সর্বশেষ আপডেট : ২৩ মিনিট ২৬ সেকেন্ড আগে
বুধবার, ৭ জুন ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দ | ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

সিঙ্গাপুরে যৌ’নকর্মে বাধ্য করা বাংলাদেশি ২ তরুণী আইনি ল’ড়াইয়ে জয়ী

দীর্ঘ আইনি ল’ড়াইয়ে সিঙ্গাপুরে চূড়ান্তভাবে জয়ী হয়েছেন দুই বাংলাদেশি তরুণী। একজনের নাম টিনা আক্তার, অন্যজন বিথি। স্ট্রেইট টাইমসসহ দেশটির কোনো সংবাদমাধ্যমই তাদের নাম ছাড়া বিস্তারিত ঠিকানা প্রকাশ করেনি। হয়ত নিরাপত্তাজনিত কারণে। তবে তাদের দীর্ঘসংগ্রাম এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিতের ফিরিস্তি ওঠে এসেছে ভিন দেশি মিডিয়ায়। রিপোর্টে প্রকাশ- উন্নতজীবনের আশায় ঢাকা ছেড়ে সিঙ্গাপুর পাড়ি দিয়েছিলেন টিনা ও বিথি। তাদের বয়স তখন ২০-এর কোটায়। ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর থেকে বিথি সিঙ্গাপুরে রয়েছেন।

আর টিনা দেশটিতে পৌঁছান ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। গৃহস্থালি কাজের কথা বলে তাদের নেওয়া হয়েছিল। তাদের দালাল ছিল ‘স্বদেশি ভাই’ রকি। নানা অ’পকর্মে সম্পৃক্ততার অ’ভিযোগে নিশ্চিত জে’ল-জ’রিমানার মুখে পড়তে যাওয়া রকি গ্রে’প্তার এড়াতে কৌশলে সিঙ্গাপুর থেকে পালিয়ে যায় বছর খানেক আগে। এখন তার অবস্থান কোথায় তা অজানা। অবশ্য রকিকে পালাতে সহায়তাকারীকে জে’ল খাটতে হচ্ছে।

সিঙ্গাপুর পৌঁছার পর টিনা ও বিথির আশ্রয় হয় কলিউড ডান্স লাউঞ্জ নামে একটি ক্লাবে। ডান্সার হিসেবে কিছু দিন তারা কাজও করেন। নৃত্য করে কাস্টমা’রদের আনন্দ দেওয়ার কাজে বেশ মানিয়ে নিচ্ছিলেন ‘আনাড়ি’ ওই বাংলাদেশি তরুণী। আয় রোজগারও হচ্ছিল কম-বেশি, যদিও চুক্তির তুলনায় তারা খুবই কম টাকা পাচ্ছিলেন। এতে তাদের মনোক’ষ্ট ছিল, কিন্তু ছেড়ে আসার উপায় ছিল না। ফলে তারা ক্লাবের ডান্সারের কাজে ছিলেন নিম’রাজি।

ব্যত্যয় ঘটে যখন ক্লাব মালিকের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাড়তি মনোরঞ্জনের জন্য বিছানায় যাওয়ার প্রস্তাব আসে। ঘটনার দিনক্ষণ আলাদা হলেও দু’জনের জীবনের গল্প প্রায় অ’ভিন্ন। জমে থাকা বেতন না পাওয়ার আশ’ঙ্কায় বিথি কু-প্রস্তাবে রাজি হলেও সোজা সাফটা ‘না’ বলে দেন টিনা। যদিও তাকে ডলারের বান্ডিল দেখিয়ে যৌ’নকর্মে প্রলুব্ধ করার অ’পচেষ্টা করা হচ্ছিল। তাতেও সম্মতি না দেওয়ায় রীতিমতো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন অ’ত্যাচারী মালিক। চড় মে’রে বসেন টিনার গালে। ঘাড় চেপে ধরে প্রা’ণনাশের হু’মকিও দেন। ‘সম্মতি’ দেওয়ায় বিথি শারীরিক নি’র্যা’তন থেকে রেহাই পেলেও টিনার অসম্মতি রীতিমতো কাল হতে যাচ্ছিল। অবস্থা ছিল বেগতিক। পরিস্থিতি খানিক অনুকূলে আসার পর ক্লাব থেকে পালানোর পথ খুঁজেন দু’জনই। অবশ্য সেখানে আগে থেকে ডান্সার হিসেবে কাজ করা বিদেশি দুই তরুণী তাদের বেশ সাহায্য করেছিলেন।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে কোনো এক ভোরে ক্লাব কর্তৃপক্ষের ভাড়া করা ফ্ল্যাট থেকে পালাতে সক্ষম হন তারা। মুক্ত টিনা ও বিথি দুই ভিনদেশি সহকর্মীর (যারা সহায়তা করেছেন) পরাম’র্শে অ’ভিযোগ নিয়ে সোজা চলে যান সিঙ্গাপুরের মিনিস্ট্রি অব ম্যানপাওয়ার (এমওএম)-এ । সেদিন থেকেই তাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার যু’দ্ধ শুরু। বিদেশি শ্রমিকদের অভাব-অ’ভিযোগ নিরসনে সিঙ্গাপুর সরকারের ওই দফতর সক্রিয়ভাবে কাজ করে। অবশ্য শ্রমিকদের দিয়ে ভু’য়া মা’মলা করিয়ে ফায়দা লুটার জন্য সেখানেও মধ্যসত্বভোগী কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান গজিয়ে ওঠার অ’ভিযোগ রয়েছে। কিন্তু বিথি ও টিনার কেস ছিল সাচ্চা, অকাট্য প্রমাণ ছিল তাদের হাতে। যা গত বুধবার (২৫ আগস্ট) ঘোষিত দেশটির সুপ্রিম কোর্টের ফাইনাল রায়েও উল্লেখ রয়েছে।

দ্য স্ট্রেইট টাইমসের প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশি দুই টিনেজের মা’মলায় যৌথ মালিকানাধীন ক্লাব কলিউড ডান্স লাউঞ্জে অনেককে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা এবং ভিকটিম’দের ন্যায় বিচারপ্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির দায়ে দুই মালিককে গত বছর (২০২০ সালে) দ’ণ্ডাদেশ দেন সিঙ্গাপুরের (নিম্ন) আ’দালত। মালিকদ্বয় হলেন ষাটোর্ধ রাজেন্দ্র নাগারিথিনাম এবং ৪৬ বছর বয়সী আরুমাইকান্নু শশী কুমা’র। রাজেন্দ্র ৪টি অ’ভিযোগে দ’ণ্ডিত হন, আর শশীর বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগ ছিল ৩টি। জে’ল, জ’রিমানা- উভ’য় দ’ণ্ড হয় তাদের। কিন্তু নাছোড়বান্দা রাজেন্দ্র ও শশী উভ’য়ে তাদের বি’রুদ্ধে উত্থাপিত অ’ভিযোগ যা নিম্ন আ’দালতে প্রমাণ হয়েছে, সেটিসহ দ’ণ্ডাদেশ চ্যালেঞ্জ করেন উচ্চ আ’দালতে। সিঙ্গাপুর সুপ্রিম কোর্ট তাদের আপিল আমলে নিয়ে দীর্ঘ শুনানি শেষে বুধবার চূড়ান্ত রায় দেন।

রায়ের কপি পর্যালোচনা করে স্ট্রেইট টাইমস এর ল’ রিপোর্টার সেলিনা লুম লিখেন- উচ্চ আ’দালত প্রধান আ’সামি রাজেন্দ্র নাগারিথিনামের রায় রিভিউর আপিল আংশিক (পার্টলি) আমলে নেন এবং তাকে চার অ’ভিযোগের একটি থেকে পুরোপুরি খালাস দেন। বাকী’ তিন অ’ভিযোগের দু’টিতে নিম্ন আ’দালত প্রদেয় দ’ণ্ড খানিকটা কমিয়ে আনেন।

রায় পর্যালোচনায় বলা হয়, আগে চার অ’ভিযোগে তার মোট ৩০ মাস জে’ল এবং ৩০০০ সিঙ্গাপুর-ডলার জ’রিমানা দেওয়ার কথা ছিল। সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের পর রাজেন্দ্রকে ১৯ মাস জে’ল খাটতে হবে আর কোনো ধরনের ওজর-আ’পত্তি ছাড়া আড়াই হাজার ডলার জ’রিমানা গুনতে হবে। একই আ’দালত অ’পর আ’সামি আরুমাইকান্নু শশী কুমা’রের আপিল পুরোপুরি খারিজ করে দেন। নিম্ন আ’দালত প্রদত্ত দ’ণ্ডাদেশ বহাল রাখেন উচ্চ আ’দালত। শশীকে ১৬ মাস কারাগারে এবং এক হাজার ডলার জ’রিমানা পরিশোধ করতে হবে।

সংবাদমাধ্যমে রাজেন্দ্রকে সিঙ্গাপুরের নাগরিক এবং শশীকে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতিপ্রাপ্ত (পিআর) বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে প্রকাশ, বিথিকে জো’র করে পতিতাবৃত্তিতে নামিয়ে যে অর্থ পাওয়া যেতো তার বড় অংশই পকেটস্থ করতেন রাজেন্দ্র ও শশী। তাছাড়া টিনাকে বলপূর্বক যৌ’ন-শোষণের জন্য কিনতে চেয়েছিলেন শশী। তবে কমনলি দু’জনের জে’ল-জ’রিমানা হয়েছে তাদের অধীন কলিউডে কর্ম’রত (বাংলাদেশি দালাল) রকিকে সিঙ্গাপুর থেকে পালানোর সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। যদিও (তারা উভ’য়ে) যৌ’নতার জন্য বাংলাদেশি ওই দুই তরুণীকে ‘ক্রয় করা’র দায় অস্বীকারের চেষ্টা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত করে গেছেন। বিশেষ করে, আ’দালত রাজেন্দ্র’র উত্থাপিত যু’ক্তিগুলো বিবেচনায় নিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের জাস্টিস টায় এই মা’মলার রায়ে লিখেন, পতিতাবৃত্তিতে নামিয়ে বাড়তি আয়ের আশায় টিনাকে কিনতে সব রকম চেষ্টাই করেছেন রাজেন্দ্র।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

এ বিভাগের অন্যান্য খবর

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: