিলেন। অথচ সিরিয়ালে তখন অনেকে। আমি একটা কাগজ দিতে ভুল করেছিলাম। আর অমনি তিনি বাজে ভাষায় আমাকে গালি দিয়ে বসলেন।’

মোহাম্ম’দ নাসির নামের এক প্রবাসী কর্মী বললেন, ‘ইমিগ্রেশন পু’লিশ দাঁড় করিয়ে রেখেছিল আমাকে। তাকে বললাম, ফ্লাইটের দেরি হচ্ছে। এটা শুনেই গালি দিয়ে বসলেন তিনি।’

ফ্লাইটে ওঠার আগে শেষবারের মতো যাত্রীদের শরীর ও হাতব্যাগ তল্লা’শি করেন বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা। সেখানেও হয়’রানির অ’ভিযোগ।

দুবাই প্রবাসী মো. জামাল বললেন, ‘এক আনসার আমাকে বললো মিষ্টি নেওয়া যাবে না। পরে আবার বললো, দুই হাজার টাকা দিন। ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। পরে তাকে দেড় হাজার টাকা দিয়ে মিষ্টি নিয়ে ফ্লাইটে উঠতে পেরেছি। মিষ্টি নেওয়া যদি নিষিদ্ধ হতো, তবে উনি ম্যানেজ করলেন কী’ করে? আর যদি নিষিদ্ধ না হয়, তবে বাধা দিলেন কেন?’

আরেক প্রবাসী মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, ‘দুজন কর্মী আমা’র আছে জানতে চাইলো পকে’টে কতো টাকা। আমি বললাম দুই হাজার টাকা আছে। এটা শুনে একজন বললেন, বাংলাদেশি টাকা নেওয়া যাবে না, দিয়ে যান। আমি উপায় না দেখে তাদের হাতে টাকা’টা দিয়েই দিলাম। পরে বুঝলাম তারা মিথ্যা বলে টাকা’টা হাতিয়ে নিয়েছে।’

ফেরার পরের ভোগান্তি

বিদেশ থেকে দেশে ফিরে প্রথমেই হেলথ ডেস্কে যেতে হয় যাত্রীদের। সেখানে কোনও শৃঙ্খলা নেই বলে জানিয়েছেন তারা।

হেলথ ফরম পূরণ করার জন্য এক আনসার সদস্যের কাছে কলম চেয়েছিলেন সৈয়দ ইস’লাম। কলমের জন্য ওই সদস্য একশ’ টাকা দাবি করেন। বাধ্য হয়ে ১০০ টাকা দিয়েই কলম নেন সৈয়দ ইস’লাম।

এ ছাড়া রাত ও ভোরের দিকে ইমিগ্রেশন ডেস্কে জনবল একেবারেই কম থাকে বলে অ’ভিযোগ যাত্রীদের।

কোনও কারণে লাগেজ পেছনে রয়ে (লেফট বাহাইন্ড) গেলেও দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ডের দায়িত্ব পালন করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন। তথ্যের জন্য সেখানকার হটলাইনে ফোন করলেও কেউ ফোন ধরেন না বলে অ’ভিযোগ যাত্রীদের।

কাস্টমসে জনবল ও স্ক্যানার মেশিন কম থাকায় দীর্ঘ সময় অ’পেক্ষা করতে হয়। লাগেজ চেকিংয়ে রয়েছে সমন্বয়হীনতার অ’ভিযোগ। একবার এক কর্মক’র্তা চেক করার পরও আরেকজন চেক করেন বলে জানান যাত্রীরা। আবার কাস্টমস জোনে মালমাল চু’রির ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। তবে এই জোনে চু’রির চেয়েও ‘তুই-তোকারি’ ও ধমক দেওয়ার অ’ভিযোগই বেশি প্রবাসী কর্মীদের।

মা’থায় ট্রলি নিতেই হচ্ছে

কদিন আগেও বিমানবন্দরে ভ’য়াবহ ট্রলি সংকট দেখা দেয়। বেল্ট থেকে লাগেজ মা’থায় নিয়ে বের হতে দেখা যায় যাত্রীদের। ১২ ডিসেম্বর হ’জরত শাহ’জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ট্রলি সংকটের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন বেসাম’রিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। সে সময় তিনি জানান, বিমানবন্দরের জন্য আরও ট্রলি কেনার ব্যবস্থা হচ্ছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন আড়াই হাজার ট্রলি কেনা হবে। ৩২ জনকে ট্রলিম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

কয়েকদিন ধরে ট্রলি পেতে তেমন সমস্যা না হলেও ভিন্ন আরেক সমস্যায় পড়ছেন যাত্রীরা। বিমানবন্দরের ক্যানোপি গ্রিল দিয়ে আ’ট’কানো থাকায় পার্কিং জোনের গাড়ি পর্যন্ত ট্রলি নিতে পারছেন না তারা। যে কারণে মা’থায় লাগেজ তুলতেই হচ্ছে। ‘ট্রলিম্যান সংকট’-এর কারণ দেখিয়েই এই গ্রিল দেয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার ওমান থেকে এসেছেন মো. ইব্রাহিম। জানালেন, ‘আগে ট্রলি রাস্তা পর্যন্ত নেওয়া যেত। এখন ক্যানোপি–২ এর পর আর নিতে দেয় না।’

একই অ’ভিজ্ঞতার কথা বললেন কাতার প্রবাসী বাবুল হোসেন। বৃহস্পতিবার দুপুর একটায় তাকে দেখা গেলো ক্যানপি–২ এর সামনে ট্রলি নিয়ে গাড়ি খুঁজছেন। বাবুল বললেন, ‘এর বাইরে ট্রলি নিতে দেয় না নিরাপত্তাকর্মীরা। এখন নিজের ব্যাগ পাহারা দেবো, নাকি গাড়ি ভাড়া করবো?’

বিমানবন্দরের এক কর্মক’র্তা বললেন, ‘প্রতি মাসে সব সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সমন্বয় সভা হয়। কিন্তু সমন্বয় আর হয় না। কোনও সংস্থা নিজেদের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে কথা বলে না, একে অন্যকে দোষ দিতেই ব্যস্ত থাকে সবাই।’

এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আর্কষণ করলে সিভিল অ্যাভিয়েশন, ইমিগ্রেশন ও বিমানকে জিজ্ঞাসা করার পরাম’র্শ দেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইম’রান আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনও ভোগান্তি সৃষ্টি করা হয়নি।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: