সর্বশেষ আপডেট : ১৩ ঘন্টা আগে
বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দ | ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

হাত-পা অকেজো হওয়া কৌশিকের আয় এখন ৬৫ লাখ

কারও করুণা নয়, নিজের উদ্যোগ আর মনোবল নিয়ে খুলনার ডুমুরিয়া উপজে’লার ভান্ডারপাড়া ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া গ্রামের প্রতিব’ন্ধী কৌশিক বাগচী (৩৯) মাছ চাষে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। এখন তিনি সফল একজন মাছচাষি। শুধু তাই নয়, প্রতিব’ন্ধী কৌশিক খুলনা বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ মাছচাষি হিসেবে পুরস্কারও পেয়েছেন।

কৌশিক বাগচী ডুমুরিয়া উপজে’লার তেঁতুলিয়া গ্রামের কৃষক নিরালা বাগচীর দুই ছে’লের মধ্যে বড়। ১৯৮৭ সালে মাত্র ছয় বছর বয়সে গরুর আক্রমণে দারুণ আ’হত হয়ে তার ডান হাত ও পা অকেজো হয়ে যায়। দেশে ও বিদেশে বহু চিকিৎসার পরও হাত-পা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। পরে একটু সুস্থ হয়ে দেড় বছর পর স্থানীয় গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। লেখাপড়ার ওই ধারাবাহিকতায় তিনি ২০০২ সালে এইচএসসি পাস করেন। এরপর পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে তার লেখাপড়া বন্ধ হওয়ায় বেকারে পরিণত হন।

অবশেষে কোনো কাজ না পেয়ে, উপজে’লা মৎস্য বিভাগের অনুপ্রেরণায় নিজের উদ্যোগ আর মনোবল নিয়ে ১৯৯৭ সালে ধারদেনা করে ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে নিজ পরিবারের এক বিঘা জমিতে গলদা ও সাদা কার্প (মিশ্র) জাতীয় মাছের চাষ শুরু করেন। প্রথম বছরই মাছ চাষে বেশ লাভবান হন। ওই লাভের টাকা দিয়ে ২০০৬ সালে অন্যের আরও ২০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে সেখানে তিনি পৃথক পৃথকভাবে গলদা ও কার্প জাতীয় মাছ ও অন্য একটি ঘেরে পাঙাশ মাছের চাষসহ দুটি মাছের খামা’র গড়ে তোলেন।

২০১২ সালে নতুন আঙ্গিকে (উন্নত প্রযু’ক্তি) ওই জমিতে আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চাষ শুরু করেন। ২০১৪ সালে হালকা লবণ পানিতে উন্নত প্রযু’ক্তি ব্যবহার করে সেখানে বাগদা চিংড়ির চাষ শুরু করেন। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৪ সালে মাছ চাষের ওপর তিনি একবার খুলনা বিভাগীয় পুরস্কার (একটি ক্রেস্ট) পান। এখন মাছ চাষের রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ এবং অন্য মাছচাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ মাছ চাষে সব ক্ষেত্রে পারদর্শী হয়ে উঠেছেন বলে তিনি জানান।

গত ২৪ বছর মাছ চাষ করে কৌশিক সব দেনা পরিশোধ করে ৬০ লাখ টাকা দিয়ে ৬ বিঘা জমি ক্রয় এবং ৮ লাখ টাকা খরচ করে একটি পাকা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তাছাড়া প্রায় দেড় লাখ টাকা দিয়ে বিদেশি জাতের দুটি গাভী কিনেছেন এবং এক লাখ টাকা দিয়ে স্ত্রী’র স্বর্ণের গহনা ও বাড়ির বেশ কিছু মূল্যবান আসবাব ক্রয় করেছেন। দুই ভাইয়ের দুই ছে’লের লেখাপড়ার খরচ জোগাতেও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সব খরচ বাদ দিয়ে বর্তমানে কৌশিকের ৬৫ লাখ টাকা পুঁজি রয়েছে; যা দিয়ে এখন পুরোদমে মাছ চাষ চলছে। গ্রামের মানুষ এখন কৌশিককে একজন সফল মৎস্যচাষি হিসেবে জানেন। এলাকার অনেক মাছচাষি কৌশিকের কাছে পরাম’র্শ নিতে আসেন।

কৌশিক বাগচী বলেন, ‘শারীরিক অক্ষমতার কারণে কখনও নিজেকে ছোট মনে হয়নি। দৃঢ় বিশ্বা’স ছিল আমি সাধারণ সুস্থ মানুষের মতোই কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারব। সৃষ্টিক’র্তা আমাকে সেই সুযোগ দিয়েছেন। মাছ চাষ করে আজ আমি সফল।’ তার স্ত্রী’ মিঠু রানী মণ্ডল মাছের ঘেরে খাবার দেওয়া, ঘেরে পাহারা দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজে তাকে সহযোগিতা করে থাকেন। কাকন বাগচী নামে একটি পুত্রসন্তান রয়েছে এই দম্পতির, সে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: