সর্বশেষ আপডেট : ১৩ ঘন্টা আগে
বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দ | ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

শীতে অপরূপ লাল শাপলার ডিবির হাওর

সিলেটের উত্তর পূর্বে অবস্থান জৈন্তাপুর উপজেলা। বাংলাদেশ ভারত সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুরে মেঘালয়ের পাদদেশে ঝর্ণা বেষ্টিত ডিবির হাওর। যা “লাল শাপলার” বিল নামে পরিচিত।

এখানে রয়েছে ডিবি বিল, ইয়াম বিল, হরফকাট বিল ও কেন্দ্রীবিল। বিলগুলোর প্রায় ৯০০ একর ভূমিতে প্রাকৃতিকভাবে লাল শাপলার জন্ম।

আমাদের জাতীয় ফুল লাল শাপলার বিল ডিবির হাওর। প্রতিদিন ভোরে এখানে ফুটে ওঠে অপূর্ব অগণিত ফুল, তাদের সাথে দেখা করতে প্রতিদিন ভোর হওয়ায় সাথে সাথেই দলবেধে নৌকায় ভেসে বেড়ান অগণিত ভ্রমণপিয়াসু।

সাথে বাড়তি আকর্ষণ হলো হাওরের পারেই পাহাড়ের সারি। ভারতের মেঘালয়ের সেই পাহাড় যেন মনে হয় আরেক স্বর্গ।

যেহেতু শীতকাল তাই নানা ধরণের পাখির দেখাও পাবেন আপনি এখানে। প্রতিবছর অসংখ্য পরিযায়ী পাখি আসে এই ডিবির হাওরে। ভোরের লাল শাপলা, পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য্যে, সাথে পাখির কিচির মিচির- এ যেন আসলেই এক প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য।

অপরূপ সৌন্দর্যের পাশাপাশি এখানে রয়েছে ইতিহাসও। স্বাধীন জৈন্তারাজ্যের রাজা বিজয় সিংহের সমাধিস্থল।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ব্রিটিশ শাসিত ভারত উপমহাদেশের শেষ স্বাধীন রাজ্য ছিল জৈন্তাপুর। শ্রীহট্ট তথা ভারতবর্ষের অধিকাংশ এলাকা তখন মোঘলসাম্রাজ্যের। তখনও জৈন্তিয়া তার পৃথক ঐতিহ্য রক্ষা করে আসছিল। প্রায় ৩৫ বছর স্বাধীন রাজ্য হিসেবে পরিচালিত হয়। রামায়নেও জৈন্তিয়া রাজ্যের অনেক উল্লেখ আছে।

১৮৩৫ সালের ১৬ মার্চ হ্যারি নামক ইংরেজ রাজেন্দ্র সিংহকে কৌশলে বন্দি করে সব লুট করে নেয় রাজা বিজয় সিংহের রাজ্য থেকে। এই রাজ্যেরই স্মৃতি বিজড়িত ডিবির হাওর। পরে সেখানেই তার সমাধিস্থল হয়ে ওঠে। তাছাড়া এখানে রয়েছে প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন এক মন্দির। ইতিহাস থেকে জানা যায় জৈন্তার এক রাজাকে এখানে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়। তার স্মৃতিতেই এই মন্দির তৈরী হয়।

কম খরচে যেভাবে যাবেন : ঢাকা, চট্টগ্রাম দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকেই যদি ঘুরে আসতে চান সিলেটের লাল শাপলার ডিবির হাওরে। তাহলে প্রথমেই আপনাকে বাস কিংবা ট্রেনে সিলেটে পৌঁছাতে হবে।

খুব সকাল পৌঁছানোর পর আপনাকে শাপলার মূল সৌন্দর্য দেখতে হলে তখনই রওনা করতে হবে। কেননা রোদ ওঠার সাথে সাথে শাপলার আসল সৌন্দর্য্য লোপ পেতে থাকে।

সিলেট শহরে পৌঁছে আপনি শহরের দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ থেকে, উত্তর সুরমার সোবহানীঘাট কিংবা টিলাগড় পয়েন্ট থেকেও জাফলংগামী বাস পাবেন। বাসটি জৈন্তাপুর বাজার হয়ে যাবে। আপনাকে সেখানেই নামতে হবে। লোকাল বাস ভাড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা নিবে।

তবে এই বাসে করেই আপনি বিজিবি ক্যাম্প লিখা নামক জায়গায় নামতে পারেন। রাস্তার বিজিবি ক্যাম্প লিখা সাইনবোর্ডের ডান পাশের রাস্তা দিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাটলেই পেয়ে যাবেন লাল শাপলার বিল।

তবে খুব সকালে যেহেতু আপনি যাচ্ছেন, পথে খাবারের প্রয়োজন হলে আপনাকে জৈন্তা বাজারে নামতে হবে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে আপনাকে বাজারে থাকা টমটমযোগে চলে যেতে হবে ডিবির হাওরে। টমটম রিজার্ভ ভাড়া পড়বে ১৫০ টাকা। তবে সিলেট থেকে চাইলে সিএনজি রিজার্ভ করেও যেতে পারবেন। ভাড়া পড়বে ৮০০ থেকে ১২০০ এর মধ্যে।

শাপলার বিলে পৌঁছে আপনাকে নৌকা ভাড়া করে পুরো বিলের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে হবে। হাওরের মাঝখান দিয়ে বহমান কাঁচা রাস্তা।

প্রশাসন কর্তৃক শাপলাবিল পর্যটক পরিচালনা কমিটি জৈন্তাপুর সিলেটকে দায়িত্ব দিয়ে ডান এবং বাম দুই পাশ দিয়েই নৌকা ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে।প্রতি নৌকায় ১ ঘণ্টা সময় বেধে ভাড়া পরবে ৪০০টাকা।যাত্রী সংখ্যা সর্বোচ্চ ৬ জন।অতিরিক্ত সময় ঘুরলে ১ ঘণ্টা ঐ একই নৌকায় ২০০ টাকা।

তবে বাম পাশ দিয়ে গেলে আপনি লাল শাপলার সাথে বাড়তি সোন্দর্য হিসেবে একটি পুরনো মন্দির পাবেন সেই সাথে খুব কাছ থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মিতালীর হাতছানিও পাচ্ছেন। মন্দিরে নেমে আপনি হাঁটতেও পারবেন কিছুক্ষণ। আর ডান পাশ দিয়ে গেলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে আপনি কেবল লাল শাপলার সৌন্দর্যটাই উপভোগ করতে পারবেন। তবে ডান পাশ দিয়ে গেলে বাম পাশের তুলনায় শাপলা বেশি পাচ্ছেন। কারণ মন্দির আর মেঘালয়ের পাহাড়ের দৃশ্য দেখতে বাম পাশ দিয়ে পর্যটকদের আনাগুনা বেশি থাকায় ডান পাশের উদিয়মান শাপলাগুলো দীর্ঘক্ষণ অক্ষত থাকে।

সিলেট থেকে পরিচালিত টুরিস্টদের জন্য কাজ করা ট্রাভেলার্স অফ গ্রেটার সিলেট এর প্রধান এডমিন শেখ রাফি জানান, ডিবির হাওর শাপলার বিল এখন বেশ জনপ্রিয়। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর মানুষ সিলেটে আসছেন। আমরা আমাদের গ্রুপ এর মাধ্যমে যথাসাধ্য এই জায়গা ঘুরিয়ে দেখাচ্ছি।

তিনি বলেন, প্রশাসন থেকে নৌকা ভাড়া ফিক্সড করে দেয়ায় এখন নৌকা ভাড়া নিয়ে কোনো মাঝি ঝামেলা করতে পারছে না। সবাই খুব ভালভাবে এই জায়গা ঘুরতে পারছে সান্নিধ্যে। তবে ভিতরের রাস্তাটা যদি ভাল হত আরো পর্যটক ভীড় করতে। প্রশাসন এর কাছে আমাদের দাবি এই জায়গাটার সুযোগ সুবিধা আরো বাড়ানো আর এই পর্যটন এড়িয়া নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদি একটা পরিকল্পনা করা যাতে শুধু শীতেই না সারাবছরই পর্যটন মুখী থাকে জৈন্তাপুর এর এই পর্যটন এড়িয়া।

ভোরে নৌকায় ভেসে ভেসে দেখবেন অপরূপ লাল শাপলা, দূরের পাহাড়, সোনালি আকাশ সাথে পাখির কিচির মিচির। এ যেন পৃথিবীর এক টুকরো স্বর্গ রাজ্য।

শাপলার অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করবেন, তবে চেষ্টা করবেন আপনার দ্বারা এ সৌন্দর্য্য যেন নষ্ট না হয়। আসার পথে সময় থাকলে বাড়তি হিসেবে আপনি দেখে আসতে পারেন জৈন্তাপুরের ঐতিহাসিক রাজবাড়ী ও সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্র। এগুলো আপনার আসার পথেই পাবেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

এ বিভাগের অন্যান্য খবর

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: